রাজধানীবাসীর চলাচল নির্বিঘ্ন করতে মিরপুরে নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছে সরকার। ইতোমধ্যে প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। উদ্বোধনের জন্য প্রস্তত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির উদ্বোধন করবেন। মিরপুরের ইসিবি চত্বর থেকে কালশী মোড়, মিরপুর ডিওএইচএস ও মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকাজুড়ে নির্মিত এই ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার।
প্রকল্পটি চালু হলে মিরপুর, পল্লবী, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, মহাখালী ও রামপুরার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ সহজ হবে। বাড়বে সড়কে যানবাহনের ধারণক্ষমতা। মিরপুর থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটে যাওয়া যাবে বিমানবন্দর এলাকায়।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি প্রকল্পটি অনুমোদন করে সরকার। নির্মাণের সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ করেছে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। প্রধানমন্ত্রীর সময়দান সাপেক্ষে যে কোনো সময় প্রকল্পটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় (এলজিআরডি) মন্ত্রণালয়ের এই প্রকল্পটির স্বত্বাধিকারী সংস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। উদ্বোধনের পর থেকে প্রকল্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে ডিএনসিসি।
ডিএনসিসি সূত্রে আরও জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২ কিলোমিটার ফ্লাইওভার (১ দশমিক ৭ কিলোমিটার) নির্মাণের পাশাপাশি সড়ক, ফুটপাত এবং ড্রেনের উন্নয়ন কাজও করা হয়েছে। ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক, ফুটপাত প্রশস্তকরণ, সড়ক বিভাজক তৈরি এবং ড্রেন নির্মাণ ও কমিউনিকেশন ডাক্টও তৈরি করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ডিএনসিসি অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মাদ আরিফুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, সরকারের উদ্যোগে জনবান্ধব একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ মানসম্মত হয়েছে। প্রকল্পটি উদ্বোধন হলে মিরপুরের বাসিন্দাদের চলাচল অনেকাংশে সহজ হবে। আগের তুলনায় অনেক কম সময়ে চলাচল করতে পারবেন মিরপুরের বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মিরপুর থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা ও টঙ্গী হয়ে উত্তর দিকে যাওয়ার জন্য কালশী হয়ে জিয়া কলোনি দিয়ে নতুন রাস্তা নির্মাণ করা হয়। পরে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ওপর দিয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছিল। এরপর থেকে মিরপুর এলাকা দিয়ে সড়কের ব্যবহার বেড়ে যায়। এখন প্রায় প্রতিদিন ৬০ থেকে ৭০ হাজার যানবাহন এই সড়কে চলাচল করছে। এছাড়া ওই এলাকার সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, ক্লিনিক গড়ে উঠছে।
তারা আরও জানান, মিরপুর ১২ নম্বর এলাকায় অবস্থিত মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি), ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ (এনডিসি), স্টাফ কলেজ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) এবং মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের বহুসংখ্যক শিক্ষার্থী ওই সড়কে যাতায়াত করেন। এছাড়া ওই এলাকায় বাংলাদেশ ন্যাশনাল হাউজিং অথরিটির মাধ্যমে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ চলছে। ইতোমধ্যে কিছু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এবং কিছুর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এগুলো শেষ হলে এই এলাকায় যান চলাচল আরও বেড়ে যাবে। উত্তরা হতে মিরপুর পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিম সংযোগকারী সড়কের অপ্রতুলতার জন্য উত্তরা, রামপুরা বা মহাখালীর বসবাসকারীরা মিরপুর যেতে এই সড়ক ব্যবহার করেন। এসব দিক বিবেচনা করে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়েছে।