“দারিদ্রতা কখনো বাঁধা হতে পারেনা, যদি লক্ষ্য থাকে অটুট” এটি আরো একবার প্রমাণ করলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার সিংরইল ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের হতদরিদ্র রিকশাচালকের মেয়ে মোছাঃ সুমাইয়া আক্তার। তিনি বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র মুজিব শতবর্ষের সারাদেশব্যাপী “পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই, সোনার মানুষ হই, প্রতিযোগিতায় আলোর ভূবন পাঠাগারের প্রতিনিধি হয়ে (খ) বিভাগের বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। জাতীয় পর্যায়ে সুমাইয়ার এমন কীর্তি অর্জনে এলাকাবাসী খুব আনন্দিত।
গত মঙ্গলবার (২১জুন) ঢাকা সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমিতে দিনব্যাপী এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুমাইয়া তার কীর্তির পুরস্কার গ্রহন করেন। পুরস্কার হিসাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সনদপত্র, নগদ পাঁচ হাজার টাকার চেক ও সমমূল্যের বই প্রদান করা হয়। ক. খ. গ এই বিভাগের দুই হাজার প্রতিযোগীদের অংশগ্রহীদের মধ্যে সুমাইয়া (খ) বিভাগে ১ম স্থান অর্জনের পাশাপাশি সিংরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র গুরু দয়াল কলেজের আশিকুজ্জামান রাসেল (গ) বিভাগে ২য় স্থান অর্জন করেছেন।
পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি হিসাবে জানতে চাইলে সুমাইয়া বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি পড়ে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারি। প্রথমে আমি অংশগ্রহণ করতে ভয় পেলেও পাঠাগারের সভাপতি ফাইজুল ইসলাম ভাই আমাকে উৎসাহ দিয়ে অংশগ্রহণ করায়। বইটি আমি বার বার পড়ে রচনা লিখে জমা দেওয়ার পর আমি (খ) বিভাগ ১ম স্থান অর্জন করি। আমি ঢাকা থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছি এতে আমার খুব ভালো লাগছে ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতে এরকম প্রতিযোগিতা হলে আমি অংশগ্রহণ করে আরও ভালো করার চেষ্টা করবো। আমি পড়াশোনা করে এলাকার ও বাবা-মার মুখ উজ্জ্বল করতে চাই।
দরিদ্র রিকশাচালক সুমাইয়ার বাবা আরজ আলী বলেন, আমি রিক্সা চালিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাই। আমার দুই ছেলে তিন মেয়ে। ছেলেমেয়ের সবাইকে কষ্ট করে হলেও পড়ালেখা করানোর চেষ্টা করছি। সুমাইয়া দশম শ্রেনীতে পড়ছে। আমার মাত্র এক শতক জমিতে বাড়ি আছে, অতি কষ্টে আমি জীবন যাপন করি। ঠিকমতো স্কুলের বেতন দিতে পারিনা। প্রাইভেটে শিক্ষকরা কখনো আমার কাছ থেকে আমার ছেলে মেয়েদের পড়ানোর টাকা পয়সা নেয় না। আমার মেয়ে ঢাকা থেকে পুরস্কার পেয়েছে জেনে আমি এবং আমার পরিবার খুব খুশি। আমি অনেক আনন্দিত,সুমাইয়াকে নিয়ে অনেক বড় স্বপ্ন দেখি। আমার মেয়ে যেন ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে দেশের সেবা করতে পারে সে জন্য আমার মেয়ের জন্য সবাই দোয়া করবেন।
সিংরইল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীন বলেন, মেয়েটি আমাদের বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী। প্রতিটি ক্লাসে সুমাইয়া প্রথম হয়। সে একটি জাতীয় প্রতিযোগিতা বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে তার এই অর্জনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সবাই আনন্দিত ও গর্বিত। সিংরইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ আলম বলেন, মেয়েটি ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত মেধাবী সে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে পুরস্কৃত হয়।
বই পড়া আন্দোলন নান্দাইলের সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল বলেন, পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই সোনার মানুষ হই” পাঠ ও রচনা প্রতিযোগিতা আলোর ভুবন পাঠাগারের ১০ জন পাঠক অংশগ্রহণ করে দুইজন বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে। এরকম জাতীয় প্রতিযোগিতা পুরস্কার পাওয়ায় আমি অভিনন্দন জানাই। নান্দাইল উপজেলায় হক ফাতেমা পাঠাগার সহ প্রত্যেকটি পাঠাগার এরকম প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা বই পড়া আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর উপর আন্তঃ প্রতিযোগিতার আয়োজন করব।
সিংরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার ইউনিয়নের আরজ আলীর মেয়ে রচনা প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করে সে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম পুরস্কার পাওয়া আমরা সিংরইলবাসী গর্বিত। আলোর ভুবন পাঠাগারের সকল কর্মসূচীতে আমি সশরীরে অংশগ্রহণ করি, পাঠাগারের বিভিন্ন কর্মসূচি অত্যন্ত প্রশংসিত। বিশিষ্ট সামাজ সেবক শাহাবুদ্দিন খান কায়সার বলেন, সুমাইয়া এত কষ্ট করে পড়ালেখা করে এতবড় অর্জন করে প্রমাণ করে দিলো যে, দারিদ্র্যতা কোন বাঁধা নয়।
সিংরইল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ ছাইদুল ইসলাম বলেন “পড়ি বঙ্গবন্ধুর বই সোনার মানুষ হই” কর্মসূচির উদ্বোধন করেছিলাম বিভাগীয় পর্যায়ে দুইজন পুরস্কৃত হয়েছে আমি তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধু রচিত বইগুলো পড়তে হবে আলোর ভুবন পাঠাগারে বঙ্গবন্ধু মুজিব কর্নারে অসংখ্য বই আছে। সবাই আসুন, বঙ্গবন্ধু বই পড়ুন, বঙ্গবন্ধুকে জানোন। বর্তমান ইউপি সদস্য মোঃ আবুল বাশার বাচ্চু বলেন, প্রতিযোগিতায় পুরস্কৃত হয়ে আরজ আলীর মেয়ে এবং লাল মিয়ার ছেলে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ঢাকাস্থ নান্দাইল উপজেলা কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ মাসুদ রানা বলেন, আলোর ভুবন পাঠাগার দেশ-বিদেশে অনেক প্রশংসা পাচ্ছে, পুরস্কার প্রাপ্তদের অভিনন্দন জানাই।
পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদকঃ মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন আমরা চেষ্টা করছি আলোর ভুবন পাঠাগারের কার্যক্রম সারা নান্দাইল ছড়িয়ে দিতে। পাঠাগারের কার্যক্রম বিভিন্ন মহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়ে আসছে আমরা পাড়ায় পাড়ায় পাঠাগার স্থাপন করছি। মানুষের হাতের নাগালে বই পৌঁছে দেয়ার জন্য নানা কর্মসূচি আমরা গ্রহণ করছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
পাঠাগারের সভাপতি ফাইজুল ইসলাম বলেন, আমাদের পাঠাগারকে “পড়ি বঙ্গবন্ধু বই সোনার মানুষ হই” প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। এমন সুন্দর আয়োজনের জন্য সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুল মনসুর আহমেদ স্যার জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মুনসুর স্যার সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দুইজন পাঠক বিভাগীয় পর্যায়ে পুরস্কৃত হয়েছে। এ অর্জন আলোর ভুবন পাঠাগার পরিবারের, এই অর্জন সিংরইল ইউনিয়নের ও নান্দাইলবাসীর।