চাঁদপুরের মতলবের সঙ্গে রাজধানীর সাথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক মতলব-গৌরীপুর পেন্নাই মহাসড়ক । এ সড়কে রয়েছে ১৭৬ টি বাঁক। প্রতিটি বাকই যেন মরনফাদ। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে বিপুলসংখ্যক যাত্রী । গত ২১ মে নায়েরগাঁও এলাকায় বাঁকে মোর ঘোড়াতে গিয়ে জৈনপুর পরিবহনের একটি বাস উল্টে প্রায় ১৫ জন যাত্রী আহত হয়েছিল ।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে সওজ কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের পুরোনো আকাবাকা রাস্তাটি সংস্কার করে পেন্নাই সড়ক ঘোষণা করলে মতলবের সঙ্গে ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়। সেই থেকেই ৩৮ কিলোমিটারের এই সড়কে ১৭৬টির বেশি বাকের ঝুঁকি নিয়ে বাস চলাচল শুরু হয়।
ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের দূরত্ব অর্ধেক কমিয়ে আনায় চাঁদপুর জেলা এমনকি লক্ষ্মীপুর, রায়পুর এলাকার মালবাহী ও যাত্রীবাহী যানবাহন এখন এ রুটেই আসা যাওয়া করে। এত বেশিসংখ্যক ঝুঁকিপূর্ণ বাকের কারণে প্রতিদিনই এ সড়কে তৈরি হচ্ছে যানজট, ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। এতে আহত, নিহত ও পঙ্গুত্ববরণ করছে শত শত মানুষ ।
সওজ বিভাগ এ সড়কটিকে উপ-আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘোষণা করলেও ঝুঁকিপূর্ণ বাকগুলো সোজা করেনি। বাক সোজা করার যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেটার মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বাকই বহাল রয়েছে।
সওজ কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৮৯ কোটি টাকা দিয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বাঁক সোজা করা হয়েছে। ২০১৭ সালে প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাকি বাঁক সোজা করা হচ্ছে না।
তবে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন, বরাদ্দ টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার হলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বাঁক সোজা করা যেত। বাঁক সোজা করার জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দাম নির্ধারণে অনিয়ম হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ব্যক্তিরা জানান। তারা বলছেন, এত টাকা বরাদ্দের পরও রাস্তাটি এখনও ঝুঁকিপূর্ণই রয়ে গেল। ফলে মতলব-গৌরীপুর পেন্নাই সড়ক ৩৮ কিলোমিটার সড়কের একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাক । এখনও মানুষের কাছে দুর্ঘটনার সড়ক হিসেবেই পরিচিত। এ সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে সময়ের সাশ্রয় হলেও জীবনের ঝুঁকির কারণে যাত্রীরা আতঙ্কে থাকেন সব সময়। অতিরিক্ত বাঁকের কারণে যাত্রীদের ন্যায্য ভাড়ার বদলে ২ থেকে ৩ গুণ বেশি টাকা গুনতে হয়। এছাড়া এ রাস্তায় একবার যানজট লাগলে সারাদিন রাস্তাতেই কেটে যায়।
এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী জয়নাল আবেদীন জয়, আলী আক্কাস , নিরঞ্জন দাস ও কলেজছাত্র হাসিবসহ আরও অনেকে জানান, অতিরিক্ত বাঁকের কারণে বাসে যাতায়াতের সময় যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রায়ই ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হতে হয় তাদের।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সামছুজ্জোহা বলেন, বাক সোজা করার প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে নতুন করে প্রকল্প নেওয়া হবে।