শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৪২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
শিরোনাম
রাউজান প্রেসক্লাবের নব-নির্বাচিত কমিটির সাথে উপজেলা প্রশাসনের মতবিনিময় সভা কুলিয়ারচরে শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে গ্রাম পুলিশসহ ৩জন আহত ঠাকুরগাঁওয়ে সাফ জয়ী তিন নারী ফুটবলারকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সংবর্ধনা ভয়াল সিনেমাটি সবার জন্য উন্মুক্ত সিরাজদিখানে নবাগত সহকারী পুলিশ সুপারের সাথে ঝিকুট ফাউন্ডেশনের মতবিনিময় জনগণের অধিকার ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনা হবে- ছাগলনাইয়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম রাউজান প্রেসক্লাবের নব-নির্বাচিত কমিটির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত দাকোপের সাহেবের আবাদ শ্রীশ্রী কৃষ্ণের রাসমেলায় চতুর্থদিনে সাংকৃতিক সন্ধ্যা ঘোপাল যুবদলের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ ঠাকুরগাঁওয়ে তিন জাতীয় দিবস উদযাপনে প্রস্তুতিমূলক সভা ঠাকুরগাঁওয়ে মাওলানা ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকীতে ইএসডিও’র আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ছাগলনাইয়ায় ৩০ কেজি গাঁজা উদ্ধার আটক ০১ রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে। দেশ চালাবে জাতীয় ঐক্যের সরকার। সনাতনীদের অস্তিত্ব রক্ষার্থে সকলকে একত্রিত হতে হবে ছাগলনাইয়া সেচ্ছাসেবক দলের লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ
বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রানালয়ে আবেদনকৃত।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই প্রকল্পের কৃষিজমিতে এত অধিকহারে ঘরবাড়ি নির্মিত হচ্ছে–দৈনিক বাংলার অধিকার

আতাউর রহমান রহমান সরকার , মতলব, প্রতিনিধি / ২৪২ সংবাদটি পড়েছেন
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২২, ২:১৭ অপরাহ্ণ

চাঁদপুরের মতলব উত্তরে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের আওতায় কৃষিজমিতে অপরিকল্পিত ভাবে প্রতিনিয়ত নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন ঘরবাড়ি, গড়ে তোলা হচ্ছে বনায়ন। এসব প্রকল্পের জন্য যেন এক-একটি বিষফোঁড়া।

সরেজমিনে দেখা যায়, সেচ প্রকল্পের কৃষিজমিতে নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশাল বিশাল ফসলের মাঠের মধ্যবর্তী স্থানেই ব্যাপকহারে ঘরবাড়ি গড়ে তোলা হচ্ছে। এতে প্রকল্পে অন্তত ছয়হাজার হেক্টর কৃষিজমি কমে গেছে, কমেছে ফসল উৎপাদনও। এভাবে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি তৈরি বনায়ন তৈরি অব্যাহত থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে প্রকল্পটি আবাসন প্রকল্পে রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে মতলব উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। বর্তমানে প্রকল্পটির আওতায় ১৪ টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা রয়েছে।নির্মাণকালে প্রকল্পে জমির পরিমাণ ছিল ১৭ হাজার ৫৮৪ হেক্টর। এর মধ্যে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার হেক্টর। শুরুতে সেচ পৌঁছানো হয় প্রকল্পের পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি বছর সেচসুবিধা দেওয়া হয়েছে ছয় হাজার ৭০০ হেক্টরে। প্রকল্প নির্মাণের সময় ১৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি থাকলেও ৩৪ বছরে ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় ২০২২ সালে এর পরিমাণ এসে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার হেক্টর প্রায়। বাকি অন্তত পাঁচ হাজার হেক্টর কৃষিজমির বেশির ভাগে ঘরবাড়ি নির্মাণ ও কিছু জমি চলে গেছে বাজার, অপরিকল্পিত বনায়ন,অফিস ও রাস্তাঘাট নির্মাণে।
প্রকল্পে ২০১৫ সালে ধানি জমির পরিমাণ ছিল আট হাজার হেক্টর ও উৎপাদিত ফসলের পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার টন। ২০২১ সালে আবাদকৃত জমির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় সাত হাজার হেক্টরে ও ফসল উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার টন। আবাদি জমি কমে যাওয়ায় ফসল উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। এটা খুবই চিন্তার বিষয়।

