মতলব প্রতিনিধিঃ
চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনাধনাগোদা সেচপ্রকল্পে গতকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) সকালে কালবৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে প্রায় ২ হাজার হেক্টর কাঁচা ও আধা পাকা বোরো ধান মাটিতে মিশে গেছে।
বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল ৭ টা দিকে হঠাৎ করে কাল বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টি শুরু হয়। ঝড় ও বৃষ্টিতে কিছু জমির বোরো ধান ভূট্টা মাটিতে মিশে যায়। সেই সাথে বিভিন্ন সবজি ও কলাবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভা, গজরা,এখলাসপুর,ষাটনল,সাদুল্যাপুর,ফতেহপুর, ইসলামাবাদ, বাগানবাড়ি, দুর্গাপুর, ফরাজীকান্দি, সুলতানাবাদ ইউনিয়নে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে বিভিন্ন জমিতে ঝড় ও বৃষ্টির কারণে বোরো ধান মাটিতে মিশে গেছে। এছাড়া গত ১৫-২০ দিন পুর্বে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান ব্রি ২৮ জাতে ব্লাস্টের প্রকোপে অনেক ধানে চিটা হয়ে গেছে।
উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামের কৃষক শরীফ বলেন, আমি ৪বিঘা জমিতে ব্রি-২৯, হাইব্রিড ও ব্রি-২৮ ধানের আবাদ করেছি। সবেমাত্র ধান কাটার প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু আজ সকালে বাতাসের কারণে ২ বিঘা জমির ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। ধান ঝড়ে পড়েগেছে। এ অবস্থায় ফলনের বিপর্যয়সহ লোকসানের আশংকা করছেন কৃষি উদ্যোক্তা মোঃ শরীফুল ইসলাম । তিনি প্রতি বিঘায় প্রায় ৭/৮ মণ ধান কম হবে বলে জানান। এদিকে এবার মাজরাপোকার , বিপিএস আক্রমণ ও ব্লাস্টের অতিরক্ত প্রকোপে তা প্রতিরোধে বিঘা প্রতি অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১৫ শত তেকে ২ হাজার টাকা। আবার এখন কালবৈশাখীর প্রকোপে শুরুতেই ব্যপক ফসল হানি!
ওটারচরের কৃষক মোঃ ইমাম হোসেন সরকার জানান, ব্রি ধান ৯২ ও ২৯ জাত গুলো বর্তমানে ফুলফোটা মুহুর্তে। ঠিক এই সময়ে সকাল ৯ থেকে চারটার মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হলে পরাগায়ন মারাত্মক ক্ষতি গ্রস্ত হয়।যার ফলে ৯০% পর্যন্ত ফলন বিনষ্ট হতে পারে। তাই সবমিলিয়ে একটি আশংকা জনক অবস্থায় আছেন তারা।
প্রকল্পের আওতার খাগুরিয়া গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন মোল্লা, মহিউদ্দিন, রবিউল জানান, ধানের যে অবস্থা কাইটা কোন লাভ নাই। এক কানি ধান কাটতে খরচ ৭ -৮ হাজার টাকা, ফলন হবে ১৮- ২৫ মন। আর ধানের ৯০০-১০০০ টাকা মন। কিন্তু সবমিলিয়ে ধানের উৎপাদন খরচ প্রতি মন ১৪০০-১৫০০ টাকা। আবার এমন দুর্যোগে ক্ষতির সম্মুখীন হলে আমরা নিরুপায় হই। মূলত গরুর খড়ের জন্য এখন ক্ষেতে যাওয়া লাগে। নাইলে গেলাম না অনে। এভাবেই জানালেন তারা কষ্টের কথা।
টরকি গ্রামের ভুট্টা চাষী প্রবাসী কৃষি উদ্যোক্তা শামিম সরকার জানান, আমার ১১৫ শতক জমিতে ভূট্টা চাষ করেছিলাম কিন্তু সকালে তান্ডবের আমি এখন নিঃস্ব প্রায়।
ঘনিয়ারপাড় গ্রামের তরুন কৃষি উদ্যোক্তা রিয়াদ হোসেন জানায়, ধানের পাশাপাশি আমার কলাবাগানের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, চলতি বছর ছেংগারচর পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৯ হাজার ৫৬ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় বোরো আবাদের লক্ষামাত্রা অর্জিত হয়। আজ বুধবার সকাল হঠাৎ করে কাল বৈশাখী ঝড় ও বৃষ্টিতে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর কাঁচা ও আধা পাকা বোরা ধান ও ভুট্টা মাটিতে মিশে গেছে।
অপর দিকে কলাকান্দা ইউনিয়ন মিলারের চর হানিরপাড় মাঠে পানি সরবরাহের অভাবের কারণে বিভিন্ন ধানে ক্ষেত পুড়ে ধানে চিটা হয়ে গেছে বলে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকগন জানিয়েছেন। সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হয়েছে ওটারচর, ঘনিয়ারপাড়, টরকি,সাদুল্যাপুর,দুলালকান্দি গ্রামে। মিলারচর গ্রামের কৃষক মো. হোসাইন আল মামুন জানান, গত ১৫-২০ দিন পুর্ব থেকে আমার এলাকার কৃষকরা পানি পাচ্ছে না ফলে প্রথমে ধান গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সাদা হয়। তারপর ধানের শীষ কালো হয়ে মরে গেছে । এখন আবার ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ সালাউদ্দিন বলেন, সকালের ঝড় ও বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় বোরো ধান মাটিতে মিশে গেছে। যে সব জমির ধান ও ভুট্টা পুরোপুরি পেকে গেছে সেগুলো দ্রুত কেটে ফেলার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।