কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে ছায়েদুর রহমান সবুজ (৪৪) নামে এক আওয়ামী লীগ নেতাকে মারধোরের প্রতিবাদে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রোববার (১১ডিসেম্বর) বিকালে উপজেলার ফরিদপুর আলালপুর ভূঞা বাড়ী সংলগ্ন ডুমরাকান্দা-বেলাব রাস্তায় এলাকাবাসী, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের উদ্যোগে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় বক্তারা আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুর রহমান সবুজকে রাস্তা থেকে তুলে ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে নিয়ে মারধোর ও তার স্ত্রীকে শ্লীলতাহানি করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানিয়ে বলেন, সে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটালেও কোন প্রকার বিচার না হওয়ায় তার সাহস দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহন করেন ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রেফায়েত উল্লাহ, সদস্য তোফাজ্জল হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মুছা, ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাপ খান, ভুক্তভুগী আহত আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুর রহমান সবুজ, ফরিদপুর ইউনিয়ন আব্দুল হামিদ ভূঞা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হাজী মো. সুলাইমান মিয়া, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. মিলন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক ভূঞা, যুবলীগ নেতা মো. রুবেল হোসেন, মো. সিপন মিয়া, মো. হানিফ মিয়াসহ এলাকাবাসী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের আলালপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মুতালিব খানের পুত্র আহত আওয়ামী লীগ নেতা মো. ছায়েদুর রহমান সবুজ গত স্থানীয় সরকার (ইউপি) নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাসুদুর রহমান মুছা’র চশমা প্রতীকে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হওয়ার পর ওই আওয়ামী লীগ নেতা ছায়েদুর রহমান সবুজ সহ মাসুদুর রহমান মুছা’র কর্মী সমর্থকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরই জের হিসেবে ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিলো ইউপি চেয়ারম্যান সহ তার অনুসারীরা।
শনিবার (১০ডিসেম্বর) দুপুরে আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে বাড়ি থেকে কর্মস্থল ভৈরবে যাওয়ার পথে আলালপুর গ্রামের মেরাজ মিয়ার বাড়ির সামনে আসা মাত্র পূর্ব থেকে উৎপেতে থাকা চেয়ারম্যানের লোকজন ওই আওয়ামী লীগ নেতার পথরোধ করে তাকে মারধোর করে। পরে তাকে টেনে হেচরে ফরিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের অফিস কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পর ইউপি চেয়ারম্যান ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে একটি লাঠি দিয়ে নির্মম ভাবে আঘাত করে তার নিকট থাকা আড়াই লক্ষ টাকা ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। খবর পেয়ে স্বামীকে উদ্ধার করতে আওয়ামী লীগ নেতার স্ত্রী স্কুল শিক্ষিকা মোছা. কামরুন্নাহার (৩৬) ওই ইউনিয়ন পরিষদে গেলে সেও রেহায় পায়নি। চেয়ারম্যান তার চুলের মুটি ও শরীরের কাপড় চোপড় ধরে টানা হেছরা করে উলঙ্গ করে শ্লীলতাহানি করে তার নিকট থাকা একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। পরে স্থানীয়রা আহত ছায়েদুর রহমান সবুজকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে চিকিৎসা করান।
এঘটনায় ওই দিন আহত আওয়ামী লীগ নেতা মো. ছায়েদুর রহমান বাদী হয়ে চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ (৫০) সহ কাজল (৪৫), লিটন (৩০), ইদ্রিস মিয়া (৪৬), ছাদেক মিয়া (৪৫) ও শফিক মিয়া (৩৫) দের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ’র সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এর আগে অবৈধ পন্তায় তৈয়ারীকৃত জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষর না দেওয়ায় গত ১৫ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে ওই ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ নব-যোগদানকৃত ইউপি সচিব মো. হাবিবুর রহমান (৫৫)কে মারধোর সহ অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করেন। এঘটনায় জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ ভার্সন ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়ার পর এলাকায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম লুনা গত ২২ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে তার কার্যালয়ে একটি হেয়ারিং এর আয়োজন করে হিয়ারিং-এ উপস্থিত থাকার জন্য অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ও অভিযোগকারী ইউপি সচিবকে নোটিশ প্রদান করেন। নির্ধারিত তারিখ ও সময়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিব ইউনিয়নের সদস্যদের সাথে নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে হিয়ারিং-এ উপস্থিত হয়ে ইউপি সচিবের নিকট ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান ওই চেয়ারম্যান এস.এম আজিজ উল্ল্যাহ।