ভালোবাসার নেই কোন রঙ বা রূপ। হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয় ভালোবাসা। প্রিয়জনকে ভালোবাসতে বা তা প্রকাশ করতেও প্রয়োজন নেই কোনো নির্দিষ্ট ক্ষণ, দিন, মাস বা বছরের। এই কথাগুলো জানা আমাদের সবারই। সব কথার পরও গুরুত্ব বলে একটা কথা থেকে যায়। আর এই ভালোবাসার গুরুত্ব বা তাৎপর্যকে তুলে ধরতেই জন্ম হয় বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের।
প্রতি বছর এই দিনটাতে অনেকেই তাদের প্রিয়জনদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে একটু অন্যভাবে। ফুল, কার্ড আর নানান উপহার সামগ্রীতে ভরিয়ে দেয় তারা প্রিয় মানুষটিকে। অনেকের কাছেই তাই বহুল আকাঙ্ক্ষিত দিন এটি।
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, সেই বহুল আকাঙ্ক্ষিত দিন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইস ডে। নানা আয়োজনে বিশ্বের অন্যান্য অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হয় দিনটি। দিবসটি বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ১৯৯৫ সাল থেকে। এই দিনটিকে ঘিরে প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে থাকে নানান আয়োজন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরুণে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিশ্বের সব দেশেই বাড়ছে দিনটির কদর। বিশেষত তরুণ সমাজে দিনটির মূল্য রীতিমত চোখে পড়ার মত।
প্রথমদিকে ভালোবাসা উদযাপনের দিনটি সীমাবদ্ধ ছিল ইংল্যান্ডের রাজকীয় পরিবার এবং অভিজাত সমাজে। উনবিংশ শতাব্দীতে এই দিনটি সার্বজনীন উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শুরু হয় ভালোবাসার মানুষকে ফুল, গ্রিটিংস কার্ড, চকলেট, অলংকারসহ নানা উপহার দেয়া ও একান্তে সময় কাটানোর রীতি।
বিংশ শতাব্দীতে ভালোবাসা দিবস পৌঁছে যায় মানুষের হৃদয়ে গভীরে, ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বব্যাপী। বিভিন্ন দেশে এ নিয়ে নানা বৈচিত্র লক্ষণীয়।পুরুষরা লাল পাঞ্জাবি আর নারীরা লাল-সাদা শাড়ি বা অন্য পোশাক পরে বেরিয়ে পড়েন দিনটিকে বিশেষভাবে উদযাপনের জন্য।
বছরজুড়ে ভালোবাসা চললেও দিনটি যেন একটু বেশি করেই ভালোবাসার। এদিনে নিজের ভ্যালেন্টাইনকে প্রপোজ করা, বিভিন্ন উপহারের পাশাপাশি লাল গোলাপ দেওয়া, তাকে নিয়ে ঘুরতে বের হওয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডে মেতে ওঠেন তরুণ-তরুণীরা।এ দিনে চকলেট, পারফিউম, বই ইত্যাদি শৌখিন উপঢৌকন প্রিয়জনকে উপহার দেওয়া হয়। তবে ভালোবাসা প্রকাশে সবার আগে জায়গা নিয়ে এসেছে ফুল। কথিত আছে, ২৬৯ কিংবা ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস মৃত্যুদ- দেন সেন্ট ভ্যালেইন্টাইনকে। কারো মতে, অন্ধপ্রেমিকার চোখের দৃষ্টি ফেরাতেই জীবন দিতে হয়েছে তাকে। কেউ বলে, বিয়ে প্রথা নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে নিজে বিয়ে করে বিদ্রোহী হন তিনি। আবার কারো মতে, রোগীর সেবা আর খ্রিস্টধর্ম প্রচারের অপরাধে জীবন দিতে হয় চিকিৎসক ভ্যালেন্টাইনকে।
জীবনের পরিসমাপ্তির মধ্য দিয়ে প্রেমের প্রতীক হয়ে উঠেন সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রথম পোপ জুলিয়াস ঘোষণা করেন ভ্যালেন্টাইন ডে। তখন থেকে ক্রমেই বাড়ছে ভালোবাসা দিবস পালনের পরিধি। প্রতিনিয়তই ভালোবাসার সংজ্ঞা বের করছেন যে যেমন উপলব্ধি করেন। চিরায়ত বন্ধন আর বিশ্বাসের সম্পর্কের নামই ভালোবাসা। ভালোবাসার শুভেচ্ছা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, প্রযোজ্য বাবা-মা- ভাইবোন, বন্ধু সবার ক্ষেত্রেই।দিনটিকে ঘিরে ঢাকাসহ সারা দেশেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। রাজধানীর শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর, বইমেলা চত্বর থেকে শুরু করে এর আশপাশের এলাকায় থাকছে দিনভর নানা অনুষ্ঠান। পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবস একই দিন হওয়ায় আজ বইমেলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর সেজে উঠবে নতুন আঙ্গিকে।
দিনটিকে খুবই ঘটা করে উদ্যাপন করতে পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো ভালোবাসার মানুষদের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকবে। এই দিবসটি যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্য সমাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। যুক্তরাজ্যে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক প্রায় ১০০ কোটি পাউন্ড ব্যয় করে এই ভালোবাসা দিবসের জন্য কার্ড, ফুল, চকলেট, অন্যান্য উপহারসামগ্রী ও শুভেচ্ছা কার্ড ক্রয় করে এবং আনুমানিক প্রায় ২ দশমিক ৫ কোটি শুভেচ্ছা কার্ড আদান-প্রদান করা হয়।ফুলে ফুলে সাজবে ভালোবাসার মন। মালাবদলও হয় এমন দিনে। অনলাইন, মোবাইল, ক্ষুদেবার্তায় ভালোবাসার রূপ ফুটে উঠবে। গোলাপের পাপড়ি দিয়ে নতুবা লিপস্টিক মাখা চুমোর চিত্র প্রেমচিঠিতে মেখে পাঠাবে প্রিয়তমার কাছে। আর নানা আকর্ষণীয় উপহারসামগ্রী দিয়ে মনজয় করতে প্রেমচিঠি পাঠাবে প্রিয়তমার কাছে।
ভালোবাসা দিবসে শুধু তরুণ-তরুণীই আনন্দে মাতবে এমন নয়। পরিবার-স্বজন আর বিভিন্ন বয়সী মানুষদের মাঝেও এ দিবসের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
জানা গেছে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমানসম্রাট গথিকাস আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেন্টাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ হিসেবে পালন করা শুরু করেন। যুদ্ধে আহত মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
আজ ভারতের গুজরাটে প্রায় ১০ হাজার ছাত্র একটি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। তারা ‘বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করবে না’ বলে শপথ নেবে। পাকিস্তানের পাঞ্জাবের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ ভালোবাসা দিবসের বদলে ‘বোন দিবস’ পালন করা হবে। দুই বৈরী দেশেরই এই আয়োজন পাশ্চাত্য সংস্কৃতির বিরোধিতা করে।