সেদিন তুমি ছিলে’
বাবা সেই সকাল কোথায় হারিয়ে গেলো?
যেখানে তুমি ছিলে?
তুমি অকালে ঝরে গেলে। সুখ দিতে পারিনি কিছুই,
,দিয়েছি শুধু দুঃখ।
আর কী কখনও এমন সকাল হবে? বলো না বাবা?
সেদিন তুমি ছিলে, ছিলো আনন্দ, ছিলো সুখ, ছিলো বৈভব।
কাক ডাকার আগেই তুমি ঘুম ভাঙ্গাতে।
মনে পড়ে খুব, তুমি বলতে, ওঠো ওঠো সবার আগে উঠতে হবে।
সুজ্যিমামা জাগার আগে ই আমাকে জাগিয়ে দিতে কিন্তু বাবা তুমিও নেই আমার সেই রোদেলা আনন্দের সকালও নেই।
কত খেলার ছলে বনানী বীথিকার বিশুদ্ধ হাওয়ায় কোমলপ্রাণকে সতেজ করে রাখতে।
নিমের ডালে দাঁত মাজাতে।
বাবা! তুমি কেমন বেমালুম ভুলে গেলে সেই সকালের
রুটিনমাফিক সময়টির কথা।
বাঁশ বাগানের মাথার উপরে তুমি চুপটি করে আমায় দেখে মিটি মিটি হাসো।
চাঁদের পাশেই তুমি জ্বলজ্বল করো প্রতি সন্ধ্যায়। কিন্তু তোমায় ইচ্ছে করলেও ছুঁতে পারিনা।
বাবা! মনে পড়ে তোমার? মাকে কত বকুনী দিয়েছো যদি এতটুকু কমতি হয়েছে আমার প্রতি ভালোবাসার?
মা যে আমার সর্বংসহা, কখনও এতটুকু মন খারাপ করেননি।
সকালে মুখ ধোয়ার পর মায়ের আঁচলে মুখ মুছেছি।
উফ কী শান্তি মায়ের শরীরের মিষ্টি গন্ধ আমার মনটাকে চাঙ্গা করে তুলতো।
তোমার প্রতিদিনের ডিউটি ছিলো আমাকে খাইয়ে স্কুলে পৌঁছে দেয়া।
সেই প্রথম যেদিন স্কুলে যাই তোমার কতনা উপদেশ ।
বাড়ীর কাছেই স্কুল তাই আমি আর তুমি হেঁটে হেঁটে স্কুলে গেছি।
বাবা আজো ভুলিনি তোমার ডান হাতের স্পর্শের কথা।
তুমি শক্ত করে ধরে রাখতে আমায়।
এখনও অনুভব করি বাবা !
জানো বাবা ভাবলে চোখে জল চলে আসে।
মনে হয় এইতো সেদিনের কথা। কিন্তু
না মেঘে মেঘে অনেক সময় হয়ে গেছে। আর আসবে না কখনও এই রঙ্গিন সকাল।
সেই তো এখনও ভোর হয়, রোদ উঠে, কিন্তু তোমার আর
মায়ের স্পর্শ , মধুর সুরে শাসন করা এ তো আর কখনও খুঁজেও পাবো না।
আমি ব্যথা পেলে মনে হতো তুমিই ব্যথা পেতে।
ধীরে ধীরে বড় হলাম, তোমার সাথে কত কথা কাটাকাটি।
তুমি কখনও কটু কথা বলোনি করেছি কত খুনসুটি।।
আদর, ভালোবাসায়, দিয়েছো উপদেশ।।
তোমার আদর্শেই পথ চলি বাবা।
দুঃখ দিতে জানিনা এখনও।
যতটুকু পারি তোমার মতো নিঃস্বার্থভাবে স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে যাই।
আমার পাথেয় তোমার আর মায়ের স্নেহ-আশীর্বাদ।
এটুকুই দিও বাবা যতদিন বেঁচে থাকি।।