সঙ্গীত শিল্পী আঁখি আলমগীর। প্রথম জীবনে একজন অভিনয়শিল্পী। পরবর্তীতে গানকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন। গানের ক্যারিয়ার বলতে সেটাও দুই দশকের বেশি। কণ্ঠের বৈচিত্র্য খুব বেশি না থাকলেও আধুনিক গানের শিল্পী হিসেবে তরুণ শ্রোতাদের কাছে চাহিদার গ্রাফটা বেশ উঁচুতেই। আর তাতে করে কোয়ান্টিটি বাড়াতে গিয়ে কোয়ালিটির সঙ্গে প্রতিনিয়ত কমপ্রোমাইজ করে যাচ্ছেন। চলচ্চিত্রের গানে ব্যস্ততা কম থাকলেও স্টেজে আঁখি সপ্রতিভ এক নাম। তবে হালে এই গ্রাফটার অবস্থা টালমাটাল। তারই একটি নমুনা দেখা গেলো গত শনিবার মুন্সীগঞ্জ-বিক্রমপুর সমিতির প্রতিষ্ঠার প্লাটিনাম উপলক্ষ্যে পিকনিক অনুষ্ঠানে। এতে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে সাংস্কৃতিক আয়োজনের অংশ হিসেবে গান রাখা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সঞ্চালক বার বার আঁখির নাম ঘোষণার পর তরুণদের মধ্যে কিছুটা উন্মাদনা দেখা দিলেও তার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়নি। সন্ধ্যায় আসার কথা থাকলেও তিনি সেখানে উপস্থিত হন ৯টার কয়েক মিনিট আগে। তৎক্ষণে সিরজাদিখানের ‘ঢালি আম্বার নিবাস’-এ নিরবতা ভর করতে শুরু করেছে। অবস্থা বেগতিক দেখে আয়োজক কর্তৃপক্ষের বিশেষ অনুরোধে ভাওয়াইয়া গানের শিল্পী মাহমুদা আক্তার মিতু বেশ খানিকটা সময়জুড়ে দর্শক ধরে রাখার চেষ্টা করে কিছুটা সফলও হন। কিন্তু রাত গভীর হতে থাকায় পিকনিকে অংশগ্রহণকারী সদস্যরা বাড়ির পথ ধরেন। ঠিক শেষমুহূর্তে আঁখি ও তার দল প্রবেশ করেন। পাশ দিয়েই হেঁটে চলে গেলেন সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারি, একটিবার ফিরেও তাকালেন না আঁখির দিকে!
এ অবস্থায় শতাধিক দর্শক অবশিষ্ঠ মাঠে। পেমেন্ট ক্লিয়ার হওয়ার পর চেষ্টা করলেন স্টেজ মাতাতে কিন্তু ভাঙা হাটে কি আর মজমা জমে? সেটা আঁখিও স্বীকার করে দেরিতে আসার কারণের ব্যাখ্যায় অজুহাত তুলে দায়ী করলেন ট্রাফিক জ্যামের। বললেন- “আসুন যে ক’জন আমরা আছি একটু একসাথে আনন্দ করি”। চেষ্টাও করলেন কিন্তু ঢাকায় একটা কনসার্ট শেষ করতেই কণ্ঠের কমনীয়তা হারিয়ে কেবল ‘বায়না’ রক্ষার গানে শ্রোতাদের মাত করার বৃথা চেষ্টা করে গেলেন। তাতে নামসর্বস্ব আঁখিকে পাওয়া গেলেও কণ্ঠের যাদু অনুপস্থিত। এক পর্যায়ে বিরক্ত দর্শক স্টেজে আঁখি আর তার দলকে রেখে বাড়ির পথ ধরলেন ততৎক্ষণে ঘড়ির কাটায় সাড়ে ন’টা।
শ্রোতাদের অভিযোগ- একজন শিল্পীকে আয়োজকদের সীমাবদ্ধতাও বুঝতে হবে। কিন্তু আঁখি টাকার বিষয়টিতে যতটুকু পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন সময় আর গায়কীতে সেটা দেননি। তার উপস্থিতিতে মাঠ শ্রোতাশূন্য হয়ে পড়েছিলো। এই দৃশ্যটি যেমন আঁখির জন্য সুখকর ছিলো না তেমনি আমাদের জন্যও না।
সমিতির গুরুত্বপূর্ণ এক সদস্য অভিযোগ করে বলেন, আমাদের অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ লোকজন এসেছিলেন। তারা অপেক্ষাও করছিলেন কিন্তু সেটা সহ্যসীমার বাইরে চলে যাওয়ায় সকলেই ফিরে যান। তারপরও সব সয়েছি। কিন্তু কমনীয়হীন কণ্ঠে কি আর শ্রোতাদের মুগ্ধ করা যায়, শতাধিক শ্রোতাদের সেই স্বাদটুকু তিনি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এটা অভিযোগ নয় এটা আমাদের কষ্ট অতিথিদের আনন্দ দিতে পারিনি।