লক্ষ্মীপুর জেলাতে একজন ইউপি সচিবের সাথে একজন সেবা গ্রহীতার লেনদেনকৃত ঘুষের ভিডিও প্রকাশ করায় এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছে ওই ইউপি সচিব।
গত ১৫ জুন চট্রগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলাটি দায়ের করেন লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চর বাদাম
ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফিরোজ আলম। এতে বিবাদী করা হয় লক্ষ্মীপুরের সাংবাদিক মো. তাসকিন হোসেন রবিনকে। মামলায় ২০১৮ইং সালের ডিজিটাল নিরপত্তা আইনের ২৯ ধারা উল্লেখ করা হয়। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১৪ আগষ্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।
সাংবাদিক তাসকিন হোসেন রবিন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দিতে তার নামে হয়রানিমূলক মামলাটি করেছে ইউপি সচিব ফিরোজ আলম।
এই দিকে মামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকদের মাঝে প্রতিবাদের ঝড় বইছে। অনিয়মের ভিডিও প্রকাশ করায় তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলাটি করা হয়েছে বলে দাবি করেছে লক্ষ্মীপুরের সংবাদকর্মীরা।
রবিন Lakshmipur News 24. Net নামে একটি ফেজবুক পেজের এডমিন। সম্প্রতি তার পেজে ইউপি সচিব ফিরোজ আলমের একটি ভিডিওচিত্র পোষ্ট করেন তিনি। এর সূত্র ধরে জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ারা হোসাইন আকন্দ সচিব ফিরোজ আলমকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ভিডিও চিত্রে দেখানো ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি তদন্ত কাজ চলছে।
সচিব ফিরোজ সাইবার ট্রাইব্যুনালে দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করেন, রবিন Lakshmipur News 24. Net নামীয় একটি পেজবুক পেজে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এতে তার সন্মান ক্ষুন্ন হয়েছে। ভিডিওটি ঘুষ লেনদেনের ভিডিও নয়, পরিষদের খালি বস্তা বিক্রির জন্য তিনি একজনের সাথে ৫ হাজার টাকা লেনদেনের কথা বলেছেন। সেটাকে জন্মনিবন্ধনের সনদের জন্য ঘুষ গ্রহণের কথোপকথন হিসেবে প্রকাশ করেছে। এতে তাকে সচিবের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
অন্যদিকে জন্মনিবন্ধনে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে ভোক্তভোগী প্রবাসী আনোয়ার হোসেন জানান,৩ মাস ইউনিয়ন পরিষদে ধন্য দিয়ে সচিবকে ৫ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে জন্মনিবন্ধন নিতে হয়েছে, এতে ৫ শত টাকা কম দিলে সচিব দাবী করে এগুলো তিনি ভক্ষন করবে না উধ্বর্তন কর্মকর্তারা নিবেন। এভাবে এই সচিব আমার থেকে না অনেক মানুষ থেকে ৫,১০ হাজার টাকার দিয়ে জন্মনিবন্ধন সহ সরকারি সেবা প্রদান করে সরকারের মান ক্ষুন্ন করছে।
প্রবাসী ভোক্তভোগী আনোয়ার আরো জানান,যে সাজানো মামলাটি দিয়ে সাংবাদিক ভাইকে হয়রানি করছে, তা সম্পূর্ন মিথ্যা। আমি কোনো বস্তার ব্যবসায়ী না, আর বস্তা কিনতে গেলে মেম্বারের স্বাক্ষর, চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর লাগবে কেন,তাছাড়া তিনি বলেছেন রাতে হোয়াসএপে পাঠিয়ে দিবেন, বস্তা কি হোয়াসএপে পাঠানো যায়।
সাংবাদিক তাসকিন হোসেন রবিন বলেন, যে ব্যক্তির কাছ থেকে ইউপি সচিব ফিরোজ ঘুষ নিয়েছেন, ওই ব্যক্তি টাকা লেনদেনের ঘটনাটি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গোপনে ভিডিও ধারণ করে রেখেছেন। ওই ব্যক্তির নামে জন্মসনদ প্রস্তুতের জন্য সচিব ফিরোজ আলম ৫ হাজার টাকা দাবি করেছেন। ভিডিওতে সে কথোপকথন রেকর্ড করা আছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি ভিডিওটি আমাকে সরবরাহ করেন। পরে ভিডিওটি আমার পেজে প্রকাশের পর তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যলয় থেকে তাকে সচিব পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এ জন্য সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলাটি দায়ের করেছেন।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ মে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে সচিব ফিরোজ আলমকে বরখাস্তের আদেশ দেন। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) কমর্চারী চাকুরী বিধিমালা ভঙ্গের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, একজন সেবা গ্রহীতা জন্ম নিবন্ধন করে দেওয়া জন্য তার কাছে গেলে তিনি ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। ওই সেবা গ্রহীতা কিছু কম টাকা নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্ত তিনি কম না নিয়ে উল্টো বলছেন, ‘ওই টাকা তিনি শুধু একা নেন না। আরো উপরের লোকজনকে দিতে হয়।’
দেখা গেছে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলার পর থেকে লক্ষ্মীপুর সাংবাদিক মহলের মধ্যে স্যোসাল মিডিয়ায় ব্যাপক তীব্রনিন্দা জানাতে দেখা গেছে।
এই দিকে লক্ষ্মীপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সহ সভাপতি ও দেশ রুপান্তরের জেলা প্রতিনিধি এমজে আলম ও সময় সংবাদ লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি সোহেল হোসেন, সহ মামলার বিষয়ে তীব্রনিন্দা জ্ঞাপন করে বলেন,সাংবাদিকরা সত্যের পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করায় মামলা দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না। অবিলম্বে এই মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানায়।
লক্ষ্মীপুর রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি জহির উদ্দিন,ও লক্ষ্মীপুর নিউজের মামলার ঘটনার বিষয়ে তীব্রনিন্দা জানান,এবং মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
জানা যায়, ফিরোজ ২০১৫ইং সালের ১ মার্চ চর বাদাম ইউনিয়ন পরিষদের সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌরসভার আবিরনগর গ্রামের আবদুল মালেকের পুত্র।