কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের এক সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটসহ উল্টো ওই সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. শিল্পী পারভীন (৪৫) অভিযোগ করে বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে তার স্বামীসহ তিনি বাড়িতে ছিলেন না। নিজ দায়িত্ব পালন করতে তিনি গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়ন পরিষদে ছিলেন। তার স্বামী মো. আবুল কালাম (৫০) পার্শ্ববর্তী কটিয়াদি উপজেলার লোহাজুরী ছিলেন। হঠাৎ ওই সময় তাদের গ্রামের বাড়ি দশকাহুনিয়া থেকে বেশ কয়েকজন ব্যক্তি ফোন করে তাকে জানান পার্শ্ববর্তী গোবরিয়া শ্বশানী পাড়ার লোকজন তাদের বাড়িতে হামলা করে ভাংচুর ও লুটপাট করছে। এ খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থানরত গোবরিয়া আব্দুল্লাহপুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা বিট পুলিশিং অফিসার কুলিয়ারচর থানার এস আই মো. মামুন, ২জন কনস্টেবল ও ২জন ছকিদারকে তার গ্রামের বাড়ি দশকাহুনিয়া চৌধুরী বাড়িতে পাঠান। এস আই মামুন ঘটনাস্থলে গিয়ে হামলাকারীদের ঘটনাস্থলে পেয়ে প্রথমে একটি ভিডিও করেন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে হামলাকারীরা তাদের বসতঘরসহ তিনটি ঘর ও আসবাবপত্র ভাংচুর করে ঘরে থাকা নগদ টাকাসহ স্বর্ণালংকার লুটপাট করে প্রায় দশলাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির করে। শিল্পী পারভীন এস আই মামুনের ধারণকৃত ভিডিও দেখে হতবাক হয়ে যান এবং হামলাকারীদের চিনতে পারেন। কেন, কি কারনে গোবরিয়া শশ্বানী পাড়া গ্রামের অধিকাংশ লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শিল্পী পারভীনের বাড়ীঘর ভাংচুর ও লুটপাট করেছে তার কারণ তাৎক্ষণিক জানতে পারেননি। পরে শুনতেপান একটি মেয়েকে ইভটিজিং করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন দুপুরে পার্শ্ববর্তী বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাজারে বাবুল হেয়ার স্টাইল সেলুনে শিল্পী পারভীনের ভাসুর আবু সিদ্দিকের ছেলে আসিফ মিয়া (২০) ও দশকাহুনিয়া সাদিরের বাড়ির রফিক মিয়ার ছেলে আল আমিন (২২) এ সহিত গোবরিয়া শ্বশানী পাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল কাদিরের ছেলে আসাদুজ্জামান নয়ন (২৫) এর মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই দিন দুপুরে গোবরিয়া শ্বশানী পাড়ার লোকজন প্রথমে দশকাহুনিয়া আব্দুলের বাড়িতে ক্রয়কৃত তার বাসুর আবু সিদ্দিকের বাসাবাড়িতে হামলা করে ভাংচুর করে। এ সময় স্থানীয় মাতাব্বর এস.এম সেলিম হায়দার বাচ্চু ও মাতব্বর ছেনু মিয়া লোকজন নিয়ে মিরছি মিয়ার বাসাবাড়ি ভাংচুর করতে বাঁধা নিষেধ দিলে হামলাকারীরা ওই স্থান ত্যাগ করে চলে যায়। পরে দুপুর দেড়টার দিকে শিল্পী পারভীনের বাড়িতে গিয়ে বাড়ীঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করে।
হামলার পরদিন বিকালে আসিফের খালা পিরিজপুর ইউনিয়নের ১,২ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য মোছা. রেহেনা আক্তার (শিল্পী) কে পিরিজপুর বাজারে পেয়ে গোবরিয়া শ্বশানী পাড়ার কয়েকজন লোক তাকে অপমান অপদস্ত করার চেষ্টা করে। এসময় রেহেনা আক্তার লোকজন নিয়ে প্রতিহত করলে খবর পেয়ে শ্বশানী পাড়া লোকজন মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আরো লোকজন নিয়ে দেশীয় অস্ত্রাদীসহ পিরিজপুর বাজারের দিকে আসতে থাকলে পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের বাঁধার মুখে পরে রাস্তা থেকে ফিরে যান তারা। এ নিয়ে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে।
হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনার পরদিন গত ১৬ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ইউপি মহিলা সদস্য মোছা. শিল্পী পারভীন বাদী হয়ে গোবরিয়া শ্বশানী পাড়া গ্রামের চিহ্নিত ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে ১০০/১৫০ জন অজ্ঞাত নামা ব্যক্তির নামে কুলিয়ারচর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। লিখিত অভিযোগ দাখিল করার ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও থানা পুলিশ অভিযোগটি এফ.আই.আর না করায় হামলাকারীদের ভয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতংকে দিনাতিপাত করছেন দাবী করে শিল্পী পারভীন বলেন, হামলাকারীরা ঘরে থাকা পানি খাওয়ার একটি গ্লাসও আস্ত রাখেনি, হাঁড়ি পাতিলসহ সব ভাংচুর করে নষ্ট করে দিয়েছে। এ ঘটনার পরও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি উল্টো তার স্বামীর নামে হামলাকারীদের পক্ষের মো. ফরহাদ মিয়া (৩১) বাদী হয়ে গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাজিতপুর থানায় দাখিল করা মারামারি মামলায় (মামলা নং-১৫) শিল্পী পারভীনের স্বামী আবুল কালাম-কে ৩ নম্বর আসামী করেছে। হয়রানীর উদ্দেশ্যে হামলাকারীরা পরিকল্পিত ভাবে তার স্বামীর নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে মামলা করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান সংরক্ষিত ইউপি মহিলা সদস্য মোছা. শিল্পী পারভীন।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর বাজিতপুর থানায় দাখিলকৃত মারামারি মামলা নং-১৫ এর বাদী গোবরিয়া শ্বশানী পাড়া গ্রামের মো. ফরহাদ মিয়া (৩১) তার অভিযোগ লিপিতে উল্লেখ করেন, সেলুনে চুল কাটার সিরিয়াল নিয়ে ও পূর্ব আক্রোশে জেরে বাবুল রবি দাসের হেয়ার কার্টিং সেলুনের ভিতর তার ছোট ভাইয়ের সাথে আসামীদের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে তার ছোট ভাইকে এলোপাতারি মারপিট করিয়া খুর দিয়ে একাধিক পোঁছ মারে। মামলায় আসিফ মিয়া (২২), আবু সিদ্দিক ওরুফে মিরছি মিয়া (৫৫), আবুল কালাম (৫২) ও আলামিন (২২) কে আসামী করেন।
রোববার ১৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে মারামারির ঘটনাস্থলে গিয়ে সেলুন মালিক বাবুল রবি দাসের সাথে কথা হলে তিনি বলেন বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি সেলুনে কাজ করছিলেন। এ সময় তার সেলুনের ভিতর নয়নের সঙ্গে আসিফের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহতির ঘটনা ঘটে। পরে এদের মধ্যে একজন একটি ছোট্ট চাকু দিয়ে নয়নকে কয়েকটি আঘাত করে। ফিরাতে গিয়ে রতন নামে এক ব্যক্তির হাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। চুল কাটার সিরিয়াল নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে কি না এবং খুর দিয়ে নয়নকে আঘাত করেছে কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন “না”। এসময় আসিফের চাচা আবুল কালাম ঘটনাস্থলে ছিল কি না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন আবুল কালামকে তিনি দেখেননি।
শিল্পী পারভীনের অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।