বিভিন্ন দূর্নীতিতে সময়ের সমালোচিত ব্যক্তি প্রিন্সিপ্যাল মোঃ দেলোয়ার হোসেন।
তিনি শাহরাস্তি উপজেলার প্রবীণতম ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভোলদিঘী কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যালের দায়িত্ব পালন করছেন।
ইতোমধ্যে তার এহেন দূর্নীতি ও আচরণগত সমস্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বহুবার বিরুপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তার নানামুখী অনিয়ম ও দূর্নীতির মধ্যে অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়া বিধবা আফরোজা বেগমকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করা।
জানা যায়, নামে মাত্র নিয়োগ পাওয়া আফরোজা বেগম প্রিন্সিপ্যাল দেলোয়ার হোসেনের সম্পর্কে আপন শালিকা। তাকে উপজেলার নাহারা বড় বাড়ির জাকির হোসেন ওরফে জিকিরের সাথে শরাশরীয়ত মোতাবেক বিবাহ প্রদান করা হয়। বিবাহের পর জিকির প্রবাসে চলে যায়। বেশ কয়েক বছর প্রবাসে থাকাবস্থায় তিনি অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।
অসুস্থ্যতা নিয়ে দেশে আসলে গত ২২ জুলাই ২০২১ইং তারিখে জিকির মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যু কালে এক মেয়ে খাদিজাতুল মারিয়া (১৩), এক ছেলে নেহাল আদনান খালিদ (৪ মাস ৭ দিন) ও স্ত্রী আফরোজা বেগমকে রেখে যান। বর্তমানে নেহাল আদনান খালিদের বয়স ১৮ মাস (প্রায়)।
আর আফরোজার স্বামী মৃত্যু বরণ করেছেন ১৪ মাস (প্রায়)।
আফরোজার স্বামীর মৃত্যুর পর প্রিন্সিপ্যাল দেলোয়ার হোসেন ভোলদিঘী কামিল মাদ্রাসায় আফরোজাকে আয়া পদে নিয়োগ প্রদান করেন এবং গত ২ আগষ্ট-২০২২ইং তারিখে বিধবা আফরোজাকে রেজুলেশন করে ৬ মাসের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জু করেন।
এবিষয়ে আফরোজা বেগম বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর পিতা পরিবারের সাহায্যে ২ সন্তানকে নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছি। সাংবাদিক এর এক প্রশ্রের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমি কোনো চাকুরী করিনা। আশপাশের লোকজনের কাপড় সেলাই করে যে আয়টা করি তা দিয়ে কোন মতে আমার সংসার চলে। এছাড়া আমি বিধবা মানুষ। মানুষের অপবাদের ভয়ে ঘর থেকে অপ্রয়োজনে কোথাও যাই না। ওনার বিষয়ে এধরনে অপপ্রচার কিংবা অপবাদ তোলা জঘন্য অপরাধ বলে তিনি মনে করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বলেন, বিগত ২ বছরে আফরোজা নামে কোনো আয়াকে আমরা দেখিনি বা চিনি না। কি ভাবে এই আয়ার চাকুরী হলো বা কে দিলো এটাও জানিনা।
মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মাওলানা আবদুল মোমিন ফারুকী বলেন, আমি ২০২২ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। কিছু দিন আগে মাদ্রাসার মিটিংয়ে আয়ার ব্যাপারে কথা হয়। এসময় মাদ্রাসার প্রিন্সিপ্যাল দেলোয়ার হোসেন জানান, আয়ার বাচ্চা হয়েছে তাই তাকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি মঞ্জুর করতে হবে। এবিষয়ে করা রেজুলেশনে স্বাক্ষর করে আয়াকে ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রদান করা হয়েছে। যাতে আমি নিজেও স্বাক্ষর করি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আয়া সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা এবং কখনও তাকে দেখিনি। প্রিন্সিপ্যালের চলা, বলা এবং দৈনন্দিন কর্ম আমার পছন্দের নয়। তাই আমি সভাপতির পদ থেকে ইস্তেফা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। যেখানে প্রিন্সিপ্যালকে নিয়ে এতো সমালোচনা সেখানে তিনি নিজেকে জড়াতে চাই না বলে জানান।
এবিষয়ে প্রিন্সিপ্যাল দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি প্রতিবারই কারও না কারও প্রতিপক্ষের শিকার হই। আমাকে ফাঁসাতে একটি চক্র উঠে পড়ে লেগেছে। আমাকে তারা আগেও কিছু করতে পারেনি এখনও কিছু করতে পারবেনা। আমি আমার মত করেই মাদ্রাসাটি চালাচ্ছি। আমার সকল সুকর্মে তারা ঈশ্বানীত হয়ে বিরোধিতা করছে।
এলাকাবাসী বলেন, আমাদের প্রাণের এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধংস করে দিয়েছে এই প্রিন্সিপ্যাল দেলোয়ার। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ব্যক্তিতন্ত্রে পরিচালিত হচ্ছে। তার হাজারও অন্যায় ও দূর্নীতির মাঝখানে অসহায়ের রূপ ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে উপজেলার সর্বোচ্চ ডিগ্রী প্রদানকারী এই ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। শিক্ষক ও শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণ, অশ্লীল ভাষায় কথা বলা, কর্মচারীদের গায়ে হাত তোলা, এতিমখানা নামে সরকারী অর্থ আত্মসাৎ, বিভিন্ন পরীক্ষা, শিক্ষার্থীদের বেতন ও বিবিধ খাত থেকে উত্তোলিত অর্থ শিক্ষকদের মাঝে বিতরণ না করা এবং সরকারী নানান খাত থেকে দান অনুদান ব্যক্তিগত তহবিলে গচ্ছিত করা। তারা আরও বলেন, একের পর এক যেভাবে তিনি দূর্নীতি ও অনিয়ম করে যাচ্ছেন তাতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড ও শিক্ষার গুনগত মান প্রতিনিয়ত ধংসের দ্বার প্রান্তে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে হলে এমন দূর্নীতিবাজ প্রিন্সিপ্যালকে অপসারণ করা একান্ত প্রয়োজন। তাই স্থানিয় সংসদসদস্য, সংশ্লিষ্ট প্রসাশন ও এলাকার সুধীজনকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানান তারা।