এদিকে ২০২১ সালে টানা দুই দুইবার আকস্মিক জলবদ্ধতার শিকার হয়ে কৃষকেরা নিঃস্ব হয়েছে।
কতৃপক্ষের খাল খননের কোন কার্যক্রম হাতে নেয়নি এখন পর্যন্ত। ফলে কৃষি উদ্যোক্তারা ভবিষ্যত কৃষি নিয়ে শঙ্কায় আছেন। কৃষি থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে অনেকেই। যা বেকারত্ব সমস্যা চরমে নিয়ে যাবে।

এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছে, মতলব উত্তরে প্রতিদিন কোটি টাকার সবজি আমদানি করতে হয়, ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি সহ মানসম্মত নিরাপদ খাদ্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এলাকা বাসী।

অথচ মতলব উত্তরে মেঘনা ধনাগোদা সেচপ্রকল্পে একটি সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারলে এটা সবজির জন্য বিখ্যাত হতো। নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা যেতো। কারণ, চারপাশে বেড়িবাঁধ বেষ্টিত এবং দুইটি সেচ ও নিষ্কাশন পাম্প রয়েছে, যার মাধ্যমে শুকনা মৌসুমে পানি সেচ ও বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব। কিন্তু গত ৩৩ বছরে ৫৬১ কিলোমিটার নিষ্কাশন খাল পুনখননে কোন পরিকল্পনা হাতে না নেওয়ার কারণে নিষ্কাশন খালে কচুরিভাগারে আবদ্ধ- খাল ভরাট করে বাড়িঘর রাস্তা নির্মাণ এর ফলে জলবদ্ধতার শিকার হয়ে কৃষকেরা নিঃস্ব। ফলে রপ্তানির পরিবর্তে আমদানি করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কৃষকেরা জমি চাষাবাদ করে লোকসানের কবলে পড়ায় কৃষিজমিতে কাঠবাগান ও বসতবাড়ি নির্মাণে উৎসাহী হয়ে উঠেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, প্রকল্পের টরকি, দক্ষিণ ও উত্তর ফতেপুর, টরকি,ঠেটালিয়া, লুধুয়া, গজরা, আবুরকান্দি, মান্দারতলি, ঘনিয়ারপাড়, সিপাইকান্দি, রাঢ়িকান্দি, ছৈয়ালকান্দি, বড় ও ছোট হলদিয়া, নাউরী,দুলাল কান্দে,ঘনিয়ারপাড়,আদুরভিটি,ঠাকুরচর ওটারচর, নবুরকান্দিসহ আরও অনেক এলাকায় কৃষিজমিতে গড়ে উঠেছে অসংখ্য ঘরবাড়ি। জমির মার্জিনাল উচ্চতায় গড়ে ওঠা এসব বাড়ির আশপাশের জমিগুলোও নষ্ট হচ্ছে মানুষের পথ চলাচলের রাস্তা ও অন্যান্য কাজে। বাড়িতে লাগানো বড় বড় গাছের ছায়ায় ফসল হচ্ছে না। প্রকল্পের ভেতর প্রবেশ করে মনে হয়েছে, এটি যতটুকু না সেচ প্রকল্প, তার চেয়ে বেশি আবাসন প্রকল্প।

গজরা ইউনিয়ন এর খাককান্দা গ্রামের খবির হোসেন জানান, ‘তিনি ১৬ শতাংশ কৃষিজমি নিয়ে একখানা পাকা বাড়ি বানিয়েছেন। যার মূল কারণ হচ্ছে ঠিকমতো ফসল না পাওয়া। তাতুয়া গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা জাহিদ হাসান মিঠু জানায়, আমার সকল সব্জির জমিগুলো অপরিকল্পিত বনায়নের কারণে ঠিকমতো ফলন পাচ্ছি না। খাগুরিয়ার ফারজানা জানায়, আমার জমিও অপরিকল্পিত বনায়ন স্বীকারে পতিত প্রায়। এদিকে দুলালকান্দি গ্রামের উত্তর পাশে গত কয়েক মাস পূর্বে ২০ একরের বিশাল মাঠের মধ্যবর্তী মাঠে ঠাই নিয়েছেন এক নবনির্মিত বসতবাড়ি। এখন চারবপশে ধানের শীষ গুলো দুলছে। এটি যেন মাঠটির জন্য বিষফোঁড়ায় রুপ নিবে। যা এই মাঠটি ধবংস করতে যথেষ্ট। কম উচ্চতায়, কম খরচে, সুন্দর ও আলাদা পরিবেশে বসবাসের উদ্দেশ্যে বাড়ি করেছেন। তার দেখাদেখি অন্যান্যরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে নতুন বাড়ি তৈরি করার জন্য। কেউ কেউ পাশ বর্তী জমিতে বাধ্য হয়ে বাগান করার ও পরিকল্পনা নেওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সকল মাঠের এটি একটি প্রতিচ্ছবি মাত্র।

