চাঁদপুরের মতলব উত্তরে সূর্যমুখী ফুল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন এক নব তরুন কৃষি উদ্যোক্তা “মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি উদ্যোক্তা পরিষদ” এর অন্যতম সদস্য জাহিদ হাসান মিঠু।
ফুল কম-বেশি সবাই ভালোবাসেন। কেউ কিনতে, কেউ চাষ করতে, আবার কেউ তার সৌন্দর্য দেখতে। এজন্য সবাই ফুলের কাছে ছুটে যান। আর এ ফুল যদি হয় শস্য ক্ষেতের সুন্দর হলুদ সূর্যমুখী, তাহলে তো কথাই নেই। এমনই এক চিত্র দেখা যায় চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ ইউনিয়নের তাতুয়া গ্রামে , যেখানে অসংখ্য ফুলপ্রেমী প্রতিদিন জড়ো হন সূর্যমুখী বাগানের সৌন্দর্য দেখতে।
বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার। যতদূর চোখ যায়, সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ১ বিঘা জমিতে এই দৃষ্টিনন্দন সূর্যমুখী ফুল চাষ করে সাড়া ফেলেছেন জাহিদ হাসান মিঠু নামে এক নব তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সুষ্ঠু পরিবেশ হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাগানে ছুটে আসছেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রকৃতি প্রেমীরা।
মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও দর্শনার্তীদের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করেত চাইছেন না কেউ। সেইসঙ্গে সেলফি, গ্রুপ ছবি তো আছেই। সবুজ মাঠের এই হলুদ রঙ ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা।
একগুচ্ছ ফুলের সঙ্গে দর্শনার্থী মেয়েরা সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে যেন হাসছেন। দৃষ্টিকাড়া ফুলের মধ্যে মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো। এই চিত্র চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার সুলতানাবাদ এলাকার সূর্যমুখী বাগানের। বর্তমানে এই ফুলের বাগান আশেপাশের মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পুরো দিনই হচ্ছে মানুষের সমাগম।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সূর্যের ঝলকানিতে হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল, সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে তার দিক পরিবর্তন হয়।
সবুজের মাঝে হলুদ সূর্যমুখী ফুলের শোভা উপভোগ করতে বিনামূল্যে নয়, বাগানে ঢুকে নিজেকে রাঙাতে হবে গুণতে হয় মাথাপিচু ২০ টাকা।
অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা। রোগবালাই রোধে ও পরিপক্ক বীজ পেতে জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করতে হয় ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। সূর্যমুখী ফুলের বীজের রঙ কালো। প্রতিটি মাথায় বীজের সংখ্যা থাকে ৫০০-৬৫০টি। বীজ বপন থেকে পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিন লাগে ফসল সংগ্রহ করতে।
সূর্যমুখী ফুলের বাগান মালিক জাহিদ হাসান মিঠু বলেন, ‘তিনি পেশায় একজন কিন্ডারগার্ডেন এর শিক্ষক ছিলেন। করোনা কালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তিনি জীবিকার তাগিদে কৃষিতে যোগ দেন। কৃষিতে এসে সফলতার সাক্ষর থেকেই কৃষির প্রতি তার প্রবল আগ্রহ জন্মে। তাই মূলত বীজ সংগ্রহ, সেই সাথে তেল আর গরুর খামারের জন্য খৈল তৈরিতে এ বছর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় এক বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেন। পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় আগামী বছর ১৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এছাড়া এ মৌসুমে তিনি ২ বিঘাতে ধান ৪ বিঘাতে একক এবং সাড়ে চার ৪ বিঘাতে দুইজনে শেয়ারে ভুট্টা চাষ করেছেন।
বাগানের ফুল দেখতে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী ভিড় করছেন।’ তার এই সফলতা দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন সূর্যমুখী চাষ করার।
সূর্যমুখী ফুলের বাগানে ঘুরতে আসা পর্যটকরা বলেন, সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকে। সন্তানদের এর কারণ ব্যাখ্যা করেছি এবং দেখিয়েছি। শহরের কোলাহল থেকে একটু প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতেই পরিবারকে নিয়ে এখানে আসা।
সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসা আরেক দর্শনার্থী তানিয়া আক্তার বলেন, ‘শহরের ঘরবন্দী থেকে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। তবে এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য ফেমে বন্দী করছি।’
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাসাবাড়িতে বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগান করা যায়। কিন্তু সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা খুব একটা হয়ে উঠে না। এছাড়া একসঙ্গে অনেক সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরে যায়।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে চাঁদপুর থেকে ঘুরতে আসা অপর এক দম্পতি বলেন, ফেসবুকে দেখার পর আমাদের কাছে ভালো লাগে তাই পরিবারকে নিয়ে হলুদের রাজ্যে আসা। খোলামেলা পরিবেশ, উপরে নীল আকাশের সঙ্গে প্রকৃতির হলুদ মিলে একাকার এক নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে পেলাম।
সুলতানাবাদ ইউনিয়ন এর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ইমন সাহেব বলেন, ‘সূর্যমুখী চাষের ফলে এখানে পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। প্রকৃতি থেকে তারা আনন্দ লাভ করছে। সূর্যমুখী তেলে লিনোলিক নামক এসিড রয়েছে, যা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সালাউদ্দিন সাহেব বলেন, ‘সূর্যমুখীর বৈজ্ঞানিক নাম হলো হেলিয়ান্থাস অ্যানুয়াস। সূর্যমুখী ফুল অল্প পরিশ্রমে চাষ করা যায়। রোগবালাই খুব কম হয়। এ ফুলের বাগান তৈরিতে খরচ হয় বিঘা প্রতি পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা। এ ফুলের বীজ থেকে তেল তৈরি হয়। এতে থাকা লিনোলিক এসিড ভালো রাখে হৃদপিন্ডকেও। সূর্যমুখী ফুলের বাগান যাতে আরও বৃদ্ধি পায়, সে জন্য উদ্যোক্তাদের কৃষি বিভাগ থেকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।