লিমু আক্তার (৫) নামে এক শিশুর পেটের টিউমারের অপারেশনে যথেষ্ট অবহেলা করার অভিযোগ উঠেছে এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিশুর বাবা বাদী হয়ে রংপুরের তালুকদার হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল কাদের তালুকদারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। একই ঘটনায় মামলায় জড়ানো হয়েছে আজিজুল হক নামের এক ব্যক্তিকেও।
গত রোববার (২৪ এপ্রিল) হাসপাতালের চিকিৎসক আব্দুল কাদের তালুকদার ও আজিজুল হকের নাম উল্লেখ করে পঞ্চগড়ের আমলী আদালতে মামলা দায়ের করেন লিমুর বাবা আব্দুল লতিফ।
মামলার আসামি চিকিৎসক আব্দুল কাদের তালুকদার রংপুরের তালুকদার কমপ্লেক্স ধাপ এলাকার আজিজার রহমানের ছেলে। অপর আসামি আব্দুল লতিফ পঞ্চগড়ের টুনিরহাট দফাদার পাড়া এলাকার মৃত নসিম উদ্দীনের ছেলে।
বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মেহেদী হাসান মিলন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মামলাটি আদালত আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তভার দিয়েছেন। আশাকরি ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায় বিচার পাবেন।
জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার হতদরিদ্র আব্দুল লতিফ তার ৫ বছর বয়সী মেয়ে লিমু আক্তারের পেটের টিউমার অপারেশনের জন্য ভর্তি করান রংপুরের তালুকদার হাসপাতালে। সেখানে অপারেশনের পর এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে শিশু লিমু। পেটের টিউমার আরও বড় আকার ধারণ করেছে। এমনকি সিটি স্ক্যানে দেখা মিলছে না বাম পাশের কিডনি।
অভিযোগ উঠেছে, অপারেশনে যথেষ্ট অবহেলা করেছে চিকিৎসক। অপারেশনের আগে টিউমারের বর্তমান অবস্থান জানতে কোনো টেস্টের প্রয়োজনবোধও করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি অপারেশনের পর নিয়ম অনুযায়ী বায়োপসি টেস্টও করা হয়নি। এছাড়া, পুরো অপারেশনের জন্য ৩২ হাজার টাকা চুক্তি থাকলেও গুণতে হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। অথচ টাকা পরিশোধের কোনো রশিদ পাননি রোগীর পরিবার।
পারিবারিকভাবে জানা গেছে, শিশু লিমু আক্তারের পেটে টিউমার শনাক্তের বিষয়টি পরিবার জানতে পারে ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর। অর্থাভাবে তখন অপারেশন করাতে পারেননি। এতদিন চিকিৎসকের পরামর্শ মতে মেয়ের চিকিৎসা চালালেও গত ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউনিয়নের দফাদারপাড়া এলাকার আজিজুল হকের মাধ্যমে ভর্তি করান রংপুরের তালুকদার হাসপাতালে।
এদিকে মামলা সূত্রে জানা যায়, শিশুটির অপারেশন করা হয় ২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর। কিন্তু অপারেশনের সময় নতুন করে কোনো টেস্টের রিপোর্ট খোঁজেনি চিকিৎসক আব্দুল কাদের তালুকদার। তিনি ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর শনাক্ত হওয়া ওই রিপোর্ট অনুযায়ী অপারেশন করেন। এদিকে, অপারেশনের পর শিশুটিকে বাড়ি আনা হলে অবস্থার আরও অবনতি হয়।
শিশুটির বাবা আব্দুল লতিফ অভিযোগ করে বলেন, আমার মেয়ের অবস্থার অবনতি দেখে তালুকদার হাসপাতালে যোগাযোগ করলে তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। পরে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসক বায়োপসি টেস্টের রিপোর্ট ছাড়া চিকিৎসা দিতে অনীহা দেখান। একই অযুহাত দেখিয়েছেন ঢাকা শিশু হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ এবং মহাখালী এনআইসিআর হাসপাতালের চিকিৎসকরা। মেয়ের অপারেশনের জন্য মানুষের কাছে হাত পেতে সাহায্য তুলে টাকা জমিয়েছিলাম। তারপরও পথঘাট না জানার কারণে সহযোগিতা চাই আজিজুল হকের। তিনি আমাকে তালুকদার হাসপাতাল ভালো হবে বলে আশ্বস্ত করেন। আমি তাকে বিশ্বাস করে ওই হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করি। এই বিশ্বাসই যেন আমার বড় ভুল।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক কি অপারেশন করলো আমার বুঝে আসছে না। যেই টিউমার সারাতে অপারেশন করা, সেই টিউমার এখন আরও বড় হচ্ছে। আবার সিটি স্ক্যানে একটি কিডনি দেখা যাচ্ছে না। কিডনি সরিয়ে ফেলছে এমন আশঙ্কাও করছি। মেয়ের চিকিৎসার জন্য আমার সব শেষ করে ফেলেছি, তারপরও মেয়েকে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলাম না। ছোট্ট মেয়েটি এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। চোখের সামনে মেয়ের এমন কষ্ট সহ্য হয় না। তাই আদালতে মামলা করতে বাধ্য হয়েছি। আমি চাই আমার মতো কোনো পরিবার চিকিৎসা নিতে গিয়ে এমন অবহেলায় না পড়ুক।
হাসপাতালে ভর্তি হতে সহায়তাকারী অভিযুক্ত আজিজুল হক বলেন, তাদের উপকারের উদ্দেশে আমি সঙ্গে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন মাধ্যমে হাসপাতালটি ভালো জেনে সেখানে নিয়ে যাই তাদের। কিন্তু চিকিৎসক কি করেছে তা আমি জানি না। আর চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনার সময় আমি ছিলাম না।
এ বিষয়ে তালুকদারহাসপাতালে যোগাযোগ করা হলে ফোনের অপর পাশ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়, স্যার কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলেন না। যেহেতু ৫ মাস আগের অপারেশন তাই ফাইল না দেখে কিছু বলা যাচ্ছে না।
তবে এ ঘটনায় প্রশাসনের সহযোগিতা চান হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রাম এলাকার সাধারণ মানুষ।