বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-টরন্টো রুটে প্রথম ফ্লাইটে যে সরকারি কর্মকর্তারা দেশটি ভ্রমণে যাচ্ছেন তাদের পেছনে রাষ্ট্রের খরচ হবে প্রায় চার কোটি টাকা।ফ্লাইটটিতে অন্তত ২৫ কর্মকর্তার একটি প্রতিনিধি দল টরন্টো যাচ্ছেন। কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের অনুমতিতে বলা হয়েছে, কানাডাতে বিমানের জিএসএ নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা করতেই তাদের এ সফর।
তবে জিএসএ নিয়োগের আলোচনার জন্য কর্মকর্তারা কানাডা সফরে যাচ্ছেন এমন তথ্য স্পষ্ট করেননি খোদ বিমান প্রতিমন্ত্রীই।তিনি বলেছেন, ‘অফিস ঠিক হয়েছে এক মাস আগে। জিএসএ ঠিক হওয়ার পথে। অনেক এয়ারলাইনস জিএসএ ছাড়া চলছে। এটা ছাড়া চলবে না, এমন কোনো কথা নেই।
‘এটার জন্য যাচ্ছে বিষয়টা এমন নয়। আমাদের রেগুলার ফ্লাইট আমরা করতে পারিনি তাই ইন্টিগ্রেশনের বিষয়টি আসছে।’বৃহস্পতিবার হোটেল সোনারগাঁওয়ে কানাডিয়ান হাইকমিশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বল্পসংখ্যক যাত্রী নিয়ে ফ্লাইটটি ২৬ মার্চ রাত ১১টায় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কানাডার টরন্টো পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করবে। এটি ২৭ মার্চ স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৭টায় টরন্টোয় অবতরণের কথা রয়েছে। বিমানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, টিকিট কেটে যে কেউ এই ফ্লাইটে টরন্টো যেতে পারবেন।বিমানের প্রতিনিধি দলে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের পরিচালক মৃধা মো. একরামুজ্জামান এবং প্রতিমন্ত্রীর দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর সফরের খরচ আসবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে। আর বাকিদেরটা দেবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। তাদের শুধু ফ্লাইট টিকিটের খরচ দেবে বিমান। এর বাইরে বিমান প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও মেয়েও প্রতিনিধি দলে থাকছেন, তবে তারা টিকিটসহ নিজেদের পুরো খরচ নিজেরাই বহন করবেন।’
ফ্লাইটটিতে সরকারি কর্মকর্তাদের পেছনে খরচ কত এবং কতজন সাধারণ যাত্রী ভ্রমণ করছেন জানতে চাইলে বিমানের করপোরেট প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক মো. মাহবুব জাহান বলেন, ‘এটায় ম্যাক্সিমাম খরচ হবে চার কোটি টাকা।
‘ফ্লাইটটিতে ৩৬ জন সাধারণ যাত্রী যাচ্ছেন। ৩০ জন ইকোনমি ক্লাসের। প্রতিটি টিকিটের দাম ৭৫ হাজার ৮০০ টাকা। বিজনেস ক্লাসে টিকিট করেছে ছয় জন। প্রতিটি টিকিটের দাম এক লাখ ১১ হাজার টাকা। এগুলো সব ওয়ানওয়ে। আর আসার সময় টিকিট হয়েছে ১৯টা।’তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে পাঁচটা বিজনেস ক্লাস আর বাকিটা ইকোনোমি ক্লাস। টিকিট সোল্ড আউট এটা আমরা কখনও বলিনি। পত্রিকায় বিষয়গুলো আসার পর আমরা বেশ কয়েকটি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছি যে এখনও টিকিট আছে।’
এ সময় কানাডা ফ্লাইটের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন বেসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
