চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে সম্পত্তিগত বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে পিতা-পুত্র সহ ৫ জন গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ঘটনাটি ২৮ মার্চ সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় উপজেলার টামটা দক্ষিন ইউনিয়নের আলীপুর ধোপা বাড়িতে ঘটে।
জানা যায়, ওই বাড়ির আবদুল মান্নানের প্রথম পক্ষের পুত্র মোঃ আলী আকবর হাতেম (৪৬) প্রবাস জীবনে আয়ের মাধ্যমে ক্রয়কৃত জায়গায় বেড়া দেয়ার কারনে একই বাড়ির মৃত নুর মিয়ার পুত্র আলী আহম্মদ ও তার ছেলে খোরশেদ আলম বাবু বাধা দেয়। এসময় হাতেমের পুত্র মোঃ রাফিউল ইসলাম সিয়াম (১৭) বাধার কারন জানতে চাইলে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও এক পর্যায়ে ঘটনাটি হাতা-হাতি থেকে মারামারিতে রূপান্তরিত হয়। এঘটনায় আবদুল মান্নানের পুত্র মোঃ আলী আকবর হাতেম ও তার পুত্র মোঃ রাফিউল ইসলাম সিয়ামসহ ৫জন গুরুতর আহত হয়।
আহত পিতা-পুত্রকে শাহরাস্তি উপজেলা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। অপরদিকে প্রতিপক্ষের ৩ জনকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন, একই বাড়ির মৃত নুর মিয়ার পুত্র আলী আহমেদ (৬৫), আলী আহমেদের স্ত্রী খুরশিদা বেগম (৫৮) ও তার ছেলে খোরশেদ আলম বাবু (২৫)।
এবিষয়ে হাতেমের স্ত্রী রুজিনা আক্তার বলেন, আমার স্বামী তার পিতার সম্পদ থেকে কোন জায়গা পায়নি। তিনি প্রবাস জীবনে উপার্জিত অর্থে জায়গা ক্রয় করেন। যেখানে আমরা শান্তি শৃংখলায় বসবাস করে আসছি। আমার শ্বশুরের কাছ থেকে ২ দলিলে ৬ ও চাচা শ্বশুর চাঁন মিয়ার কাছ থেকে এক দলিলে ৩ ও আবদুল জলিলের কাছ থেকে এক দলিলে ৫ শতক জায়গা সাব কবলা মূলে ক্রয় করি। চাঁন মিয়ার ৩ ও আবদুল মান্নানের ৬ শতক সহ মোট ৯ শতক জায়গা জোরপূর্বক দখল দিয়ে রেখেছেন তারা। জায়গা ছাড়ার কথা বললে তারা নানান ধরনের হুমকি ধরকি প্রদান করে। ঘটনার দিন বিকেলে বহিরাগত সন্ত্রাসী দ্বারা অতর্কিত হামলা চালিয়ে আমার স্বামী ও পুত্রকে দেশীয় অস্র দ্বারা কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। পরে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় উপজেলা সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে আমার স্বামী ও পুত্র আশংকা মুক্ত নন। এব্যাপারে তিনি শাহরাস্তি মডেল থানায় বাদী হয়ে একটি অভিযোগ করেছেন।
সম্ভাব্য বিবাদীগন হলেন, আলী আহমদের পুত্র খোরশেদ আলম বাবু (২৫), মৃত নুর মিয়ার পুত্র আলী আহম্মদ (৬৫), আলী আহমেদের কন্যা সালমার স্বামী জয়নাল আবেদীন (৩৫), ও তার কন্যা সালমা আক্তার (২৭) আবদুল মান্নানের পুত্র খোকন (৩৮), মহিন (৩৫), মোঃ হাসান (৩১) এবং মৃত সুলতান আহমদের পুত্র চাঁন মিয়া (৫৭)।
এব্যাপারে আবদুল মান্নান বলেন, হাতেম আমার প্রথম স্ত্রী সন্তান। বাড়ি করার জন্য তাকে আমি নয় শতক জায়গা দিয়েছি। যেখানে সে বাড়ি করেছে। এছাড়া আমি বু্িভিন্ন সময়ে তার স্ত্রী রোজিনার কাছে ২ দলিলে পুকুরে ৩ ও বাড়িতে ৩ শতক জায়গা বিক্রি করেছি। এখন সে পুরো ৬ শতক জায়গা বাড়িতে দখল দিয়ে রেখেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমাদের বাড়িতে জায়গা নিয়ে কোন সমস্যা নেই। এসিল্যান্ড সাহেব আমাদের বাড়ির জায়গা মেপে সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
আলী আহমেদের কন্যা সালমা বলেন, আমাকে হাজিগঞ্জে বিয়ে দিয়েছেন। ঘটনার দিন বেলা আড়াইটায় আমি ও আমার স্বামী জয়নাল আবেদীন আমাদের বাড়ি আসি। বিকেলেই এই ঘটনা। হাতেম আলী জোরপূর্বক আমাদের চলার পথে বেড়া দেয়ার কারনেই ঘটে এমন ঘটনা।
চাঁন মিয়া মুঠোফোনে বলেন, আমি ওদের কাছে ৩ শতক জায়গা বিক্রি করেছি এবং তাদেরকে তা বুঝিয়ে দিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, জীবন নিরাপত্তা জনিত কারনে আহতদের চাঁদপুর সদরে ভর্তি করা হয়েছে। আনি তাদের সাথেই আছি।
চাঁন মিয়ার স্ত্রী সাফিয়া বেগম বলেন, আমার স্বামী সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষ। তিনি ঠিকমত কথা গুছিয়ে বলতে পারেনা। বাড়ি মাপের ছিটা হয়েছে। কিন্তু হাতেমের স্ত্রী রোজিনা তা মানেনা। যেকারনে আজ এমন ঘটনাটি ঘটেছে। আলী আহমেদ ও আবদুল মান্নানের ওয়ারিশগনের চলাচলের পথে বেড়া দিয়েছে হাতেম আলী।
এলাকাবাসী বলেন, তাদের সৃষ্ট এই সমস্যা তারা নিজেরাই সৃষ্টি করেছে। ১০/১২ দিন ধরে বাড়ি পরিমাপ করে যে ফলাফল তৈরী করেছে তাতে কোন ওয়ারিশ কিংবা এসিল্যান্ড অফিসের কানুনগোর স্বাক্ষর বা সীলমোহর নেই। যেকারনে হাতেম আলী তা মেনে নিতে চাইছে না। পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি খরচ করেও তাদের এই সমস্যা সমাধান করতে না পারার পিছনে ভূমি পরিমাপ কারকদের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।