কৃষিজমি নষ্ট করে লোকজন যেভাবে বাড়ি বানাচ্ছে, তাতে প্রকল্প নির্মাণের আসল উদ্দেশ্যই বিফলে যাচ্ছে। জমিতে ঘন ঘন বাড়ি তৈরি বন্ধ হওয়া দরকার। ওটারচর এর কৃষি উদ্যোক্তা ও দৈনিক বাংলার অধিকার মতলব প্রতিনিধি মোঃ আতাউর রহমান বলেন, আমার ৮০ শতাংশ সব্জি চাষের জমি পাশবর্তী জমিতে অপরিকল্পিত বনায়নের কারণে পতিত হয়ে যাচ্ছে । এতে আমার খামার সংকোচিত হয়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়ে কৃষি থেকে মুখ ফিরানোর জন্য ভাবছি । এভাবে অপরিকল্পিত বনায়ন, বসতবাড়ি তৈরি করতে থাকলে কয়েক বছর পর কৃষিজমি হারিয়ে যাবে।এতে বেকারত্ব ও নিরাপদ খাদ্য ঘাটতি দেখা দেওয়া সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, আইন মোতাবেক যেকোনো জমি শ্রেণী পরিবর্তন করতে সরকারের অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের এ আইন তোয়াক্কা করছে না প্রকল্পের কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্প এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, ‘আমার জমিনে আমি বাড়ি বানাব, এতে সরকারের কী বলার আছে?’

প্রকল্পের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ধারনা, মূলত জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণেই প্রকল্পের কৃষিজমিতে এত অধিকহারে ঘরবাড়ি হচ্ছে। এ ব্যাপারে সবারই সচেতনতা দরকার। নির্বাহী প্রকৌশলীর মতে প্রকল্পে বাড়িঘর তৈরি বন্ধে পাউবোর নিজস্ব কোনো আইন নেই। এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে প্রকল্পের বাসিন্দারা। এদিকে উপজেলা কৃষক ও জমির মালিক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সচেতন করার জন্য অনবরত কাজ করে যাচ্ছে ” কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ মতলব উত্তর উপজেলা, চাঁদপুর” এর সকল সদস্যগণ। তাদের মতে এভাবে চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যে এ প্রকল্পটি আবাসন প্রকল্পে রূপ নিতে পারে। এটা খুবই উদ্বেগের বিষয়।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছে, বেড়িবাঁধ বেষ্টিত হওয়ায় চলাচল এ সুবিধা থাকায় কম উচ্চতায় ঘরবাড়ি নির্মাণের সুযোগ রয়েছে। ফলে দ্রুত যৌথ পরিবার ভেঙে একক পরিবার সৃষ্টির জন্য আলাদা আলাদা বাড়ি নির্মাণ এর প্রয়োজন পড়ছে।ফলে অনেকেই মাঠের মাঝে ইচ্ছে মত নিজের জমিতে ঘরবাড়ি তৈরি করছে। কেউ কেউ আবার হিংস্রতার প্রভাবে অন্যের জমি ক্ষতি করার জন্য জমির আইলে প্রথমে গাছ রোপণ করছে। পরবর্তীতে তার দেখাদেখি বাধ্য হয়ে অন্যরাও একই পথে হাঁটছে।

তাদের মতে এ সমস্যা সমাধানে, গ্রামীণ সালিসীরা জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে যৌথ পরিবার এর ছোটখাটো কলহ বিবাদের সমাধান করে তাদের পারিবারিক ভাঙনরোধের পাশাপাশি নতুন ঘরবাড়ি নির্মাণে নিরুৎসাহিত করতে পারেন। পাশাপাশি অপরিকল্পিত বনায়ন প্রতিরোধে
জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য সচেতন জনগোষ্ঠীর প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে।


এ বিভাগের আরও সংবাদ

আর্কাইভ

এক ক্লিকে বিভাগের খবর
Don`t copy text!
Don`t copy text!