আজ আজ সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ও যে কারণে বিপজ্জনক সূর্যগ্রহণ এবং করনীয় কি তা নির্নিমেষ করা ও চোখ বাঁচানোর জন্য কি করা।
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা যে কারণে বিপজ্জনক
সূর্যগ্রহণ আসলে একটি বর্ণিল আর আকর্ষণীয় মহাজাগতিক ঘটনা। চাঁদ যখন পৃথিবীর কক্ষপথে ঘোরে, তখন তার প্রদক্ষিণ পথে কখনো কখনো চাঁদ এসে পড়ে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে।
তখন তারা থেকে আলোর বিচ্ছুরণ বাধাগ্রস্ত হয়, ফলে ঘটে সূর্যের গ্রহণ। চাঁদ এ সময় পৃথিবীকে তার ছায়ায় ঢেকে ফেলে। চাঁদ যখন সূর্যের আংশিক ঢেকে রাখে তখন সংঘটিত হয় আংশিক সূর্যগ্রন।
অনেকেই হয়তো জানেন, খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা চোখের জন্য ক্ষতিকর। তবে এটি কি সত্যিই নাকি প্রচলিত কল্পকথা? এটি শুধু একটি মিথ নয় বরং এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণও আছে।
বিশেষ করে আপনি যদি খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখার চেষ্টা করেন তাহলে চোখের রেটিনার ক্ষতি হতে পারে, বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণ/
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখলে সৌর রেটিনোপ্যাথি হতে পারে। আলোর এই এক্সপোজার রেটিনার (চোখের পেছনে) কোষগুলোর ক্ষতি করতে পারে বা এমনকি ধ্বংস করেও দিতে পারে।
এক্ষেত্রে চোখে কোনো ব্যথা না হলেও অন্ধত্ব, বিকৃত দৃষ্টি, পরিবর্তিত রং ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। সূর্যগ্রহণ প্রত্যক্ষ করারকয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে চোখের দৃষ্টিতে সমস্যা হয়েছে কি না তা বুঝতে। আপনি যদি সূর্যগ্রহণ দেখার পর চোখে কোনো পরিবর্তন দেখেন তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
সূর্যগ্রহণে সময় চোখের সুরক্ষায় কী করবেন?
সম্পূর্ণ সূর্যগ্রহণের সময় বিশেষ কোনো সুরক্ষাকবচ ছাড়াই আপনি আপনি নিরাপদে সূর্যগ্রহণ দেখতে পারবেন। এটি তখনই ঘটে যখন চাঁদ সম্পূর্ণরূপে সূর্যকে ঢেকে দেয়।
তবে যথাযথ নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা কৌশল ছাড়া আংশিক সূর্যগ্রহণ দেখা নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রেও চোখের ক্ষতি হতে পারে। নিরাপদে সূর্যগ্রহণ দেখার কয়েকটি সাধারণ উপায় জেনে নিন-
এটি সূর্যগ্রহণ দেখার সবচেয়ে নিরাপদ ও সবচেয়ে সহজ উপায়। এক্ষেত্রে সরাসরি সূর্যগ্রহণের দিকে তাকানোর প্রয়োজন হয় না। একটি পিচবোর্ডের কাগজে একটি পিনহোল তৈরি করার মাধ্যমে আপনি সূর্যগ্রহণ দেখবে পাবেন।
একদিকে সূর্য ও অন্যদিকে ছবি প্রজেক্ট করার জন্য তিন ফুট দূরে একটি কাগজের টুকরো রাখুন। তবে সূর্যের দিকে পিনহোল দিয়ে তাকাবেন না।
১৪ নম্বর ওয়েল্ডারের গ্লাস কার্যকর সুরক্ষা প্রদান করে সূর্যগ্রহণ দেখার ক্ষেত্রে। স্থানীয় ওয়েল্ডার সরবরাহের দোকানে আপনি এটি খুঁজে পেতে পারেন। এই গ্লাস সূর্যগ্রহণের সময় নির্গত ক্ষতিকর রশ্মি চোখে প্রবেশ করতে দেয় না। তবে কাচে যদি কোনো স্ক্র্যাচ বা ক্ষতি থাকে তাহলে তা ব্যবহার করবেন না।
