মোহাম্মদ আব্দুল গাফফার দেশের ক্রিড়া-অঙ্গনের অতি সুপরিচিত একটি নক্ষত্রের নাম। স্কুল জীবন থেকে তিনি বিভিন্ন স্কুল ও ক্লাবের হয়ে বয়স ভিত্তিক দল গুলোতে নিয়মিত খেলতেন স্বনামধন্য এই ফুটবলার।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ১৯৭৭ সালে শান্তিনগর ক্লাবে মূল দলে খেলার মাধ্যমে পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।
পরবর্তীতে অসাধারণ ক্রিড়া নৈপুণ্য পারদর্শিতার জন্য পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে । একে একে দেশ সেরা মোহামেডান আবাহনী, ওয়ান্ডার্স সহ বিভিন্ন ক্লাবে নিয়মিত খেলতেন তিনি। ১৯৮০ সালে জাতীয় দলের হয়ে খেলা শুরু করেন। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় দলের নিয়মিত খেলোয়াড় ছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে দেশ বিদেশে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ফুটবলের মাঠ।
১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে ওবায়দুল কাদের -জাহাঙ্গীর কবির নানক পরিষদ থেকে ডাকসু নির্বাচনে ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদক পদে লড়ে স্বল্প ব্যবধানে হেরে যান এই কৃতি ফুটবলার।
তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনে দেশ-বিদেশ থেকে জিতেছেন অসংখ্য পুরুষ্কার,দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পেয়েছেন অসংখ্য সন্মাননা।
উল্লেখযোগ্য পুরুষ্কারের মধ্যে ক্রীড়াঅংঙ্গনে অসামান্য অবদানের জন্য ২০১২ সালের জাতীয় ক্রীড়া পুরুষ্কার লাভ করেন ,যা তিনি প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে গ্রহণ করেন। এছাড়া ক্রীড়ানুরাগী হিসেবে বিশেষ অবদানের জন্য ২০২০ সালে মহাত্মা গান্ধী গোল্ডেন এ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
একজন পরিচ্ছন্ন বিনয়ী পরোপকারী রাজনৈতিক নেতা হিসেবেও সুপরিচিতি রয়েছে তাঁর। সে সুপরিচিতি থেকে ১৯৯৪ সালের ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে সাবেক (৪০ নং)বর্তমান ২৭ নং ওয়ার্ড থেকে বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালন করছেন ২০০২ সাল পর্যন্ত। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন মেয়র হানিফের অনুপস্থিতিতে এক মাসের জন্য অবিভক্ত ঢাকার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরের যুব ও ক্রিড়া বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।এছাড়াও বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনের কার্যকরি কমিটির সদস্য ও নাজনীন স্কুল এন্ড কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উনার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রসূলপুর গ্রামে। তিনি একই গ্রামের মৃত হাসিম উদ্দিনের পুত্র । তাঁর বাপ-চাচারা আট ভাই দুই বোন। তার মধ্যে হাসিম উদ্দিন সরকার ও তার ভাই তাহের উদ্দিন সরকার (বাতু) ব্রিটিশ শাসনামলের শেষের দিকে ঢাকা চলে যান। সেখানে তারা ঠিকাদারি পেশায় জড়িত হন।পরবর্তী সময়ে সংসার জীবন শুরু করে ঢাকাতেই তারা স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। ঢাকাতেই জন্ম হয় এই কৃতিমান ফুটবলারের। এই জাতীয় তারকা ফুটবলারের অন্য চাচা ও বংশধরেরা রসুলপুরের মূল বাড়ি সহ নান্দাইল ও ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছেন।
আঃ গাফফার জানান, আমার জন্ম বেড়ে উঠা ঢাকায় হলেও আমি তো মূলত ময়মনসিংহ তথা নান্দাইলের মানুষ। আমার বংশধরেরা সবাই সেখানে বসবাস করে। তাদের অনেকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।
কৃতিমান এই ফুটবলার সম্পর্কে নান্দাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সিনিয়র সাংবাদিক এনামুল হক বাবুল বলেন,জাতীয় পুরুষ্কার প্রাপ্ত উনার মতো একজন ক্রীড়াবিদ ময়মনসিংহ জেলায় খোঁজে পাওয়া যাবে না, তিনি শুধু নান্দাইল নয় পুরো ময়মনসিংহের গর্ব। উনার ইতিহাস নান্দাইল তথা ময়মনসিংহ জেলাবাসীর জানা উচিত।