চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনকারী ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানকে গ্রেফতারের দাবিতে আজ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
মেঘনা নদীপাড়ের বড় স্টেশন মাদ্রাসা রোডে টিলা বাড়ি, ইব্রাহিমপুর এবং ইশানবালায় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া ভিটামাটিহারা অসহায় মানুষজন এ কর্মসূচি পালন করেন।বুধবার (৩০ মার্চ) সকালে চাঁদপুর শপথ চত্বর থেকে শুরু হয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে ডিসি অফিসের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় তারা ‘বিচার চাই, বিচার চাই/ সেলিম চোরার বিচার চাই/ বালু চোরের বিচার চাই’ বলে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মানববন্ধনকারীরা এ বিষয়ে প্রধামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনি আমাদের সাধারণ জনগণের মা।
চাঁদপুর রক্ষা করার জন্য আপনার কাছে আমরা আকুল আবেদন করছি। চাঁদপুর রক্ষার্থে জরুরিভাবে পদক্ষেপ নিন। আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বালু কেটে আমাদের চাঁদপুরের ক্ষতি করছে। হাজার হাজার মানুষকে বিপদের মধ্যে ফেলছে। বালু কাটার কারণে সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বরের আটটি ইউনিয়ন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া চাঁদপুরের নদীপাড়ের বিভিন্ন এলাকার মানুষের ঘরবাড়ি নদীতে চলে গেছে। নদীর আশপাশের যেসব মানুষের বাড়িঘর রয়েছে তারা অসহায় হয়ে পড়েছে।’ এ সময় মানববন্ধনকারীরা ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানের গ্রেফতার দাবি করেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আব্দুল মালেক দেওয়ান নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘নিম্নমানের কিছু লোকের বালু উত্তোলনের কারণে নদী ভাঙছে। এ কারণে নদীপাড়ের মানুষ দিশেহারা। তাই অবিলম্বে বালু উত্তোলনকারী সেলিম খানের বিচার দাবি করছি।’
উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে চাঁদপুর জেলার নদী অঞ্চল থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খানসহ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বালু উত্তোলনের কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করেও নদী ভাঙন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ইলিশ সম্পদসহ নদীর জীববৈচিত্র্য। সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন সময় সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতর ও স্থানীয়রা বিরোধিতা করলেও বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে প্রভাবশালী চক্র।এ অবস্থায় চাঁদপুরের নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলন বন্ধে ভাঙনকবলিত মানুষ, জেলে ও জেলা আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিআইডব্লিউটিএ, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মতামত ও চিঠির আলোকে সরকারি সম্পদ এবং ইলিশ রক্ষায় ভূমি মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, নদীরক্ষা কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ।ওই চিঠির পর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনে সম্পৃক্ত অবৈধ নৌযান জব্দ ও চোরাই বালু বিপণন কার্যক্রমে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়।