মোটরসাইকেল নয় মিশ্র ফলবাগান করে শখ পূরণ করলেন হেলাল শিকদার। সফলতার গল্প শুনতে ও বাগান পরিদর্শনে জেলাপ্রশাসক।
বলছি, চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লবাইর কান্দি গ্রামের তরুণ উদ্যোক্তা কৃষি ডিপ্লোমা পড়ুয়া কুমিল্লা হোমনা এটিআই এর সদ্য প্রাক্তন ছাত্র হাবিবুর রহমান (হেলাল শিকদার) এর কথা। গত করোনাকালীন লকডাউনের মুহূর্তে স্কুল-কলেজ বন্ধ হলে চারদিকে যখন ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন ধরনের আড্ডা ও নেশায় আক্রান্ত। ঠিক এই দিকে হেলাল শিকদার বাবার নিকট বয়না ধরেছেন মোটরসাইকেল কিনবেন। কিন্তু হঠাৎ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে মোটরসাইকেল না কিনে চৌরাশি শতক জমি লিজ নিয়ে তাতে দুই বন্ধু মিলে গড়ে তোলেন মিশ্র ফলের বাগান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিয়ে আসেন উন্নত জাতের বিভিন্ন ফলের চারা। গড়ে তুলেন মিশ্র ফলের বাগান।বাগানটি তার নিজ গ্রাম লবাইরকান্দি কবরস্থানের পশ্চিম পাশে খালের পাড়ে স্থাপিত। ৫-৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে চারপাশে সিমেন্ট পিলার ও লোহার নেটের বেড়া বেষ্টিতো মিশ্র ফলের বাগান টি একটি নান্দনিক রুপের বাহারে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে দর্শকদের মাঝে।
হেলাল শিকদার এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তার বাগানের ১৮০ টি বড়ই গাছ থেকে গত বছর তিনি বাগান থেকে আপেল কুল বিক্রি করেছেন এক লক্ষাধিক টাকা এবং সাথী ফসল বিভিন্ন শাক সবজি বিক্রি করে ৫০ হাজার টাকা। বাগানে আরো ছিল বারিআট জাতের আম, কাটিমন আম, মালটা, কমলা, পেয়ারা,পেপে কলা ও নিজস্ব চাহিদা মিটানোর জন্য শাকসবজি। তবে বাগানের প্রধান ফলগাছ হলো বড়ই, মালটা ও পেয়ারা। এবছর বাগানের উৎপাদিত বড়ই বিক্রি করছেন প্রায় একলক্ষ টাকা আরো বিক্রয় করতে পারবেন। এছাড়া আত্নীয় স্বজন ও গরীব দুখীদের বিনামূল্যে দিয়েছেন প্রায় ১৫ মন। তিনি জানান ঘুর্ণিঝড় সিত্রাং এর প্রভাবে ব্যপক ক্ষতি না হলে বিক্রি করতে পারতেন প্রায় ৪ লক্ষ্য টাকা। ক্রেতারা নিজ হাতেই তুলে নিচ্ছে পাকা টসটসে বড়ই। তার বাগান দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এবং নতুন ফল বাগান তৈরির আগ্রহ প্রকাশ করছেন নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা।
কৃষিবান্ধব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন সাহেবের মাধ্যমে হেলালের সফলতার খবর পেয়ে আজ বিকালে চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক মোঃ কামরুল হাসান সরেজমিনে পরিদর্শনে আসেন। সাথে উপস্থিত ছিলেন ড. সাফায়েত সিদ্দিকী উপপরিচালক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁদপুর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আশরাফুল হাসান, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা গণ, কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ মতলব উত্তর উপজেলার এর আহ্বায়ক মোঃ আতাউর রহমান সরকার সহ এলাকার দর্শক, ক্রেতাগণ ও কৃষক কৃষাণীবৃন্দ।
এসময় জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান সরেজমিনে পরিদর্শন করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে হেলাল শিকদার কে ধন্যবাদ দেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তার মহৎ কর্মের জন্য ধন্যবাদ দেন। তিনি আরো ব’লেন হেলাল শিকদার যদি তার বাগানকে সম্প্রসারিত করতে চান তাহলে প্রয়োজনে পতিত খাস জমি লিজ প্রদানের যাবতীয় সহযোগিতা করা হবে।
এসময় কৃষি উদ্যোক্তা মো: আতাউর রহমান সরকার কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যা সমুহ বিশেষ করে নিষ্কাশন খাল পূর্ন খনন, জরুরি সেচ ও নিষ্কাশন সেবা কার্যকর সহ সারাবছর মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প চালু রাখার দাবি জানান। দাবির জবাবে তিনি বলেন, সেচের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি, উৎপাদন বৃদ্ধির সুযোগ থাকলে সারাবছর সেচ কার্যক্রম চালু রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় কৃষকদের সহজশর্তে লোনের বিষয়ে এক উদ্যোক্তা প্রশ্ন তুললে উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সালাউদ্দিন সাহেব বলেন আমরা এ ব্যপারে কাজ করছি খুবশীঘ্রই কৃষক ও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতামত বিনিময় সভার আয়োজন করছি। আশা করি আশানুরূপ সাফল্য পাবো।