কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ধরলা ও তিস্তা পানি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।। সেই সাথে বানভাসি এলাকায় দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো খাদ্য ও জ্বালানির তীব্র সংকট। জেলার ৯ উপজেলার মধ্যে ৬ উপজেলার ২০ টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চর ও দ্বীপচরগুলো প্লাবিত হওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যায় জেলায় প্রায় ৬৫ টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।
ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় অনেক পরিবার ঘরের ভিতর উচু মাচা ও নৌকায় দিন পার করছেন।
সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা, যাত্রাপুর, পাঁচগাছী ইউনিয়ন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া, বেগমগন্জ, সাহেবের আলগা, চিলমারী উপজলার চিলমারী, অষ্টমিরচর, নয়ারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এসব এলাকায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে।উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চরের হাসান আলী জানান, কোনরকমে ঘরের মাসান উঁচু করে বউ বাচ্চা নিয়ে আছি। যেভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে আর ঘরে থাকার উপায় থাকবেনা।
অন্যদিকে পানির তোড়ে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নে দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম । কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ১ শত মিটার বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় নদ-নদীর পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, যাত্রাপুর ইউনিয়নের পাড়ারচর, রলাকাটা, খেয়ার আলগা, বড়য়া ও মাঝিয়ালির চরের প্রায় ৫ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।পার্শ্ববর্তী ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান জানান, ধরলার অববাহিকায় আমার ইউনিয়নে ২৫টি গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এতে করে এসব গ্রামের প্রায় ১২৭৩ পরিবারের ঘরে পানি প্রবেশ করেছে। পাঙ্গার চর গ্রামে দুইটি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশিদ জানান এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৬৩ হেক্টর ফসলি জমি নিমজ্জিত হয়েছে বলে তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে আউশ ধান, পাট তিল ও মরিচ। এছাড়াও অন্যান্য ফসলেওর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পানি নেমে গেলে আমরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাব। যাতে তারা পূর্ণবাসন প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় আসতে পারে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেদুল হাসান জানান, আমরা বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছি। এরইমধ্যে উদ্ধার কার্যক্রম ও শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ রেজাউল করিম জানান,বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিড বোট, নৌকা এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় ৯ উপজেলার বন্যা দুর্গত মানুষের সহায়তার জন্য ২৯৫ মেট্রিক টন চাউল, নগদ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা,, শুকনো খাবার,, এক হাজার প্যাকেট শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা, এবং গো খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৭ লাখ ৭৪ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । উপজেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।