ইংরেজি নববর্ষের প্রথম দিন আজ রবিবার পূর্বাচলে মাসব্যাপী ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৭তম আসর শুরু হচ্ছে।
দুই বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এবার ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্যমেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্যমেলায় সবচেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও পণ্য বহুমুখীকরণে। বাংলাদেশী পণ্য বিদেশী ক্রেতাদের সামনে তুলে ধরা এবং স্পট অর্ডার বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে। পোশাক, চামড়া ও মাছের পাশাপাশি রপ্তানিকৃত আরও ১০টি পণ্যকে টার্গেট করা হয়েছে, যাদের বিক্রি হবে বছরে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি। শনিবার রাজধানীর উপকণ্ঠ পূর্বাচল নতুন শহরের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
বাণিজ্যমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এবারের মেলায় ব্যাপক দর্শক ও ক্রেতা সমাগমের আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পরই আনুষ্ঠানিকভাবে পর্দা উঠবে বাণিজ্যমেলার। দেশী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এবার ১০টি দেশের ১৭টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। ক্রেতারা যাতে মেলা থেকে ভাল মানের পণ্য কেনাকাটা করতে পারেন সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। কেনাকাটা করে কেউ যেন না ঠকেন সে লক্ষ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বিশেষ টিম সার্বক্ষণিক মেলায় কাজ করবে। খাদ্যপণ্যের দাম বেশি নেওয়া যাবে না। এজন্য দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। চুরি, ছিনতাই ও ইভটিজিং রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে মেলায়।
এছাড়া ক্রেতা-দর্শনার্থীরা কোন ঝামেলায় কিংবা অসুবিধায় পড়লে যে কোন বিষয়ে তারা সংশ্লিষ্টদের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। এজন্য একটি ‘অভিযোগ বাক্স’ খোলা হবে। টিপু মুনশি বলেন, এবার টিকিটের দাম বাড়ানো হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ বিনা টিকিটে মেলা পরিদর্শন ও কেনাকাটা করতে পারবেন। বিকাশে পেমেন্ট করে টিকিট কাটতে পারবেন অর্ধেক টাকায়।
উল্লেখ্য, মেলায় প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশের টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বাণিজ্যমেলায় দেশীয় বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া বা আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর, ফার্নিচার ইত্যাদি পণ্য প্রদর্শিত হবে।
টিপু মুনশি আরও বলেন, এবারের বাণিজ্যমেলায় ঢাকা থেকে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য প্রথম পর্যায়ে ৭০টি বিআরটিসি বাস ঢাকা কুড়িল ফ্লাইওভার থেকে মেলার স্থায়ী ভেন্যু পর্যন্ত যাওয়া আসা করবে। তবে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের চাপ বাড়লে সেক্ষেত্রে ১৫০টি বাস নিয়োজিত করবে বিআরটিসি কর্তৃপক্ষ। এবার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫ টাকা। এর পাশাপাশি বেসরকারি খাতে বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করতে পারবে। তিনি বলেন, ব্যাপক লোকসমাগম হবে এমনটি বিবেচনায় নিয়ে এবার আগেভাগে পূর্বাচলের রাস্তা সংস্কার কাজ প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
মেলায় আসতে ক্রেতা-দর্শনার্থীরা এখন আর কোন সমস্যায় পড়বেননা, তারা নির্বিঘেœ আসতে পারবেন। বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, প্রতিদিন সকাল ১০টায় শুরু হয়ে মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। তবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ যে কোন ছুটির দিনে মেলার সময় এক ঘণ্টা বাড়ানো হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) যৌথভাবে বাণিজ্যমেলার আয়োজন করেছে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার পাশাপাশি এখানে সারাবছর মেলা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পৃথকভাবে মেলা আয়োজনের জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে। বাণিজ্যমেলা থেকে সরকারের আয়ের বিষয়টি মুখ্য নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, মূলত বিদেশীদের কাছে দেশী পণ্য তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য। এতে করে রপ্তানি বাড়বে। পাশাপাশি দেশী পণ্যের উৎপাদন ও অভ্যন্তরীণ বাজার তৈরি করা করা।
টিপু মুনশি জানান, গত বছর মেলা থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি স্পর্ট অর্ডার এসেছিল। এবার আরও বেশি হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমাদের উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দেওয়াই মেলার মূল উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য। আর সার্বিকভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বাড়ানো। রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, প্রতিবছর আমাদের রপ্তানি বাড়ছে। গত বছর আমাদের ৫১ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আমরা ৬০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করতে পেরেছি। এ বছর ৬৭ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তারপরও কোভিড পরবর্তী অবস্থা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিতেও আমরা আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জন করতে পারব এ বছর মেলার পরিধি বাড়ানো হয়েছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। বলেন, গত বছরের তুলনায় ১০০টির বেশি স্টল অংশ নিয়েছে।
এদিকে, বাণিজ্যমেলার আয়োজন ও সাজসজ্জার ক্ষেত্রেও এসেছে বড় পরিবর্তন। গতবার যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভিযোগ ছিল ব্যবসায়ীদের। এবার সেই দুর্ভোগ কমাতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নজর। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন সেতু পেরিয়ে এশিয়ান হাইওয়ে (ঢাকা বাইপাস) ধরে কিছুটা এগোলেই পূর্বাচল উপশহরের ৪ নম্বর সেক্টর। সেখানে গড়ে উঠেছে ২৮ একর আয়তনের বিবিসিএফইসি।