তিনি বলেন, ‘গত দুই তিন বছর থেকেই আমাদের প্রত্যাশা ছিল যে কানাডা ফ্লাইটটা আমরা অপারেট করতে পারব। বিভিন্ন সময় এটা আমরা বলেছিও।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে (কানাডা কর্তৃপক্ষ) সবকিছু যখন আমাদের চূড়ান্ত হয়েছে, তখন আমরা টার্গেট করেছিলাম ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে স্মরণীয় করতে ফ্লাইট শুরু করব। এটা সাংবাদিক সম্মেলন করে তুলেও ধরা হয়েছিল। ঠিক সাংবাদিক সম্মেলনের পরে আমরা একটি মেইল পেলাম, সেখানে জানানো হলো, বোর্ডিং সিস্টেম অটোমেটেড করতে তাদের ১২ সপ্তাহ সময় লাগবে। এরপরে আমরা অনুরোধ করি, এই বিশেষ দিনে যাতে প্রথম ফ্লাইটটা আমরা অপারেট করতে পারি। এ ব্যবস্থা যাতে তারা করে।’
তিনি বলেন, ‘এরই অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ প্রথম ফ্লাইটটি যাচ্ছে। এটা কোনো জিএসএ নিয়োগ না কোনো কিছুই না। আমাদের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত। তাদের প্রস্তুতির জন্য তারা ১২ সপ্তাহ সময় চেয়েছে। জিএসএ নিয়োগের জন্য কেউ যাচ্ছে না।আমাদের জন্য কিন্তু এটা একটা প্রেস্টিজ ইস্যু। কানাডার সাথে ফ্লাইট অপারেট করা। আমরা চিন্তা ভাবনা করেই অপারেট করছি। ২৬ মার্চ ফ্লাইট শুরুটা জরুরী ছিলো। এটা প্রেস্টিজ, কানাডায় ফ্লাইট আমাদের প্রেস্টিজ ইস্যু। আমরা বেছে নিয়েছিলাম ২৬ তারিখ থেকে ফ্লাইট শুরু হবে।’
অবশ্য কতজন সরকারি কর্মকর্তা শেষ পর্যন্ত যাচ্ছেন সে সম্পর্কে কিছু জানাননি তিনি।
টরন্টো রুট বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হবে কি না জানতে চাইলে বিমান পরিচালক মাহবুব জাহান বলেন, ‘২৬ তারিখ যে ফ্লাইটটা যাচ্ছে সেটাতে আমাদের নির্ধারিত যে রুট রাশিয়ার উপর দিয়ে, সেটা দিয়ে যাচ্ছি না। যেহতু এখন সেখানে যুদ্ধ চলছে তাই আমরা বাইপাস করে যাব। এ কারণে আমাদের ফ্লাইটের ডিউরেশন দুই ঘণ্টা বেড়ে যাবে।যখন স্বাভাবিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হবে তখন যাওয়ার সময় লাগবে ১৬ ঘণ্টা আর আসার সময় লাগবে ১৫ ঘণ্টার মতো। যেহতু ফ্লাইট টাইমটা বেড়ে গেছে, এ কারণে উদ্বোধনী ফ্লাইটে ১৩০ থেকে ১৪০ জন যাত্রী যেতে পারবে। যখন স্বাভাবিক ফ্লাইট করব তখন ২২০ থেকে ২৩০ জন যাত্রী আমরা নিতে পারব। কারন দুই ঘণ্টা সময় কমে যাচ্ছে। এতে প্রায় ১২ টন তেল কম লাগবে। ১২ টন তেল কম নিলে ৮০ জন যাত্রী অতিরিক্ত নেয়া যায়। সে হিসেবে এটা ভায়াবেল হবে।’তিনি বলেন, ‘আমরা মার্কেট রিসার্চ করেছি যে কোথাও হক (ট্রানজিট) দিয়ে যাওয়ার চেয়ে ২০০ থেকে ৩০০ ডলার বেশি দিয়ে যাত্রীরা সরাসরি ফ্লাইট প্রেফার করেন। আমাদের প্রোডাক্টটা যেহতু প্রিমিয়াম হবে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা ১০-২০ হাজার টাকা বেশি দিতে রাজী থাকবেন বলে আমরা আশা করি।
‘লং রুটে ফ্লাইট করতে গেলে এক্সট্রা তেল নিতে হলে একটু রুট পেনাল্টি দিতে হয়।টরন্টো রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ২৯৮ আসনের বোয়িং সেভেন এইট সেভেন ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ব্যবহার করছে বিমান। উড়োজাহাজটি একটানা ১৬ ঘণ্টা উড়াল দিতে পারে।’