ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়(ডুয়েট) এ চান্স পেলেন কৃষক মোঃ রেজাউল করিম। সে গতকাল প্রকাশিত ডুয়েট ভর্তি পরীক্ষা ফলাফলে এম এম ই ডিপার্টমেন্টে চান্স পেয়েছে। সেই সাথে মেকানিকেল ডিপার্টমেন্ট এ তৃতীয় অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে। রেজাউল করিম সাধারণ একজন কৃষক পরিবারের সন্তান। তার বাবা ছিলেন একজন কৃষক। ২০১৫ সালে তিনি তার পিতাকে হারান।জীবন যুদ্ধে নেমে আসে অস্থিরতা। কিন্তু লক্ষ্য অসীম তখন কোনো বাধাই তাকে দমাতে পারেনি। বাবার মৃত্যুর পর পড়াশোনা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। সেই কঠিন মুহূর্তে তার বড় ভাই মোঃ আতাউর রহমান পরিবারের হাল ধরেন। তিনিও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।পড়াশোনার পাশাপাশি কৃষিতে আত্মনিয়োগ করেন। ডুয়েট চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী ভাইয়ের সাথে পড়াশোনার পাশাপাশি প্রত্যক্ষভাবে কৃষি কাজে সহযোগিতা করেন। ডুয়েটে চান্স পেয়ে পরিবারের সবার মুখ উজ্জ্বল করেছেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই রেজাউলের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
নিজের চেষ্টায় ও পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণায় অদম্য মেধাবী এ শিক্ষার্থী নিজেকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। কোন বাঁধাই যেন দমিয়ে রাখতে পারেনি রেজাউলের শিক্ষা জীবনের পথ চলাকে।
অদম্য সেই রেজাউল করিম এবার ডুয়েটে চান্স পেয়েছেন। রেজাউল করিম চাঁদপুুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ওটারচর গ্রামের এক আলোকিত সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান। বাবা মরহুম খোরশেদ আলম সরকার পেশায় ছিলেন একজন সাধারন কৃষক ও মা পারভীন বেগম ছিলেন গৃহিনী। পিতামাতা উভয়ই স্বাক্ষর ব্যতিত লেখাপড়া কিছুই জানতোনা।
জানা গেছে, ভাই মোঃ আতাউর রহমান সরকার একজন মাস্টার্স সম্পন্ন করা কৃষি উদ্যোক্তা। রেজাউল করিম বুয়েটে চান্স পাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন মোঃ আতাউর রহমান সরকার। সেই ছোটবেলা থেকেই রেজাউল করিম কে তিনি আগলে রেখেছেন। চার ভাইয়ের মধ্যে রেজাউল দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই তিনি অদম্য মেধাবী ছিলেন। তিনি আউলিয়াবাগ দাখিল মাদ্রাসা থেকে এবতেদায়ী সম্পন্ন করেন। এরপর ওটারচর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি পাশ করেন। এসএসসি পাশ করার পর চাঁদপুর পলিটেকনিক ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করেন। এছাড়াও তিনি শিক্ষাজীবনে সরকারি বিভিন্ন মেধা নির্বাচনী পরীক্ষায় কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল অর্জন করে।
রেজাউল এর সাফল্যের পিছনের গল্প শুনতে গিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্য বেরিয়ে আসে। রেজাউল তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ফেসবুক থেকে ছিলেন অনেকটা দূরে। ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি কালীন সময়ে তিনি এন্ড্রোয়েড মোবাইল থেকে দুরে রয়েছেন।যেদিন বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছিল সেদিনও ছিল না তার কোন এন্ড্রোয়েড মোবাইল। এ ব্যাপারে রেজাউল বলেন, ইন্টারনেটে ফেইসবুকিং ও দীর্ঘ সময় ধরে গেইমস খেলা এগুলো আমাদের কে সাময়িক আনন্দ দেয়। কিন্তু এগুলো থেকে দূরে থেকে আমি যে ডুয়েটে চান্স পেয়েছি এটা আমাকে সারা জীবনের আনন্দ দেবে। তাই আমি ইন্টারনেটের অপব্যবহার থেকে অনেকটাই দূরে ছিলাম।
মতলব উত্তর উপজেলায় একমাত্র ডুয়েটে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী রেজাউলের পরিবারে বইছে আনন্দের বন্যা। উপজেলার একমাত্র শিক্ষার্থী হিসেবে ডুয়েটে চান্স পাওয়ায় পুরো উপজেলার সচেতন মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিনন্দন জানাচ্ছেন তাকে।
রেজাউল বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হওয়ার। আর সেই লক্ষ্যে আমি লেখাপড়া নানা টানাপোড়ানোর মধ্য দিয়ে চালিয়ে গিয়েছি।ডুয়েটে চান্স পেয়ে সত্যিই খুব ভালো লাগছে।সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, আমি যাতে একজন আদর্শবান প্রকৌশলী হয়ে আমাদের দেশের কল্যাণে কাজ করতে পারি।
রেজাউল এর যে প্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক সম্পন্ন হয়েছিল সেই প্রতিষ্ঠান প্রধান বলেন,আমাদের একজন মেধাবী ও পরিশ্রমি শিক্ষার্থী ডুয়েটে চান্স পেয়েছে। তার সাফল্যে সত্যিই আমরা গর্ববোধ করছি।
বড় ভাই আতাউর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই রেজাউল লেখাপড়ায় ছিল অদম্য মেধাবী। পড়াশোনার পাশাপাশি সে আমার কৃষি প্রজেক্টে কাজ করে আমাকে সহযোগিতা করেছে। অবশেষে আমাদের পরিবারের সকলের প্রচেষ্টা, অনুপ্রেরণা ও সর্বোপরি রেজাউলের নিজ প্রচেষ্টায় সে ডুয়েটে চান্স পেয়েছে।।