অ্যালুমিনাইজড মাইলার প্লাস্টিকের শিট ব্যবহৃত সানগ্লাস সূর্যগ্রহণের সময় পরতে পারেন চোখে। যদি এ ধরনের সানগ্লাস না পান তাহলে একটি বাক্সের মতো তৈরি করুন এই শিট দিয়ে। তবে শিটে কোনো স্ক্র্যাচ থাকলে ব্যবহার করবেন না।
(নিরাপদে সূর্যগ্রহণ দেখার অন্যান্য উপায় হলো টেলিভিশনে বা প্ল্যানেটরিয়ামে।)
স্মার্টফোনের ক্যামেরায় সূর্যগ্রহণ দেখা বা ছবি তোলার সমঢ ক্যামেরা লাইনআপ করতে গিয়ে ভুলক্রমে সূর্যের দিকে চোখ যেতে পারে। এক্ষেত্রে চোখ ও স্মার্টফোনের ক্যামেরা দুটোরই ক্ষতি হবে। তাই কোনো ঝুঁকি নেবেন না।
ক্যামেরার অপটিক্যাল ভিউফাইন্ডারের মাধ্যমেও কখনো সূর্যগ্রহণের দিকে তাকাবেন না। এটি সরাসরি দেখার মতো আপনার চোখের ক্ষতি করতে পারে।
সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন না করা হলে, কোনো অপটিক্যাল ডিভাইস (টেলিস্কোপ, বাইনোকুলার ইত্যাদি) দিয়ে কোনো ফিল্টার ব্যবহার করা নিরাপদ নয়।
সব ধরনের রঙিন ফিল্ম, কালো-সাদা ফিল্ম যাতে কোনো রূপা নেই, ফটোগ্রাফিক নেগেটিভ ছবিসহ (এক্স-রে এবং স্ন্যাপশট), স্মোকড গ্লাস, সানগ্লাস (একক বা একাধিক জোড়া), ফটোগ্রাফিক নিরপেক্ষ ঘনত্বের ফিল্টার ও পোলারাইজিং ফিল্টারগুলি অনিরাপদ ফিল্টার সূর্যগ্রহণ দেখার জন্য।
এছাড়া সস্তা টেলিস্কোপের সঙ্গে আইপিসের জন্য ডিজাইন করা সৌর ফিল্টারগুলোও অনিরাপদ। এসব আইটেম আপনার চোখের ক্ষতির ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
২৫ অক্টোবর বিকেল ৪টা ২০ মিনিট নাগাদ সূর্যগ্রহণ ঘটতে চলেছে। রাশিয়া, ইউরোপ, সাইবেরিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া ও আফ্রিকাসহ বিশ্বের মানুষ এই জ্যোতির্বিজ্ঞানী ঘটনার সাক্ষী হতে পারবেন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের জলবায়ু মহাশাখা সূত্রে জানা গেছে, সূর্যগ্রহণ ঢাকা বিভাগে বিকেল ৪টা ৪৯ মিনিট ৩০ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৫টা ২৪ মিনিট ১২ সেকেন্ডে শেষ হবে।
আর ময়মনসিংহে ৪টা ৪৮ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৫টা ২৩ মিনিটে শেষ হবে। চট্টগ্রামে শুরু হবে ৪টা ৪৪ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে, শেষ হবে ৫টা ২০ মিনিটে। সিলেটে ৪টা ৪২ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শুরু হয়ে শেষ হবে ৫টা ১৭ মিনিট ৬ সেকেন্ডে শেষ হবে।
এছাড়া খুলনায় ৪টা ৫৪ মিনিট ৬ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৫টা ২৮ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে শেষ হবে। বরিশালে ৪টা ৫০ মিনিট ৩৬ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৫টা ২৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শেষ হবে।
রাজশাহীতে ৪টা ৫৫ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে শুরু হয়ে ৫টা ৩০ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে শেষ হবে এবং রংপুরে গ্রহণ শুরু হবে ৪টা ৫২ মিনিট ৬ সেকেন্ডে, ৫টা ২৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডে গ্রহণ শেষ হবে।