রাজশাহী শহরকে এক সময় বলা হতো পুকুরের শহর। কিন্তু সঠিক নজরদারি আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে শহর থেকে একের পর এক ভরাট হয়ে গেছে পুকুর । হাতি ডুবা পুকুর, রানী পুকুরের মতো বিশাল আয়তনের পুকুকের উপর দাঁড়িয়ে আছে উঁচু উঁচু ভবন। এছাড়াও শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লায় সেই পুরোনো আমলের পুকুরগুলিও বিলিন হয়ে গেছে। যা এক শ্রেণীর অসাধু লোকজনের হস্তক্ষেপেই এই অবৈধ কর্মকান্ডগুলি ঘটেছে।
বর্তমানে অবশিষ্ট পুকুর গুলিতে বড় বড় মানুষের বড় বড় চোখ অড়িপেতে তাকাচ্ছে। কিভাবে কোন কৌশলে রাতের আধারে ডামট্রাম দিয়ে ভরাট করা যায় পুকুর গুলি। স্বল্প মূল্যে কিনে ভরাট করলেই কোটি কোটি ঢুকবে নিজ এ্যাকাউন্ডে। এমন গুঞ্জনের দীর্ঘ দিনের। তবে প্রভাবশালীরা যেদিকে তাকাচ্ছে সেটি আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। এমন বস্তবতায় মহানগরীর গোরহাঙ্গা নিউমার্কেট পুলিশ ফাঁড়ির পেছেনে ২শত বছরের পুরোনো বিশাল আয়তনের একটি পুকুর ধিরে, ধিরে, রাতের আধারে ভরাট কার্যক্রম চালাচ্ছে জনৈক অসাধু ব্যক্তি। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। শুরু হয়েছে গুঞ্জন। স্থানীয়রা বলছেন, তারা পুকুর ভরাট বন্ধে বাঁধা দান সহ কঠোর কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় দাঁড়াবেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীতে গত চার দশকে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় চার হাজার পুকুর ভরাট করা হয়েছে।
রাজশাহীতে বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত চলে পুকুর ভরাটের মহোৎসব। বর্তমানে রাজশাহী নগরীতে পুকুর রয়েছে মাত্র ২১৩টি। কিন্তু এখনও মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে রাতারাতি পুকুর ভরাট করে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) ও রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। আর তাই কোন ধরনের নিয়ম-কানুনের তোয়াক্কা না করেই এখনো নগরীতে চলছে রাতারাতি পুকুর ভরাটের মহোৎসব। এভাবে চলতে থাকলে একদিকে যেমন নগরীর পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে, তেমনি অতিরিক্ত তাপ বৃদ্ধির কারণে গোটা মহানগরী বসবাসের একদম অনুপযোগী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন সচেতন নাগরিকরা। রাজশাহী পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত হলেও একের পর এক পুকুর ভরাট করে সেখানে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা, ভবন ও রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে তীব্র তাপদাহ ও খরার কারণে মহানগরীতে গৃহস্থালি কাজের জন্য পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে।
পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে নগরীর পরিবেশের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এদিকে, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বলছেন ভিন্ন কথা। বর্তমানে আরডিএতে দক্ষ লোকের অভাব ও লোকবল সমস্যার কারণে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলেও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে পারছেন না তারা। তাই এক শ্রেণির অসাধু চক্র এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের পুকুর ভরাট কার্যক্রম। শুরু তাই নয়, আইনগত কিছু জটিলতাকেও পুকুর ভরাট রোধে আরডিএ’র ব্যর্থতার অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।