কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে উৎসবমুখর পরিবেশে ৩০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দোল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত নাওডাঙ্গার জমিদার বাড়ীর প্রাঙ্গণে দোল মেলা চলে। প্রতি বছর দুর-দুরান্তর থেকে আসা হাজার হাজার দর্শনাথীর ঢলে মুখরিত হয়ে উঠে মেলা প্রাঙ্গন।
দোলযাত্রায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাব ঘটে। দোল উৎসবে শ্রী কৃষ্ণ ভগবান তার সখা সখিদের নিয়ে দোলায় চড়ে আনন্দ করে। বাংলা ১৩০৪ সনে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর তারা সব কিছু ছেড়ে চলে যান ভারতের কোচবিহার জেলায়। বর্তমানে তারা কোচবিহারে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে। তবে প্রতি বছর জমিদার বাড়ীর ঐতিহ্যবাহী দোল উৎসবটি পালন করে আসছে স্থানীয় হিন্দ্র সম্প্রদায়ের লোকজন। প্রতিবারের মতো এবারও এই দোল মেলায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩৫ থেকে ৪০টি দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি নিয়ে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর দোলের মেলায় অংশগ্রহণ করে। গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী এই দোল উৎসব পালিত হয়।
মঙ্গলবার ঘর পূজা শেষে ভক্তরা প্রতিটি মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে দোল মূর্তি ও ভগবান শ্রী কৃষ্ণের চরণে পূজা অর্চনা ও অঞ্জলী দিয়ে শয়ন ভগবানের কাছে ভক্তরা ধাবিত হয়েছে। বুধবার আবারও সকালে পূজা অর্চনা করে দুপুর দেড় টার দিকে দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি নিয়ে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর দোলের মেলায় অংশ নেয়। বুধবার সকাল থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত বর্ণাঢ্য আয়োজনে চলে এই মেলা। শুধুমাত্র উপজেলার নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীতে নয়, এ উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইটারী ও বসুনিয়াপাড়ায় একই ভাবে দোল উৎসব পালিত হয়েছে।
পূঁজারী বীরেন্দ্র নাথ বর্ম্মন ও সৌরেন্দ্র নাথ গোস্মামী জানান, উপজেলার বেশির ভাগ হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দোল উৎসব হিসেবে মঙ্গলবার দিনব্যাপী উপবাস থেকে ভক্তরা শ্রী কৃষ্ণের চরনে ধাবিত হবে। বুধবার দুপুর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে দোল সওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে দোল মূর্তি সিংহাসনে নিয়ে এই দোলের মেলায় আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে মেলার সমাপ্তি ঘটে।
নাওডাঙ্গা জমিদারবাড়ীর মেলা কমিটির সভাপতি সুশীল কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক রতন চন্দ্র রায় জানান,দোল উৎসব আমাদের ঐতিহ্যবাহী উৎসব। প্রতি বছরেই দোল উৎসবে নাওডাঙ্গা জমিদার বাহাদুর শ্রীযুক্ত বাবু প্রমদা রঞ্জন বক্সীর বাড়ির উঠানে দোল মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রশাসনসহ ফুলবাড়ী থানার পুলিশ মেলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করেছি।
ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ফজলুর রহমান জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন শান্তিপূর্ণ ভাবে দোল উৎসবটি পালন করেছে।
তিনি আরও জানান, পুলিশ সুপার স্যারের নিদের্শে এই উপজেলায় নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর দোলের মেলাসহ পৃথক তিনটি দোল মেলায় থানা পুলিশের অতিরিক্ত টহলের পাশাপাশি ও গ্রাম পুলিশও কাজ করেছে। অত্যন্ত সুন্দরভাবে দোল উৎসব পালনের লক্ষ্যে তিনি প্রতিটি মেলায় নিজেই উপস্থিত থেকে সবার সহযোগিতায় মেলাটি সুসম্পূর্ণ করেছেন।