জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ‘ইংরেজি নববর্ষ ২০২৩’ উপলক্ষ্যে গত ১৭ জানুয়ারি ২০২৩ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬:০০ ঘটিকায় জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে নিউইয়র্কে দায়িত্বরত প্রবাসী বাংলাদেশী সাংবাদিকবৃন্দের সাথে শুভেচ্ছা ও মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। খবর বাপসনিউজ।১৭ জানুয়ারি,জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন নিউইয়র্কের
স্থায়ী প্রতিনিধি জনাব মুহিত শুরুতে সবাইকে স্বাগত জানান
এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে
বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর এ পর্যন্ত
বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরেন। বাংলাদেশ বর্তমানে
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীসহ বিভিন্ন ফোরামে অত্যন্ত
দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত
সমাধানের ব্যাপারে মিয়ানমার এবং জাতিসংঘের প্রতিটি
দেশের সাথে বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে।
২১শে ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ১৯৯৯ সাল থেকে জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রতিটি দেশে পালিত হচ্ছে,
এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের উদ্দোগে জাতিসংঘে শান্তির সংস্কৃতি পালিত
হচ্ছে। জনাব মুহিত তার দায়িত্ব পালনকালে বাংলা সংবাদ
মাধ্যমের সমর্থন কামনা করেন এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশকে তুলে ধরার আহবান
জানান।
আই-অন-বাংলাদেশ টিভির পরিচালক রিমন ইসলামের
এক প্রশ্নের জবাবে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া রোহিঙ্গাদের
গণহত্যার বিচার দাবিতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে যে মামলা করেছিল ICC & ICJ কোর্টে, সেটির বর্তমান অবস্থা এবং
অগ্রগতি ব্যাখ্যা করেন জনাব মুহিত। গাম্বিয়ার মামলার উত্তরের জবাব দেন বাংলাদেশ মিশনের ডিফেন্স মিনিস্টার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদেক, মিয়ানমারে সদ্য নিয়োগ পাওয়া বাংলাদেশের রাস্ট্রদূত ডঃ হোসেন বিশদভাবে প্রশ্নের জবাব দেন। জাতিসংঘ ৩য় কমিটির মিনিস্টার মোসাম্মত
সাহানারা মনিকা গাম্বিয়ার মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেন।এই মামলায় মিয়ানমারের সাবেক প্রেসিডেন্ট অং সান সুচি ২০১৯ সালে ICC Court, The Hague, Netherlands এ সাক্ষ্য প্রদান করেন।
নিউইয়র্কে ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির মতবিনিময় সভায়
বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে কোন চাপ বা দিক নির্দেশনা নেই বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি- রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ ধরণের দিক নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন না।
বরং তিনি বলেন,সদস্য রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নিউইয়র্কে ইংরেজি নতুন বছর উপলক্ষে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সঙ্গে স্থায়ী প্রতিনিধির মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এসব কথা বলেন।
এ সময় রোহিঙ্গা ইস্যূতে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, ইতিমধ্যে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দুটি প্রস্তাবনা পাশ হয়েছে। এ দুটি প্রস্তাবণাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ তরান্বিত হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার যৌক্তিকতা নিয়ে মিয়ানমারের চ্যালেন্জ করা রিট আন্তর্জাতিক আদালত খারিজ করে দিয়েছে। ফলে এখন দায়েরকৃত মামলার কার্যক্রম চলতে আর বাধা নেই।
রেমিট্যান্স ইস্যূতে কথা বলতে গিয়ে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত বলেন, রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র এখন শীর্ষে। যেটি আগে সৌদি আরবের দখলে ছিল। তিনি মনে করেন বৈধ পথে অর্থ পাঠানোর জন্যই এমনটি হয়েছে – যা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। এই জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের কিভাবে আরও উৎসাহিত করা যায় সেটি নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে মনে করেন তিনি।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত খুনী রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, খুনীরা প্রতিটি দেশে একটি আইনের অধীনে আশ্রয়ে আছে। তাই তাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দেশের আইনী কাঠামোর উপর নির্ভর করছে। তবে খুনীদের ফিরিয়ে নেওয়ার সব চেষ্টাই করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিজেকে সফল মনে করেন কিনা এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত বলেন, আমি এখানে এসেছি মাত্র ৫ মাস। আমার আরও কাজ করার সুযোগ আছে। নিজেকে ব্যর্থ বা সফল বলার সময় এখনও আসেনি বলে জানান স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
এর আগে মতবিনিময় সভার শুরুতে লিখিত বক্তৃতায় রাষ্ট্রদূত আব্দুল মুহিত ২০২২ সালে মিশন কর্তৃক সম্পাদিত বিভিন্ন কাজের কথা তুলে ধরেন। তিনি নিউইয়র্কের ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সকল সাংবাদিকগণকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান।
এ সময় তাঁর পাশে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারে সদ্য নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সাংবাদিকগণ তাদের নিজ নিজ পরিচয় তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে জাতিসংঘ বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের সব কর্মকর্তা
উপস্থিত ছিলেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেস মিনিস্টার নাসির উদ্দীন ধন্যবাদ জানিয়ে
অনুষ্ঠান সমাপ্ত ঘোষণা করেন।
সবাইকে নতুন বছরের উপহার দেয়া হয়।
শেষে সবাইকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়।