মোঃ শান্ত খান ঢাকা জেলা প্রতিনিধি
সাভারে মহাসড়কের উভয় পাশের ফুটপাতে অন্তত ১২শ’ ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত সিন্ডিকেট তৈরি করে এসব দোকান থেকে ছয় মাস অন্তর ৫০ হাজার টাকা করে আদায় করেছেন সাভার উপজেলা হকার্স লীগের কথিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির মোল্লা।
গত দুই সপ্তাহ যাবত ফুটপাতের একাধিক ব্যবসায়ী সাভার মডেল থানায় অন্তত ১০টি লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এর পরপরই নিজেকে নির্দোষ প্রমাণিত করতে বিভিন্ন কৌশল খাটাতে থাকে আব্দুল কাদির মোল্লা।
তবে শেষ রক্ষা হয়নি এই প্রতারকের। অবশেষে রোববার রাতে সাভার মডেল থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন আব্দুল কাদির মোল্লা। তার গ্রেফতারের বিষয়টি দৈনিক তৃতীয় মাত্রাকে নিশ্চিত করেছেন সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন।
এর আগে দৈনিক তৃতীয় মাত্রা সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মহাসড়ক বিক্রির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় রোববার বিকেলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ও শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের নির্দেশে একটি জরুরী সভায় সাভার সম্মিলিত হকার্স সমবায় সমিতি লিঃ এর কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতির পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এতে ১২ সদস্যের মধ্যে ১১ জনের স্বাক্ষরিত পদচ্যুত করার পত্র সাংবাদিকদের হাতে আসে। এর কয়েক ঘন্টা পর তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
আব্দুল কাদির মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, দৈনিক ভাড়া, প্রশাসন ম্যানেজ এবং বৈদ্যুতিক বিলসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ প্রতিদিন ১৮০ টাকা আদায় করা হয়। এ ছাড়া ছয় মাস অন্তর ৫০ হাজার টাকায় প্রতিটি দোকানের চুক্তিপত্র নবায়ন করতে হয়। অন্যথায় দোকান তুলে দিয়ে নতুন করে স্ট্যাম্প করে অন্যদের কাছে ভাড়া দেন কাদির মোল্লা।
ফুটপাতের দোকান থেকে দৈনিক চাঁদা তুলতে কাদির মোল্লা একটি বাহিনী তৈরি করেছিলেন। কোনো দোকানদার যথাসময়ে চাঁদা দিতে না পারলে তার নির্দেশে ব্যবসায়ীদের ওপর অত্যাচার ও নির্যাতন চালাতো বাহিনীর সদস্য জহিরুল ইসলাম, জুয়েল, কাজল, আনোয়ার, রমজান, পাভেল ওরফে তোতলা পাভেল, সুশান্ত, কালা শরীফ, জিয়া, ধলা শরীফ, জুয়েল, ইসরাফিল ও মানিক।
সাভার বাসস্ট্যান্ডের প্রায় ১২ শতাধিক দোকানির কাছ থেকে দৈনিক লাইনম্যানের বেতন ৫০ টাকা, পল্লীবিদ্যুৎ খরচ বাবদ ৩০ টাকা, হকার নেতা ও প্রশাসন খরচ বাবদ ১০০ টাকা করে সর্বমোট প্রতিদিন ১৮০ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো।
এ হিসাবে ১২শ’ দোকান থেকে প্রতিদিন দুুই লাখ ১৬ হাজার টাকা তোলা হয়। আর বছরে তোলা হতো সাত কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এ ছাড়া প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন (ছয় মাসে) ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হতো। এই হিসাবে এককালীন চাঁদার পরিমাণ হয় ১২ কোটি টাকা। অর্থাৎ দৈনিক ও এককালীন মিলে বছরে মোট চাঁদার পরিমাণ হয় ১৯ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী মো. বুলবুল এর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে মাছবাজারের সামনে সাড়ে তিনহাত ফুটপাতের জায়গায় একটি ভ্রাম্যমাণ দোকানের পজেশন তিন’শ টাকার স্ট্যাম্পে লিখে বুঝিয়ে দিয়ে গত বছরের মার্চ মাসে ৫০ হাজার টাকা আদায় করেন কাদির মোল্লা। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী দোকান নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ১৮০ টাকা করে চাঁদা দিয়ে আসছিলেন তিনি।
