কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে জন্মের ৩৪ বছরেও পিতৃত্ব পরিচয় না পেয়ে পিতৃপরিচয়ের দাবি করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়ে অভিযোগ নিয়ে ঘুরছে যুবক।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে প্রায় ৩৪ বছর পূর্বে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বেরুবাড়ী ইউনিয়নের এনামগঞ্জ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও চরমোনাই সমর্থিত হাত পাখা প্রতীক নিয়ে নেওয়াশী ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করা আব্দুল মান্নান কাজের মেয়ে ছামিনা বেগমের সাথে অবৈধভাবে মেলামেশার ফলে শাহিন আলমের জন্ম হয়।
স্বামী ও সন্তানের পরিচয় চেয়ে গ্রামে একাধিক শালিস-বৈঠক করেও পিতৃপরিচয় না পেয়ে দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে অবশেষে প্রায় ৫ বছর আগে ওপারে পাড়ি জমান শাহিন আলমের মা ছামিনা বেগম। বর্তমানে তার গর্ভজাত পুত্র শাহিনের বয়স জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী প্রায় ৩৪ বছর এবং সে দুই সন্তানের জনক। শাহিন আলম ও তার বাবার পরিচয় চেয়ে ঘুরছেন মানুষের দ্বারে দ্বারে। হতদরিদ্র ও নিঃসঙ্গ হওয়ায় তার দাবিতে কর্ণপাত করেনি কেউ।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ৩১ জানুয়ারি শাহিন আলম কে মান্নানের প্রথম স্ত্রীর পুত্র সুমন কৌশলে বাড়ীতে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেধম মারধর ও রুজি রোজগারের একমাত্র অটোরিকশা (মিশু)ও ভেঙ্গে দেয়। এই ঘটনার পর অবশেষে পিতৃ পরিচয়হীন শাহিন নাগেশ্বরী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়।
এ ব্যাপারে স্থানীয় মহৎ ব্যক্তি সামছুল আলম অবসর প্রাপ্ত (বিজিবি) বলেন, এ বিষয়ে আমরা অনেক বার বৈঠক করেছি, কিন্তু আব্দুল মান্নান শাহিনকে তার সন্তান হিসেবে মেনে নিতে নারাজ। তিনি আরও বলেন, ছামিনা বেগম আব্দুল মান্নান এর বাড়িতে কাজ করত, সে দেখতে অনেক সুন্দরী ছিল। তার গর্ভে সন্তান আসার পরে আমি তাকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করি, ছামিনা বেগম বলে- আব্দুল মান্নান আমাকে কু প্রস্তাব দেয়, আমি রাজি না হলে জোর করে আমার সাথে মেলামেশা করে। যার ফলে আমার গর্ভে সন্তান আশে। পরে সে আমাকে বিয়ে করবে বলে অভয় দিত।
ছামিনা বেগমের মা বলেন, মান্নান আমার মেয়ে ছামিনা বেগমকে এবং তার পেটের সন্তানকে মেরে ফেলার জন্য চেষ্টা করে। পরে আমরা ভয়ে আমার মেয়েকে ভুরুঙ্গামারীতে নিয়ে লুকিয়ে রাখি।
আব্দুল মান্নান এর জামাতা অবসর প্রাপ্ত (আরমি ওয়ারেন্ট অফিসার) আব্দুল আজিজ,বলেন, আমি মান সম্মানের দিকে তাকিয়ে আমার চাচা শশুর আব্দুল মান্নানকে শাহিনকে তার পুত্র বলে মেনে নিয়ে বসতবাড়ি করে থাকার মত কিছু জমি দিয়ে ঘর বাড়ি করে দেয়ার প্রস্তাব করি। কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি হয় নি।
অভিযুক্ত মাওলানা আব্দুল মান্নান এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন আপনারা কি চান সেটা বলেন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর মাধ্যমে মীমাংসা করে নিব।
শাহিন আলমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে আমার মাকে ঘুরিয়েছে, আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকেও বছরের পর বছর থেকে আমাকে এভাবেই ঘুরাচ্ছে। আমি আমার পিতার পরিচয় নিয়ে বাঁচতে চাই।
এ বিষয়ে নেওয়াশী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন,আমি বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষকে নিয়ে কথা বলতেছি।যেহেতু বিষয়টি অনেক দিনের এবং ছেলেটির মা বেঁচে নেই, তাই আমরা স্থানীয় ভাবে সমাধান করার চেষ্টা করছি। পিতার পরিচয় পাবে কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন করলে চেয়ারম্যান বলেন, আমরা হয়তো সেটা পারবো না তার পিতার পরিচয় ফিরিয়ে দিতে, কারণ বিষয়টি আদালতের । ছেলেটির একটি গাড়ি ভাংচুর সহ তাকে মারধর করা হয় এই বিষয়টি আমরা সমাধান করার চেষ্টা করছি। তিনি আরো বলেন, পিতার পরিচয় সেটা আইনের ব্যাপার তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি যাতে তার পিতৃপরিচয় ফিরে পায় এবং সে তার অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে।
পিতৃত্বের দাবি নিয়ে শাহিনের পক্ষ থেকে কোনো মামলা বা অভিযোগ দাখিল হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে নাগেশ্বরী সদর থানার ওসি নবিউল হাসান বলেন না এই বিষয়ে কোনো মামলা হয়নি।