ঢালিউড কুইন খ্যাত চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর থানার কৌরীচালা গ্রামে চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে ‘লাল শাড়ি’ সিনেমার শুটিং করছেন। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬৫ লাখ টাকা সরকারি অনুদান পায় অপু-জয় কথাচিত্র প্রযোজিত সিনেমা ‘লাল শাড়ি’।
খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে এই সিনেমা নির্মাণের কাজ। কেমন চলছে সরকারি অনুদানের সিনেমা লাল শাড়ির শুটিং? সেটা দেখতে মানিকগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা। সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়ে সকাল প্রায় ১১ টার সময় গন্ত্যব্যে পৌছালাম।শুটিং স্পটে ঢুকতেই দেখা হয়ে গেলো সিনেমার প্রযোজক ও নায়িকা অপু বিশ্বাসের সাথে। সৌজন্যতা শেষ করেই তিনি নাস্তা করতে নিয়ে গেলে সকালের নাস্তা শেষ করে ক্ষানিক বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। এই ফাঁকে মেকআপ কস্টিউম নিয়ে তৈরি সিনেমার নায়িকা অপু বিশ্বাস। এবার আমাদের উদ্দেশ্য সেটে যাওয়া । যেখানে চলছে দৃশ্যায়নের কাজ।
শুটিং এর ফাঁকে কথা হয় অপু বিশ্বাসের সাথে। তিনি বলেন, টানা কয়েকদিন ধরে লাল শাড়ি সিনেমার শুটিং করছি। ৮০ শতাংশ কাজ শেষ।
আজকের পর একটা গানের দৃশ্যায়ন বাকি আছে। প্রধান চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজকের দায়িত্ব পালন করছেন এই প্রথমবার তাতে কি অভিনয়ে বা সিনেমায় কোন প্রভাব পড়ছে কি জানতে চাইলে অপু বলেন, আমার কাছে কোন চাপ মনে হচ্ছে না। আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না । তাছাড়া ইউনিটের সবাই অনেক সাহায্য করছে। আমার আর্টিস্টরাও হেল্পফুল। ফলে একদমই চাপ অনুভব করছি না।
লাল শাড়ি সিনেমার গল্পটা তাঁত শিল্পকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে গিয়েছে জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, লাল শাড়ি তাঁতি জনগোষ্ঠীর গল্প। বাংলাদেশের শাড়ি এক সময় দেশের বাইরেও সমাদৃত ছিল। আমরা জামদানীর হারানো ঐতিহ্য তুলে ধরব এই সিনেমায়। তিনি আরও বলেন, আমি মানিকগঞ্জের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ ।এখানকার মানুষজন আমাদের আপন করে নিয়েছে। রোজ এটা সেটা রেঁধে নিয়ে আসে। একটু হলেও মুখে দিতে হয় তাদের আনা খাবার। আমার তো মনে হয়, মানিকগঞ্জ এসে ওজন বেড়ে গেছে।
লাল শাড়ি প্রসঙ্গে সায়মন সাদিক বলেন, ‘লাল শাড়িতে আমার চরিত্রের নাম রাজু। অপু বিশ্বাসের চরিত্রের নাম শ্রাবণী। আমরা একই গ্রামে বসবাস করি। আমি তাঁতশিল্পী।গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী তাঁতশিল্প হারিয়ে যাচ্ছে। কী কারণে হারিয়ে যাচ্ছে, তার পেছনের গল্প আমরা সামনে নিয়ে আসব।
অপু বিশ্বাসের সঙ্গে এটাই প্রথম সিনেমা অভিজ্ঞতা কেমন জানতে চাইলে এই চিত্রনায়ক বললেন, অপু বিশ্বাসের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা দারুণ। তিনি খুবই সহযোগী মনোভাব দেখিয়েছেন। আমরা ৮০ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। বাকি কাজও সপ্তাহ খানেকের মধ্যে শেষ হবে। আগামী পহেলা বৈশাখে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। সিনেমাটি নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী, যেহেতু গ্রামীণ ঐতিহ্য নিয়ে সিনেমাটা তৈরি। আমার বিশ্বাস দেশের সর্বস্তরের মানুষ সিনেমাটি দেখবে।
এই গ্রামে প্রায় ১৫ দিন ধরেই চলছে লাল শাড়ি সিনেমার শুটিং। এই গ্রামে যেন একটা উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। শুটিং হাউজের পাশে বন্ধন বিশ্বাস সেট ফেলে করছেন দৃশ্যায়নের কাজ। সায়মনের ডাক আসতেই চলে গেলেন শট দিতে। তার সাথে গিয়ে কিছুক্ষণ শুটিং দেখা হল। শুটিং হাউজের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম তারা বেশ আনন্দিত শুটিং দেখে ও অপু বিশ্বাসকে দেখে। এই গ্রামে রয়েছে অপু বিশ্বাসের অধিক জনপ্রিয়তা তা বেশ টের পাওয়া গেলো। সন্ধ্যা নামতেই ট্রলার দিয়ে লোক আসতে শুরু করেছে দল বেঁধে শুটিং হাউজের দিকে । শুধু অপু বিশ্বাসকে এক নজর দেখতে। প্রতিদিনই নাকি সন্ধ্যার পর দূর দুরান্ত থেকে এভাবেই গ্রামের মানুষজন ট্রলার দিয়ে অপু দেখতে আসেন। অপুও নিরাশ করেন না। সবার সাথেই কথা বলেন ছবি তুলেন। অনেকেই দেখলাম বিভিন্ন খাবার ও উপহার সামগ্রী নিয়ে এসে তাদের প্রিয় এই অভিনেত্রীকে উপহার দিচ্ছেন। এই ব্যাপারটা বেশ উপভোগ্য ছিল। অপু নিজেও এই ব্যাপারটা খুব এনজয় করছেন বলেই জানালেন। এবং রুটিন করেই তাকে প্রতিদিন সন্ধ্যা হলেই ভক্তদের দেখা দিতে হচ্ছে।
কথা হয় পরিচালক বন্ধন বিশ্বাসের সাথে। টানা কাজ করছেন ও ৮০ শতাংশ কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছেন বলে তিনি জানান। আজ কয়টা দৃশ্য করলেন বা আজ কাজের অগ্রগতি কেমন? বন্ধন বিশ্বাস জানান, আমি সকাল নয়টায় ক্যামেরা ওপেন করেছি। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু সিন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, লম্বা বিরতি দিয়ে সিনেমায় ফেরা অপু বিশ্বাসের নায়ক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেতা সায়মন সাদিক। আরও আছেন শহিদুজ্জামান সেলিম, সুমিত, দিলরুবা দোয়েল, রাশেদুজ্জামান অপু, শাহেদ আলীসহ অনেকে।