ছয় মাস পর সেপ্টেম্বর মাসে আবারও চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে এককালীন ৫০ হাজার টাকা দাবি করে কাদির মোল্লা। একপর্যায়ে সে দোকান বন্ধ করে দেয়। পরে তার ছেলে জহিরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা দিলে আবার দোকান খুলতে দেয়। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আবারও দোকানের চুক্তির মেয়াদ ফুরিয়ে গেলে এককালীন ২ লাখ টাকার জন্য চাপ দেয়।
কিন্তু ব্যবসা মন্দার কারণে টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পরের বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি কাদির মোল্লার নেতৃত্বে জহিরুল ইসলাম, জুয়েল ও কাজলসহ অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে দোকানের মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে তাকে আটকে রেখে ২০ হাজার টাকা আদায় করে অভিযুক্তরা।
শাহিন শেখ নামের আরেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ফুটপাতে ব্যবসা শুরু করলেই কাদির মোল্লার লোকজন দোকান তুলে দিয়ে অফিসে দেখা করতে বলেন। অফিসে গেলে একটি দৈনিক চাঁদার তালিকা ধরিয়ে দেন। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে মারধর ও হত্যার হুমকি দেন। ২০২১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫০ হাজার টাকা দেন। আর প্রতিদিনের খরচ বাবদ দিতে হয় ১৮০ টাকা। দৈনিক চাঁদা দিতে দেরি হওয়ায় কাদিরের ছেলে জহিরুল, রমজান, জুয়েল, কাজল, আনোয়ারসহ সাত-আটজন তাকে কিলঘুষি ও থাপ্পড় মেরে গুরুতর আহত করে।
অভিযোগে বলা হয়, ৪২ জন কাঁচামাল ব্যবসায়ী, ৬৫ জন কাপড় ও খেলনা ব্যবসায়ী, ৫০ জন ফল ব্যবসায়ী, ৩৫ জন মাছ ব্যবসায়ী ও ৪৫ জন টি-শার্ট ও টং চা দোকান ব্যবসায়ীসহ অন্তত ১২শ’ ব্যবসায়ী কাদির মোল্লার কাছে জিম্মি ছিল। ফলে ব্যাবসায়ী মো. শাহিন শেখসহ বুলবুল, দ্বীন ইসলাম, মিলন, নজরুল ইসলামের মত অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগী সাভার মডেল থানা এবং র্যাব-৪ বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
পুলিশ সহ একাধিক সূত্র জানায়,আব্দুল কাদির মোল্লা এক সময় ফুটপাতে যৌন উত্তেজক বিক্রির হকার ছিলেন, তিনি ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, হত্যাচেষ্টাসহ ডজন খানেক মামলার আসামি। মহাসড়ক বিক্রিই শুধু নয় সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের আন্ডারগ্রাউন্ডে সাভার উপজেলা হকার্স লীগের কার্যালয় বানিয়ে বঙ্গবন্ধু, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার ছবি ব্যবহার করে মিনি ক্যাসিনোর জমজমাট জুয়ার আসর বসিয়ে মদ্যপান করে বিভিন্ন নারীদের নিত্য উপভোগ করতেন।
বিষয়টি দৈনিক তৃতীয় মাত্রাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি ও ভুক্তভোগীদের হত্যার হুমকি দিয়ে নিজের অপকর্ম ঢাকতে সাভার পৌরসভার কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম মানিক মোল্লার ফেসবুক পেজের এডমিন পরিচয়দাতা আব্দুল খালেক ওরফে চিকু খালেক ও তার আরেক সহযোগী কবিরের সহায়তায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের নামে সাধারণ হকারদের থেকে আদায়কৃত চাঁদার অংশের মধ্যে বাংল