নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানায় সেবাপ্রার্থী এক নারীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করায় মোঃ রতন মিয়া নামের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) কে ক্লোজড করা হয়েছে। রোববার (১৬ অক্টোবর) রাতে তাকে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জের চরকাঁকড়া গ্রামের সেতারা বেগম নামের এক নারী থানায় একটি অভিযোগ করলে বাজারের রেস্তোরাঁয় বসে তা সমাধানের প্রস্তাব দেন এসআই রতন মিয়া।
কিন্তু তিনি এতে অস্বীকৃতি জানালে থানায় ডেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে রতন মিয়া।
গত শনিবার (১৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় থানার ফটকে এ ঘটনা ঘটে।
পরে এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভুক্তভোগী সেতারা বেগম চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আকবর হাজী বাড়ির মৃত আবু বক্কর ছিদ্দিকের স্ত্রী।
তিনি জানান, গত সাত মাস আগে আমার ছেলে নুরনবীকে (২৭) সৌদি আরব নেয় সিরাজপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেহের আলী কামলা বাড়ির সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলাম। এজন্য তাকে চারলাখ টাকাও দেই। কথা ছিল আবাসিক হোটেলে চাকরি দেবে। বেতন হবে এক হাজার ৮০০ রিয়াল।
কিন্তু আমার ছেলে সেখানে যাওয়ার পর চাকরি না দিয়ে তিন মাস একটা রুমে রাখে। চাকরি না পেয়ে গত সাত মাস সে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বার বার বলার পর এক পর্যায়ে আকামা করার জন্য পুনরায় আরও এক হাজার রিয়াল নেয়। পরে প্রতারক সাইফুল আমার ছেলেকে খুরুজ (অস্থায়ী) আকামা দিয়েছে। যেটা দেখে কেউ তাকে কাজ দেয় না।
ওই নারীর দাবি, এ বিষয়ে গত ১৫-২০ দিন আগে থানায় লিখিত অভিযোগ করি। ওই অভিযোগে সৌদি প্রবাসী সাইফুল ইসলামের মা-বাবা ও স্ত্রীকে বিবাদী করা হয়।
অভিযোগটি তদন্ত করার দায়িত্ব পান এসআই রতন মিয়া। সমস্যার সমাধান করতে এসআই রতন আমাদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা চাইলে দুই হাজার টাকাও দেই।
কিন্তু গত শুক্রবার প্রথম বৈঠকে থানায় বিবাদী পক্ষের কেউ আসেনি। দ্বিতীয় বৈঠকে বসার জন্য এসআই রতন বিবাদীদের বাড়িতে গিয়ে কথা বলে আসেন।
তারপর গত শনিবার সন্ধ্যায় এসআই ফোন দিয়ে জানায়, থানায় কোনো বৈঠক হবে না। বৈঠক হবে বসুরহাট বাজারের হক হোটেলে। এ নিয়ে আমি রেস্তোরাঁয় গিয়ে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই মুঠোফোনে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন আমাকে । তখন মুঠোফোনে আমি বলি, থানায় অভিযোগ করেছি বৈঠকও থানায় হবে। এরপর এসআই আমাকে থানার গেটে আসতে বলেন।
থানার গেটের ভেতরে প্রবেশ করলে পুনরায় সে চিৎকার করে অশ্রাব্য ভাষায় সাধারণ মানুষের সামনে গালমন্দ করেন।
যা মুখে বলা যায় না। পরে আমি কাঁদতে কাঁদতে থানা থেকে চলে যাই। একজন মাকে তার ছেলের সামনে প্রকাশ্যে এভাবে দায়িত্বরত একজন পুলিশ কর্মকর্তা গালিগালাজ করতে পারে আমি তা ভাবতেও পারি না।
নোয়াখালী পুলিশ সুপার (এসপি) মোঃ শহীদুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এসআই রতন মিয়াকে রোববার রাতেই পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। তদন্ত করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।