নওগাঁ জেলা প্রতিনিধিঃ
নওগাঁয় গৃহবধূ’র ঘড়ে ঢুকে আটক হলেন এক ধান-চাতাল ব্যবসায়ী। আটকের পরই ঘটনাটি গোপনে মিমাংসা (ধামাচাপা) দিতে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে- মিমাংসায় বার্থ হোন গ্রামের প্রধান মাতব্বর ও গ্রাম সমিতির সভাপতি। অপরদিকে গৃহবধূ ন্যায় বিচার দাবি করলে সে সময় ন্যায় বিচার করার কথা বলে (গৃহবধূ’র ঘড়ে তালাবদ্ধ) আটক থাকা ধান-চাতাল ব্যবসায়ীকে গৃহবধূ’র ঘড় থেকে বের করে আদর্শগ্রাম সমিতির ঘড়ে নিয়ে ফের আটক করে রাখার পর গোপন সমঝোতা (মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে) দীর্ঘ ৭ ঘন্টাধরে আটক করে রাখার পর রবিবার ভোর ৪ টারদিকে আটককৃত ঐ ধান-চাতাল ব্যবসায়ীকে ছেরে দেন মাতব্বররা। এলাকার লোকজনের মাঝে আলোড়ন চৃষ্টিকারী এঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের বাগাচাড়া (আদর্শপাড়া) গ্রামে।
স্থানিয় সুত্রে জানাযায়, বাগাচারা (আদর্শপাড়া) গ্রামে মায়ের বাড়িতে বসবাসকারী ভুক্তভোগী গৃহবধূ পার্শ্ববর্তী হাটচকগৌরী এলাকার একটি ইট ভাটায় রান্না (শ্রমিকের) দিনে কাজ করেন এবং সন্ধায় বাড়ি ফিরে মায়ের কাছে থাকেন।
গত শনিবার দিনগত রাত ৯ টারদিকে ধান-চাতাল ব্যবসায়ী আসলাম হোসেন ঐ গৃহবধূ’র ঘড়ে ঢুকে তাকে ফের কু-প্রস্তাব দিলে, এসময় গৃহবধূ বাহির থেকে ঘড়ের দরজায় তালাদিয়ে ঘটনাটি গ্রামের মাতব্বর সহ লোকজনকে জানান।
এব্যাপারে (আদর্শপাড়া) গ্রাম সমিতির সভাপতি ও প্রধান মাতব্বর জালাল বলেন, শনিবার রাত ৯ টারদিকে ধান-চাতাল ব্যবসায়ী গৃহবধূর ঘড়ে ঢুকলে তাকে ঘড়ের ভেতর রেখে বাহির থেকে দরজায় তালাদিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূ ঘটনাটি আমাদেরকে জানান। এসময় ঘটনাটি গোপনে মিমাংসা করার জন্য প্রথমে (গৃহবধূ’র) ঘড়ে ধান-চাতাল ব্যবসায়ী আটক থাকাকালে আমি ৬০ হাজার টাকা নেয়,কিন্তু গৃহবধূ টাকানিয়ে আপোষ করতে রাজি না হয়ে ন্যায় বিচার দাবি করায় আমি মিমাংসা করতে না পেরে যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলাম তাকে সেই টাকা ফেরত দিয়েছি।
তবে সমিতির ঘড়ে এনে আটক রেখে গোপন মিমাংসার সময় আমি ছিলাম না।
পরে জানতে পারি ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন এবং ৩০ হাজার টাকা যারা গোপন মিমাংসায় মাতব্বর ছিলেন তারাই সেই টাকা তাদের কাছে রেখে দিয়েছেন জানিয়ে আদর্শগ্রাম সমিতির সভাপতি জালাল আরো জানান, রাত ৩ টারদিকে ফোনকরে আমাকে ঘটনাস্থলে মিমাংসার জন্য ডাকা হলেও আমি আর যাইনি, তবে মান-সন্মানের দিক বিবেচনা করে হর্ষি গ্রামের বাবু ও আদর্শ গ্রামের ছেকেন সহ কয়েকজন মাতব্বর ঘটনাটি গোপনে রাতেই মিমাংসা করেছেন।
