চলমান দুর্নীতি ও দু:শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করতে কুড়িগ্রামের রৌমারীতে এসেছেন হানিফ ওরফে ‘হানিফ বাংলাদেশি।’
“বদলে যাও বদলে দাও” স্লোগান নিয়ে সোমবার (৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় ৫৭তম কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও ৪৪৬তম রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তিনি।
হানিফ বাংলাদেশি বলেন, ৬৪ জেলা ও ৪৯৫ উপজেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দেবেন। তিনি গত ৫ই জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা থেকে এ যাত্রা শুরু করছেন। প্রতিদিন ৩ উপজেলা প্রদক্ষিণ করে ৩০ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় গিয়ে কর্মসূচি শেষ করবেন।
হানিফ বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক মানবিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় চলছে। ভোট, গণতন্ত্র, আইনের শাসনের ওপর পূর্বের সরকারে যারা ছিলেন সে সময়েও নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে, ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার হয়েছে, সামাজিক, মানবিক, পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় পূর্বেও ছিল যা এখন আরও চরম আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের কৃষক উৎপাদনশীল, শ্রমিকরা পরিশ্রমী, ছাত্র-যুবকেরা মেধাবী কিন্ত দুর্বৃত্তায়তি রাজনীতি, দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদ, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারি আমলা, দুর্নীতিগ্রস্ত বড় বড় ব্যবসায়ীরা লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে আমাদের সকল অর্জনকে ব্যাহত করছে। এত সম্ভাবনা থাকার পরেও দেশ যতটুকু এগিয়ে যাওয়ার কথা ততটুকু এগিয়ে যাচ্ছে না। দেশে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানবিক মূল্যবোধের পতন হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আশা করি সম্ভাবনাময় এই অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিতে এবং চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থপাচার বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা ও পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে যুবকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহজ শর্তে ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ভোট গণতন্ত্র আইনের শাসনের মান উন্নয়নে আরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
হানিফ আরও বলেন, আমি দেশের নানা অসঙ্গতি নিয়ে সব সময় প্রতিবাদ করে থাকি। এর আগেও ঢাকা শহরসহ দেশের জনবহুল স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের আন্দোলন করেছি। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে দেশে যখন জ্বালাও পোড়াও শুরু হয় তখন দুই নেতৃত্ব বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে ভোটাধিকারের দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পায়ে হেটে পদযাত্রা করেছি, নির্বাচন কমিশনকে পঁচা আপেল দিয়ে প্রতিবাদ করেছি। সংসদ ভবনের চার পাশে ১৬ বার প্রদক্ষিণ করে স্পিকারের বরাবর স্বারকলিপি দিয়েছি। ২০২০ সালে সর্বগ্রাসী দুর্নীতির বিরুদ্ধে ৬৪ জেলা প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসক অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছি। ২০২০ সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবিতে প্রতীকী লাশ নিয়ে পদযাত্রা করেছি। ২০২১ সালে দেশব্যাপী মার্চ ফর ডেমোক্রেসি গণতন্ত্রের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করছি। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের দাবি সংসদ ভবনের সামনে ঘন্টা বাজিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছি। ২০২১ সালে নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন প্রনয়নের দাবিতে মাথায় ভোটের বাক্স নিয়ে ৬৪ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। এখন ৫০ বছর ধরে চলমান দুর্নীতি-দু:শাসনের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেছি।
হানিফ নোয়াখালী সদরের নিয়াজদী ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি ২০০২ সালে চট্টগ্রামের ওমরগণি এমইএস কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করেন। পরে চট্টগ্রামের একটি প্রতিষ্ঠানে কমিশন এজেন্টের কাজ নেন। প্রতিষ্ঠান থেকে ছুটি নিয়ে ফাঁকে ফাঁকে এই প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।