মিরু হাসান বগুড়া জেলা সংবাদদাতা
বগুড়ার ধুনট উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নে বকচর এলাকায় ২০০ বছর ধরে বসছে মাছের মেলা। মেলায় কোন জামাই বা শ্বশুর কত বড় মাছ কিনলেন, তা নিয়ে চলে একধরনের প্রতিযোগিতা। তবে দুদিনব্যাপী চলা মেলাটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে বেশ পরিচিত। প্রতি বছর মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার এ মেলা বসে।
বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, চারদিকে ফসলের মাঠ। কেউ ধান রোপণ করছেন, কেউবা সবজি। মাঝের একটি ফাঁকা মাঠে বসেছে মাছের মেলা। সকালে বিভিন্ন স্থান থেকে সেই মেলায় মানুষ ছুটে আসছে। এর আগে ট্রাক, পিকআপ ও রিকশায় মাছ ব্যবসায়ীরা বড় বড় মাছ নিয়ে হাজির হন মেলায়।
ব্যবসায়ীরা থরে থরে সাজিয়ে রেখেছেন মাছ। দুপুরের মধ্যে দূর-দূরান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড়ে যেন কোথাও ঠাঁই নেই। কেউ মাছ কিনেছেন, কেউবা দেখছেন আর ছবি তুলছেন। মেলায় কোনো কোনো মাছের ওজন ২০ থেকে ৫০ কেজি। মাছ ছাড়াও মেলায় বিক্রি হচ্ছে হরেক রকম পণ্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষায় থাকে মানুষ। এলাকার প্রতিটি বাড়িতে থাকে নতুন–পুরোনো অতিথি দিয়ে ভরা। বকচরসহ আশপাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সেসব জামাই এ মেলার মূল ক্রেতা। জামাইরা সবচেয়ে বড় মাছ কিনে খুশি মনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যান। আবার জামাইদের আপ্যায়ন করতে শ্বশুরপক্ষও মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান বাড়িতে।
মাছ ব্যবসায়ী নরেন চন্দ্র দাস জানান, ৩০ বছর ধরে মেলায় মাছ বিক্রি করছেন। এবার তিনি ৪০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ নিয়ে এসেছেন। এটাই মেলার সবচেয়ে বড় মাছ। মাছটির দাম চাইছেন ৮০ হাজার টাকা। ক্রেতাদের মধ্যে একজন মাছটির দাম বলছেন ৪৫ হাজার টাকা।
মেলায় আসা হোসেন আলী জানান, মেলা উপলক্ষে প্রতিবছর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। মেলা থেকে বড় আকারের মাছ কেনার চেষ্টা করেন। এবার ২০ কেজি ওজনের বাঘাইড়সহ ৫০ হাজার টাকার মাছ কেনা হয়েছে।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও কালেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন শিপন বলেন, মেলাটির প্রচলন কত বছর থেকে এর সঠিক তথ্য কেউ বলতে পারে না। তবে গ্রামের মুরব্বিরা জানান, ২০০ বছর আগে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে। এটি মাছের মেলা হলেও মানুষ এটাকে জামাই মেলা হিসেবে চেনেন। মেলা উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছেন অনেকে।।