নওগাঁ জেলা মহাদেবপুরে উপজেলা ১০ নং ভীমপুর ইউনিয়নে চকগৌরীর হাটে চড়া সুদ কারবারি ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণের টাকা সময় মতো দিতে না পেরে ঋণের “টাকা” গ্রহীতা আদিবাসি পরিবারের এক যুবক গ্যাসবড়ি পানে আত্নহত্যা করেছেন। এর জন্য শোধকারবারী দায়ী বলে জানান এলাকাবাসী।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে প্রাথমিক সুরত হাল রির্পোট অন্তে মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক রবিবার ২৮ শে আগষ্ট বিকালে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করেছেন।
এ আত্নহত্যার ঘটনাটি ঘটেছে নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের পিড়া গ্রামের আদিবাসি পল্লীতে।
নিহতের স্বজনসহ স্থানিয়রা এ প্রতিবেদককে জানান, ভীমপুর ইউনিয়নের পিড়া গ্রামের আদিবাসি পল্লীর মৃত বয়তুন পাহানের ছেলে নিমাই পাহান (২৯) পরিবারে আর্থিক সংকটে পড়ে প্রথমে চকগৌরীহাট এলাকার জৈনক লিটন নামের এক চড়া সুদ কারবারির কাছ থেকে প্রতি সপ্তাহে ১২শ’ টাকা লাভ দেওয়ার শর্তে ১২ হাজার টাকা গ্রহণ করেন। টাকা গ্রহণের পর একদিকে দু’ সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে ও অপরদিকে প্রতি সপ্তাহে চড়া সুদের লাভ ১২ শ’ টাকা দিতেগিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন নিমাই পাহান। পরবর্তীতে চড়া সুদের উপর নেওয়া লাভের টাকা ও সংসার চালাতে গিয়ে নিমাই পাহান একের পর এক চড়া সুদ কারবারিদের ফাঁদে পড়েন এবং সুদ কারবারিদের শুধু লভাংশের টাকা দিতেগিয়ে নিমাই পাহান ও তার স্ত্রী একাধীক এনজিও থেকে সাপ্তাহিক কিস্তির উপর টাকা তুলে চড়া সুদ কারবারিদের দেন এবং নিমাই পাহান লেবার হিসাবে কাজ করে এনজিওর সাপ্তাহিক কিস্তি দিয়ে আসাকালে বেশকিছু দিন ধরে চড়া সুদ কারবারিদের সুদের লভাংশের টাকা দিতে না পাড়ায় চড়া সুদ কারবারি ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা নিমাই পাহানকে টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। সর্বশেষ গত শনিবার চকগৌরী এলাকার লিটন, আজাদ ও শ্যামা নামের ৩ জন চড়া সুদ কারবারি নিমাই পাহানকে লভাংশের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে নিমাই পাহান দিশেহারা হয়ে ঐদিনই তার স্ত্রী সকালী রানী পাহান (২৬) কে স্ত্রীর বোনের বাড়ি থেকে “ধার” হাওলাত হিসাবে টাকা আনতে পাঠান। স্ত্রী সকালী রানী পাহান তার বোনের বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে বাড়িতে আসার পূর্বেই আবারো চাপ প্রয়োগ করার কারনে নিমাই পাহান হতাশাগ্রস্থ হয়ে গ্যাসবড়ি পান করে অসুস্থ হলে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসেন। এসময় নিমাই পাহান গ্যাসবড়ি খাওয়ার ঘটনাটি প্রকাশ করলে প্রতিবেশীরা নিমাই পাহানকে চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতাল নেওয়ার পরই সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃতদেহ রাতে গ্রামে আনার পর ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে মৃতদেহটি উদ্ধার পূর্বক ময়না তদন্ত শেষে রবিবার বিকালে স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করেন।
এব্যাপারে নিহতের স্ত্রী, সকালী রানী পাহান বলেন, সুদারু লিটন ও আজাদ টাকা নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়ার কারনে স্বামী নিমাই পাহান আমাকে আমার বোনের বাড়ি থেকে ধারের টাকা আনতে পাঠান, আমি বোনের বাড়ি থেকে নিজ বাড়িতে না পৌছাতেই ফের আমার স্বামীকে চাপদিলে সুদারুদের চাপের কারনে সে গ্যাসবড়ি খেয়ে আত্নহত্যা করেন।
এব্যাপারে আদিবাসি নেত্রী রেবেকা সরেন বলেন, নিমাই পাহানের মৃত্যুর ঘটনাটি কষ্ট দায়ক। নিমাই পাহান যাদের কারনে আত্নহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন তাদের বিচারের আওতায় আনতে প্রশাসনের আশু পদক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আদিবাসি যুবকের মৃত্যুর খবর পেয়ে উর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও আমি নিজেসহ থানার ওসি (তদন্ত) ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করা হয়েছে। মৃতদেহ উদ্ধার পূর্বক নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়ে ময়না তদন্ত শেষে সৎ কাজের জন্য স্বজনদের কাছে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে, পাশাপাশি ঘটনা উদর্ঘাটনে পুলিশ তৎপর রয়েছে। তবে ময়না তদন্তের রির্পোট হাতে আসার পরই মৃত্যুর সঠিক কারন জানা যাবে বলেও জানিয়েছেন ওসি।