বাংলাদেশ বিপুল ভোটে আবারও জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় বিএনপি এবং দেশবিরোধীদের বিভিন্ন অপপ্রচার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বলেছেন তথ্যমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।
মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অনুষ্ঠিত এই ভোটে পঞ্চমবারের মতো ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদে ১৮৯টি ভোটের ১৬০টি ভোট পেয়ে মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয় বাংলাদেশ। ৪৭ সদস্যের এই কাউন্সিলে বাংলাদেশ এর আগে ২০০৬, ২০০৯, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে সদস্য নির্বাচিত হয়েছিল।
বুধবার ১২ অক্টোবর দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৬০ ভোট পেয়ে পুণরায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। আপনারা জানেন, বিএনপি এবং কিছু কিছু ব্যক্তিবিশেষ এবং চিহ্নিত কয়েকটি সংগঠন ক্রমাগতভাবে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে বলে অপপ্রচার করছে। তারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভুল তথ্য উপাত্ত প্রেরণ করে বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করছিল এবং সেই প্রেক্ষাপটের মধ্যেই বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয়, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তারা যে অপপ্রচার চালিয়ে এসেছে, যেভাবে বিদেশিদের বিভক্ত করার চেষ্টা করেছে, সেগুলো অসার এবং কাজে আসেনি। বরং প্রমাণ হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার সঠিক পথেই আছে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে মানবাধিকারের সর্বোচ্চ লংঘন হয়েছে যখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকতে বিনা বিচারে হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার-জওয়ানকে হত্যা করেছে। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, ফাঁসি কার্যকর হয়েছে আগে, বিচারের রায় হয়েছে পরে। এবং দিজ আর ডকুমেন্টেড অর্থাৎ এগুলোর প্রমাণ রয়েছে। জিয়ার আমলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।’
‘বেগম খালেদা জিয়াও কম যাননি, ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলা, আমাদের সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার, খুলনার মনজুর ইমামকে হত্যা, হুমায়ুন কবির বালু থেকে শুরু করে বহু সাংবাদিক হত্যার সাথে খালেদা জিয়ার সরকার যুক্ত ছিল এবং তারা সেগুলোর কোনো সঠিক বিচার করেনি’ বলেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘২০১৩-১৪-১৫ সালে যেভাবে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে মানবাধিকারের চরম লংঘন হয়েছে, আমরা সেগুলো বিশ্ব দরবারে নিয়ে যাচ্ছি। জিয়াউর রহমান যাদেরকে হত্যা করেছিল তাদের পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের কান্না’ ঢাকা-চট্টগ্রামহসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবসহ বিএনপি নেতারা এটির কি জবাব দেবেন আমি জানতে চাই।’
সাংবাদিকরা দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সমালোচনা নিয়ে প্রশ্ন করলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আইরিন খান তারেক রহমানের বেয়াইন অর্থাৎ স্ত্রীর কাজিন। তিনি যখন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেন আবার আরেক দিকে কোনো বেয়াইন থাকলে সেখান থেকে যখন বিবৃতি আসে, আবার অনেক বিবৃতি বিক্রিও হয়, সেইসব বিবৃতির কোন মূল্য নেই।’
বিএনপির সমসাময়িক রাজনীতি প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশের নামে যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় তাহলে সরকার জনগণের নিরাপত্তা বিধানে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং জনগণ যদি প্রতিরোধ গড়ে তোলে আমাদের দলও সাথে থাকবে। আর বিএনপির পাঁচজন সংসদ সদস্যের কেউ পদত্যাগ করলে সেখানে উপনির্বাচন হবে।’
বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে এসময় মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি বিদ্যুৎ না দিয়ে শুধু খাম্বা দিয়েছিল। আর আমরা যখন ২০০৯ সালে সরকার গঠন করি তখন দেশের মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পেতো তাও সবসময় না, বিদ্যুৎ মাঝে মধ্যে আসতো। আজকে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসছে। সুতরাং বিএনপি যখন এ ধরণের কথা বলে, তখন শুধু মানুষ নয়, হনুমানও হাসে।’
মতবিনিময় শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ভার্চুয়াল উপায়ে দিনাজপুর পৌর ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।