মোঃ আলী সোহেল, কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের ৮টি দান সিন্দুকে এবার ১৫ বস্তায় রেকর্ড ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা পাওয়া গেছে।
২ মাস ২৯ দিন পর আজ শনিবার (১ অক্টোবর) সকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও দানবাক্স খোলা কমিটির আহ্বায়ক এ টি এম ফরহাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আটটি সিন্দুক খোলা হয়। টাকা ছাড়াও সিন্দুকে স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গেছে।
এর আগে গত ২ জুলাই পাগলা মসজিদের দান সিন্দুক খুলে ১৬ বস্তায় মোট ৩ কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। এ ছাড়া স্বর্ণালংকার ও বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল আটটায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে মসজিদের আটটি সিন্দুক খোলা হয়। সিন্দুকে পাওয়া টাকাগুলো প্রথমে বস্তায় ভরা হয়। এরপর সেগুলো মেঝেতে ঢেলে গণনার কাজ করা হয়।
রুপালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মোঃ জুয়েল বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রায় তিন মাস পর এবার পাগলা মসজিদের আটটি সিন্দুক খুলে মোট ১৫ টি বস্তার টাকা গণনা করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসনের কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেটসহ পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শওকত উদ্দীন ভূঞা, মসজিদের ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান, রূপালী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম টাকা গণনার কাজ তদারক করেন। গণনায় সহযোগিতা করেছে মাদ্রাসার শতাধিক খুদে শিক্ষার্থী।গণনা শেষে টাকাগুলো রূপালী ব্যাংকে জমা করা হয়েছে।
মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ শওকত উদ্দীন ভূঞা বলেন, এ এযাবৎকালের মধ্যে কম সময়ের ব্যবধানে এবার সবচেয়ে বেশি টাকা জমা পড়েছে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণের যে প্রকল্প নিয়েছে, সেটা দ্রুত শুরু করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম বলেন, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। এ ছাড়া পাঁচ হাজার নারীর জন্য থাকবে আলাদা ব্যবস্থা। তিনি আরও বলেন, পাগলা মসজিদ নিয়ে অনেকে প্রতারণার সুযোগ নিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ জন্য তিনি সবাইকে মসজিদের সিন্দুকে সরাসরি দানের আহ্বান জানান। মসজিদের পক্ষ থেকে বিকাশ, নগদ বা ব্যাংক হিসাবে টাকা নেওয়া হয় না। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গণে নোটিশ টাঙানো হয়েছে।
ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে এ মসজিদটি গড়ে ওঠে। কথিত আছে, খাস নিয়তে এ মসজিদে দান করলে মানুষের মনের আশা পূরণ হয়। সে জন্য দূরদূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ এখানে এসে দান করে থাকেন। মানুষ টাকাপয়সা ছাড়াও স্বর্ণালংকার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্রও মসজিদটিতে দান করে থাকেন।