অপরদিকে সোমবার বিকেলে ভুক্তভোগী গৃহবধূ ন্যায় বিচার দাবি করে জানান, ধান চাতাল ব্যবসায়ী আসলাম আমাকে আরো ৫-৬ মাস থেকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন।
কু-প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনাটি আমি সে সময় গ্রামের মাতব্বর, আমার স্বামী সহ লোকজনকে জানিয়েছিলাম। অবশেষে শনিবার রাত ৯ টারদিকে ব্যবসায়ী আসলাম আমার ঘড়ে ঢোকেন আমার ইজ্জত নষ্ট করার জন্য। এসময় আমি তাকে ঘড়ের ভেতর রেখে বাহির থেকে দরজায় তালাদিয়ে ঘটনাটি সাথে সাথে মাতব্বর সহ লোকজনকে জানায় এবং যেহতু সে দীর্ঘদিন ধরে আমাকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলেন এজন্য আমি ন্যায় বিচার দাবি করি। কিন্তু আমি ন্যায় বিচার পাইনি দাবি করে ভুক্তভোগী গৃহবধূ আরো বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশও এসেছিলো, আমি পুলিশের কাছেও ন্যায় বিচার দাবি করেছি। তারপর ও দীর্ঘ ৭ ঘন্টা আটক করে রাখার পর গোপনে কি করা হলো তা আমি জানতেও পারলাম না মাতব্বররা অভিযুক্ত আটক ধান-চাতাল ব্যবসায়ীকে ভোর ৪ টারদিকে ছেরে দেন।
আপনাকে নাকি মাতব্বররা ২০ হাজার টাকা দিয়ে আপোষ করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভুগি গৃহবধূ বলেন, আমি কোন টাকা পাইনি বা নেয়নি, যেহতু আসলাম আমাকে ৫-৬ মাস ধরে কু-প্রস্তাব দিয়েছেন এবং সর্বশেষ আমাকে ধর্ষণের জন্য আমার ঘড়ে ঢুকেছেন এজন্য আমি ন্যায় বিচার চাইছি, এখনো আমি ন্যায় বিচার চাচ্ছি।
ঘটনার ব্যাপারে জানতে স্থানিয় ইউপি সদস্য সৈয়দ আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করাহলে গৃহবধূর ঘড়ে ধান-চাতাল ব্যবসায়ী আটকের ঘটনা রাতে শুনেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি যেহতু মেয়ে ঘটিত, এজন্য আমি রাতে না বসে পরেদিন সকালে বসার কথা বলেছিলাম। এরপর আমাদের না জানিয়ে রাতেই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দিয়েছেন একটি মহল, যা খুবই দুঃখজন।
এব্যাপারে স্থানিয় ইউপি চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ ভদ্র’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেয়ে ঘটিত ঘটনার বিষয়ে আমাকে রাতে জানানো হয়, যেহতু মেয়ে ঘটিত বিষয় এজন্য আমি পরের দিন সকাল ১০ টারদিকে বসার কথা বলেছিলাম। এরপর আর আমাকে কেউ ডাকেন নি বা এব্যাপারে কিছুই বলেন নি।
বক্তব্য নেওয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যবসায়ী আসলাম এর মুঠোফোনে কলদিলে রিসিভ করার পর তিনি আসলাম এর ছেলে পরিচয় দিয়ে কেন ফোন করা হয়েছে জানতে চান, এসময় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য ফোন দেওয়া হয়েছে বলামাত্র সংযোগ কেটে দেওয়ায় কোন বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
একজন ধান-চাতাল ব্যবসায়ীকে আটক করে রাখার খবর পেয়ে — পরের অংশ নীচ (১)!