দায়সারা পড়ালেখা না করে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হয়ে উঠতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অনেকে শুধু কোনো রকম ঘষে-মেজে বিএ, এমএ পাস করেই চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়।
শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়াশোনা না করে নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে।
রোববার (৩১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভর্নিং বোর্ডের প্রথম সভা’র সূচনা বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন শুধু বিএ, এমএ পাশ করে লাভ নেই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল ও কলেজ, যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।
সরকার প্রধান বলেন, আম’রা দেখেছি অনেকেই কোনো মতে ঘষে মেজে বিএ, এমএ পাস করেই চাকরির পেছনে ছুটে বেড়ায়। এ সময় সিআরআই ও ইয়াং বাংলার কথা উল্লেখ করে তাদের উৎসাহিত করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আম’রা চাই আমাদের দেশের প্রতিটি যুব সমাজ সুদক্ষ কারিগর হিসেবে গড়ে উঠুক। শুধুমাত্র নিয়মমাফিক একটা পড়াশোনা করা নয় প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল ও প্রযু’ক্তির যুগে শিক্ষার্থীরা যেন দক্ষতা নিয়ে সমাজে নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে পারে, সিটই আমাদের লক্ষ্য। আম’রা চাই শুধু আমাদের নিজের দেশে না আন্তর্জাতিক পর্যায়েও কর্মক্ষম যুবকরা যেন যথাযথ প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারে। যার যে মেধা আছে, দক্ষতা আছে সেটাও যেন বিকশিত হতে পারে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ইয়াং জেনারেশনকে ‘আমা’র কাজ আমি করে খাবো; দরকার হলে চাকরির পেছনে না ছুটে নতুন চাকরি দেব’ এভাবেই উৎসাহিত করে যাচ্ছি। আমাদের যুব সমাজকে সেটাই অনুধাবন করাতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এ পদক্ষেপ। সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যবস্থা নিলে আরও কার্যকর হবে।
যত বেশি দক্ষ জনশক্তি গড়া যাবে, দেশে যেমন কাজে লাগবে; বিদেশেও কাজে লাগানো যাবে। আম’রা চাই আমাদের দেশটা এগিয়ে যাক।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে অনুকূল জনমিতিক সুবিধা ভোগ করছে, যা আগামী ২০৩৩ সাল পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। প্রতি বছর ২২ লাখ কর্মক্ষম যুবগোষ্ঠী শ্রমবাজারে যু’ক্ত হচ্ছে। তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলা সম্ভব না হলে এ জনমিতিক সুবিধাকে জনমিতিক লভ্যাংশে রূপান্তর করা সম্ভব হবে না। তাই এ সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে রূপকল্প ২০৪১ এ পৌঁছানোর পথ সুগম করতে হবে। সেই পথেই বাংলাদেশ যেন এগিয়ে যায়।
বিভিন্ন দেশের শ্রম বাজারে দক্ষ জনশক্তির চাহিদার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক দেশ এখন বয়োবৃদ্ধের দেশে পরিণত হয়ে গেছে। সেখানে আমাদের বড় বিষয় হলো আমাদের বিশাল আকারে যুব শ্রেণি আছে। কাজেই আম’রা চাই শ্রম বাজারে যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে সেই সাথে উপযু’ক্তভাবে নিজেদের গড়ে তুলবে। শুধু শ্রম বাজার না, শ্রম শিল্প সব দিক থেকেই। আমি মনে করি বিশ্ব একটা গ্লোবাল ভিলেজ, কাজেই সব দিকেই উন্মুক্ত হচ্ছে। সেখানে আমাদের অনেক কর্মী বিদেশে কাজও করে। তাদেরকে আম’রা চাই দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে।
দক্ষতা সনদ এবং দেশে-বিদেশে দক্ষতা মেলা আয়োজন করার কথা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, দক্ষ জনবল তৈরি হয়েছে বা সম্ভাবনা রয়েছে তা নিয়ে দেশে ও বিদেশে দক্ষতা মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। দক্ষতা সনদায়নের ক্ষেত্রে একক সনদায়নের ব্যবস্থা প্রবর্তন ও কার্যকর করতে হবে, যা বিদেশে বাংলাদেশের দক্ষতার ব্র্যান্ডিং হিসেবে কাজ করবে এবং বিদেশের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করবে।
পণ্য বহু’মুখীকরণ, রপ্তানি বৃদ্ধি এবং দেশে-বিদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষেত্র তৈরি করতে চাই। জনগণকে আম’রা উৎসাহিত করতে চাই। আম’রা যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি শুধুমাত্র রেমিট্যান্সের ওপর নির্ভর করলে হবে না। আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। উৎপাদন বহু’মুখী করতে হবে। রফতানির বাস্কেটও আমাদের বাড়াতে হবে।