আলজাজিরার প্রখ্যাত সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ হত্যাকাণ্ড নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে অতিসত্বর এর তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে দেশটি। বুধবার (১১ মে) হত্যাকাণ্ডের কয়েক ঘণ্টা পর এক বিবৃতিতে তদন্তের আহ্বান জানায় মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেন, শিরিন হত্যার ‘তাৎক্ষণিক ও পরিপূর্ণ’ তদন্ত করতে হবে।
এক টুইটার বার্তায় তিনি আরও বলেন, মা’র্কিন সাংবাদিক শিরিন আবু আকলহের হত্যাকাণ্ডে আমরা মর্মামত। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। দোষীদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ড তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিয়োজিত মা’র্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাসও। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এটা আসলেই ভীতিকর। তিনি (শিরিন) ছিলেন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। তিনি তার মতো করে কাজ করছিলেন। যেমনটা আপনি-আমি প্রতিদিন বিভিন্ন কাজ করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই হত্যাকাণ্ড খতিয়ে দেখতে হবে।’
বুধবার (১১ মে) অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে সংবাদ সংগ্রহকালে শিরিন আবু আকলেহকে গুলি করে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জেনিন শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানকালে পেস্ট ভেস্ট পরে খবর সংগ্রহ করছিলেন ৫১ বছর বয়সী এই সাংবাদিক। এ সময় একটি গু’লি এসে তার মুখে লাগে। কিছুক্ষণ পরই তার মৃত্যু হয়।
এ সময় এক ফিলিস্তিনি সাংবাদিকও গুরুতর আ’হত হন। তার পিঠে গুলি লাগে। তবে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গেছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা এবং আলজাজিরার সাংবাদিকদের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার (১১ মে) জেনিন শহরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের তথ্য সংগ্রহ করার সময় গু’লিবিদ্ধ হন সাংবাদিক শিরিন। গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে হামলার দায় নিতে অস্বীকার করেছে ইসরাইল। দেশটির সেনাবাহিনী সর্বশেষ বিবৃতিতে বলেছে, তাকে (সাংবাদিক শিরিনকে) কারা গুলি করেছে, এটা স্পষ্ট নয়। তবে এর আগে গুলি করার কথা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে বলেছিল, ‘ফিলিস্তিনি বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ওই সাংবাদিক।
আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক শিরিনের মরদেহ নাবলুস শহর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে রামাল্লায় আনা হয়। মরদেহ রামাল্লায় পৌঁছানোর আগে পুরো শহর লোকারণ্য হয়ে ওঠে। বন্ধু-বান্ধব,সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যরা আলজাজিরার অফিসের সামনে জড়ো হন।
সাংবাদিক শিরিনের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামানোর সময়কার একটি ছবি প্রকাশ করেছে আলজাজিরা। তাতে দেখা যাচ্ছে, কয়েকশ ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স থেকে মরদেহ নামিয়ে নিয়ে আসছে।
এ সময় রামাল্লা থেকে আলজাজিরার প্রতিবেদক নিদা ইব্রাহিম জানান, ‘শিরিনের মরদেহ অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে আলজাজিরার অফিসের একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,আমরা দেখছি, তার সহকর্মীরা, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনরা তার প্রতি শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।’
ফিলিসলস্তিনি ভূ-খণ্ড দখল করে ১৯৪৮ সালে গড়ে তোলা হয় ইসরাইল রাষ্ট্র। এরপর থেকে ফিলিস্তিনিদের ওপর অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে আসছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের এই নির্যাতন-নিলপীড়নের প্রতিদিনের চিত্র সাহসিকতার সঙ্গে তুলে ধরে আরব বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন খ্যাতনামা টেলিভিশন সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহ।
শিরিন একই সঙ্গে ফিলি জেরুজালেমের বাসিন্দা ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। বন্ধু ও সহকর্মীরা জানিয়েছেন, শিরিন অনেক সাহসী-দয়ালু। সবসময় তার মুখে হাসি লেগেই থাকত। হারা’লনো অধিকার ফিরে পেতে ফিলিস্তিনিদের যে সংগ্রাম তাকে কণ্ঠ দিয়েছিলেন শিরিন এবং প্রায় তিন দশক ধরে এই কাজ করছিলেন তিনি।