সৎ পথে থাকলে দুনিয়াতে কিছু করা যায়না। এখন যদি আমার সামনে কেউ খুন হয়ে যায় আমি কারোরর বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিতে যাবোনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে যাবোনা। কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার রামদী ইউনিয়নের বড়চর গ্রামের মধু মিয়ার ছেলে কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল কলেজে পড়ুয়া এইচ.এস.সি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. কবির হোসেন (১৮) গত বৃহস্পতিবার (২৩ফেব্রুয়ারী) সকালে কুলিয়ারচর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নাছিমা বেগম, রামদী ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাদির ও আগরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদ্দুস-উন-নূর এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এ প্রতিনিধির সাথে আতংক ও ভয়মাখা কণ্ঠে এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, এমনিতে আমার মায়ের হার্ড দূর্বল। গতকাল বুধবার (২২ফেব্রুয়ারী) দুপুরে তাদের হুমকিতে আমার মা থর থর করে কাঁপছিলো। অবশেষে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটে পরে। এলাকাবাসী আমার মায়ের মাথায় পানি ঢেলেও সুস্থ করতে না পারায় ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা কারানো হয়। বর্তমানে আমার মা অসুস্থ। চিকিৎসা চলছে, এখনো কথা বলতে পারছেনা। আমার মায়ের কিছু হলে এর দ্বায়ভার কে নিবে? এমন প্রশ্ন রেখে ভয় থেকে তিনি বলেন, আমি আর এ বিষয় নিয়ে এগুতে চাইনা। আমার মায়ের জীবন আগে পরে অন্য সব। কোথাও বিচার নেই একথা বলে তিনি আরো বলেন, গত ২১ শে ফেব্রুয়ারী সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে আমি ভাগলপুর থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই প্রতিবছরের ন্যায় আমাদের মোহাম্মদ আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অমর ২১শে ফেব্রুয়ারীর অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করার জন্য স্কুলের মাঠে এসে দেখি শহীদ মিনারটি অপরিষ্কার ঝাড়ু দেওয়া হয়নি এমনকি শহীদ মিনারে রং করাও হয়নি। শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উৎযাপন করা হবে এমন কোন পরিস্থিতি ছিলোনা। তখন ঘড়িতে দেখলাম সকাল ৮টা বাজে। বিদ্যালয়ের প্রতিটি দরজায় তালা ঝুলছে। এখানে কোন ভাষা শহীদদের স্মরণে কোন অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছেনা। অমর একুশে ফেব্রুয়ারি পালনের জন্য সরকারী ভাবে স্লিপ ফান্ড থেকে ৩ হাজার টাকা বরাদ্দ আছে জেনে যখন দেখলাম শহীদ মিনারটি রং করা হয়নি। আবর্জনায় শহীদ মিনারটি অপরিষ্কার। এসব কারণে আমি একজন বাঙ্গালী শিক্ষিত ছেলে হিসেবে আমার খুব খারাপ লাগে। খারাপ লাগা থেকে আমি বিদ্যালের মাঠে দাড়িয়ে সকাল ৮টা ৩ মিনিটের সময় শহীদ মিনারের পরিস্থিতি নিয়ে একটি ভিডিও করে স্থানীয় এক সাংবাদিককে দেই। ওই সাংবাদিক ভিডিওটি তার একটি পেইজে পোস্ট করলে এটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে এলাকায় তোলপার হলে সকাল ১১টার পরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখি ওই শহীদ মিনারে কিছু ফুল দেওয়া হয়েছে। যতটুকু শুনেছি সাংবাদিক ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারের চাপের মুখে ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর নিজেদের উপর থেকে দায় এড়াতে লোক দেখানো অনুষ্ঠান করে বেশ কিছু ছবি তুলে ও ভিডিও করে সংরক্ষনে রাখেন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
পরদিন বুধবার দুপুরে বিদ্যালয় থেকে আমাকে কল করে বিদ্যালয়ে নিয়ে উপস্থিত জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক শিক্ষার্থী ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নাছিমা বেগম ও আগরপুর সরকারী প্রথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদ্দুস-উন-নূর রীতিমতো আমাকে শ্বাশিয়ে ভয় দেখিয়ে বলেন, সরকারী নির্দেশনা আছে সকাল নয়টা থেকে বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান শুরু করার জন্য। এর আগে ভিডিওটি করে তুমি যে অন্যায় কাজটি করেছ এতে তোমার ৬ মাসের জেল হবে। আমরা চেয়েছিলাম তোমার বিরুদ্ধে মামলা করতে। মামলা করলে তোমার ছয় মাসের জেল হয়ে যেতো। এর আগে এরকম ঘটনার কারণে একটি ছেলের ছয় মাসের জেল হয়েছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন ছবি তুলা কিংবা ভিডিও করা যায়না। লেখা পড়া করছো তাই ওদিকে আর এগোতে চাইনা। তুমি নিজের দোষ স্বীকার করে একটি লিখিত অঙ্গীকার নামা দিয়ে দাও তাহলেই তোমাকে ক্ষমা করা হবে। তাদের হুমকি ধামকী ও ভয় দেখানোর ফলে বিদ্যালয় মাঠে উপস্থিত থাকা আমার মা ভয়ে মাঠেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। স্থানীয়রা পানি ঢেলে মাকে সুস্থ করতে থাকে। আমার মায়ের এ অবস্থা দেখে আমি তাড়া হুরো করে কাঁপতে কাঁপতে বাধ্য হয়ে আমার দোষ স্বীকার করে একটি অঙ্গীকার নামা দিয়ে মাকে উদ্ধার করে ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাই। বর্তমানে আমার মা অসুস্থ। ঠিক মতো কথা বলতে পারছেনা। আমি আর ঝামেলায় জড়াতে চাইনা। আতংক থেকে এভাবে কথাগুলো বললেন সে।
এব্যপারে মোহাম্মদ আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রাধান শিক্ষক মো. আব্দুল কাদিরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিন সকাল ৬ টার দিকে শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছি এবং অনুষ্ঠান ও করেছি। তবে এর কোন ছবি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন আছে। তবে দেখাতে পারেনি।
অভিযুক্ত আগরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কুদ্দুস-উন-নূরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নাছিমা বেগমের কথায় ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছেন দাবী করে ওই ছাত্রকে হুমকি ধামকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে প্রথমে বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় আমাদের বলেছেন সকাল ১০ থেকে বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে। আবার পরে বলেন সুযোগমতো ২১শে ফেব্রুয়ারী উদযাপন করার জন্য। ওই ছাত্র তার নিজের ভুল বুঝতে পেরে ভুল স্বীকার করে অঙ্গীকার নামা দিয়েছেন বলেও তিনি বলেন।
অপর দিকে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার নাছিমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মহোদয় সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার জন্য। সে মতে ওই বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছে। অনুষ্ঠান করার আগেই স্থানীয় ওই ছাত্র একটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করিয়েছে। তবে ওই ছাত্রকে হুমকি ধামকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ একটি মিটিংয়ের আয়োজন করে আমাকে দাওয়াত করলে আমি