গণমাধ্যমে প্রকাশিত স্ট্যাম্পে লিখে মহাসড়ক বিক্রির খবর বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত চলমান রয়েছে। এর মধ্যেই নিজের অপকর্ম ঢাকতে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনের নামে আবারও সাধারণ হকারদের থেকে আদায়কৃত চাদার টাকার অংশের মধ্যে বাংলাদেশ হকার্স লীগ সাভার উপজেলা শাখার ফান্ড থেকে ২৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ এর অভিযোগ উঠেছে সাভার উপজেলা হকার্স লীগের কথিত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির মোল্লার বিরুদ্ধে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার নেতা। তারা বলেন, আব্দুল কাদির মোল্লা সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার অনেক হকারকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিন পাতার স্ট্যাম্পে লিখে দোকানের মালিকানা দান পত্র করে হস্তান্তর করে দিয়েছেন এটা সত্য। তবে সে তার বুদ্ধি খাটিয়ে স্ট্যাম্পে দান পত্র লিখলেও টাকার কথা উল্লেখ করেন না। আবার অনেককে তিনি উঠিয়েও দিয়েছেন। তারাই মূলত ভুক্তভোগী। এমন প্রায় ২০ জনের মত ভুক্তভোগী রয়েছে। কাদির মোল্লা একাই সাভার স্ট্যান্ডের কর্তা।
বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা সংবাদ প্রকাশ করেছে এতে আব্দুল কাদির মোল্লা আমাদের সবাইকে ডেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করার প্রস্তাব দিয়েছিল। এ নিয়ে আমরা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করে দেখেছি তারাও তার ব্যক্তিগত অপরাধের দায় নিতে রাজি নয়।
আমরা তার ব্যক্তিগত এই অপরাধের দায় নিতে পারি না। তারপরও গত বুধবার সন্ধ্যায় জোরপূর্বক আমাদের হকারদের কাছে আদায়কৃত চাঁদা থেকে ২৭ হাজার টাকা সংবাদ সম্মেলনের নামে খরচ দেখিয়েছেন। তবে সর্বোচ্চ ১২ জনকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সম্মেলন জেনে অনেক সাংবাদিক তার এই টাকা গ্রহণ করেননি। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাখ্যাও দেননি তিনি।
তারা আরো বলেন, আমরা তাকে বারবার এগুলো করতে নিষেধ করেছি তবুও তিনি শুনেননি। আমরা যারা হকারদের নেতা তাদের অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়। আর এসব তো আমরা হকারদের থেকে চাঁদা আদায় করেই করি। দৈনিক হারে নেওয়া লাইনম্যানের বেতনের খরচ বাবদ ৫০ টাকা, পল্লীবিদ্যুতের লাইট ৩০ টাকা, হকার নেতা, সাংবাদিক ও প্রশাসন বাবদ ১০০ টাকা সহ সর্বমোট ১৮০ টাকা এবং ছয় মাস পর পর রিনিউ করার কথাও স্বীকার করেন হকার নেতারা।
আব্দুল কাদির মোল্লার অপকর্মের সংবাদের প্রতিবাদ হিসেবে গত বুধবার সন্ধ্যায় বাজার বাসস্ট্যান্ডে মফস্বলে কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকের হাতে পায়ে ধরে ডেকে নিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের ব্যাখ্যা না দিয়ে আগত সাংবাদিকদের ৫’শ টাকার খাম ধরিয়ে দেয় আব্দুল খালেক ওরফে চিকু খালেক নামের এক ব্যক্তি। তিনি নিজেকে সাংবাদিক দাবি করে টাকার বিনিময়ে আব্দুল কাদির মোল্লার সংবাদ সম্মেলনের দায়িত্ব নেন বলে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক অভিযোগ করেছেন। চিকু খালেকের পিএস পরিচয়দাতা কবির নামে এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলনের প্রেস রিলিজ তৈরি করে দেন বলেও জানান তারা। কিন্তু তাদের পারিশ্রমিক হিসেবে যেই টাকা দেওয়ার কথা ছিল তাও না দিয়ে ওই দুই ব্যক্তির কাছেও প্রতারণা করেছেন আব্দুল কাদির মোল্লা। এ নিয়ে আব্দুল কাদির মোল্লার উপর ক্ষেপেছেন চিকু খালেক সহ তার সহযোগী।
আব্দুল কাদির মোল্লা নিজের মত করে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শুনিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের অপমান করার অভিযোগও উঠেছে এই বহুমুখী প্রতারকের বিরুদ্ধে। বিষয়টি এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা।
জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা জানান, আমরা গণমাধ্যমে কাজ করি। অভিযুক্ত ব্যক্তিদেরও আমাদের মন্তব্য নিতে হয়। তবে তিনি মোল্লা নামের এক কাউন্সিলরের কথিত এডমিন প্যানেলের দুই সদস্যের দিকে আঙ্গুল তোলেন। তারাই মূলত এই সংবাদ সম্মেলনের পরামর্শ দেন আব্দুল কাদির মোল্লাকে। এ নিয়ে সাংবাদিকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিক সহ ভুক্তভোগীদের হত্যা ও মামলার হুমকি দিয়েছেন আব্দুল কাদির মোল্লা। এ নিয়ে সাভার মডেল থানায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন ভুক্তভোগী ও সাংবাদিকরা।
নিজের অপকর্ম ঢাকতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের কোন নিউজ না হওয়ায়ও উপস্থিত সকল সাংবাদিকদের কটুক্তি করেছেন বহুমুখী প্রতারক আব্দুল কাদির মোল্লা। এদিকে সংবাদ সম্মেলনের নামে ২৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টির সমালোচনা করছেন সাধারণ হকারসহ হকার্স লীগের নেতারা।
স্ট্যাম্পে লিখে মহাসড়ক বিক্রি করা হকার নেতা আব্দুল কাদির মোল্লার ক্ষমতার উৎসের ব্যাপারে জানতে চাইলে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম বলেন, মহাসড়ক কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। অপরাধী যত বড় শক্তির অধিকারী হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ এবং সাংবাদিকদের হুমকির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।