শিক্ষাক্ষেত্রে গুনগত বৈপ্লবিক পরিবর্তন করা প্রয়োজন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শমসুল আলম।তিনি বলেন,
শিক্ষাখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। কিন্তু শিক্ষায় জাতীয় বাজেটের যে দুই শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় তা পুরোপুরি ব্যয় হয় না। ৮০-৮৫ শতাংশ ব্যয় হলেও বাকিটা যায় ফেরত। সক্ষমতা ও জনবল সংকটের কারণে এমনটি হচ্ছে।
সোমবার (২৪ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস-২০২২ উপলক্ষে এক ভার্চুয়াল সংলাপে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এ তথ্য দেন।
তিনি বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন দরকার। শিক্ষার যুগোপযোগী পরিবর্তন ও ব্যবস্থাগত উন্নয়নে কেন জোড়ালো দাবি আসছে না তা আমার জানা নাই। এজন্য একটি জোড়ালো শিক্ষা আন্দোলন প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এগিয়ে আসতে পারেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষা খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ১৩ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরকারি করেন, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায়ন হলে ২৬,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয় করন করে যার মাধ্যমে ৪৭ % জড়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে ১৮% এ নেমে এসেছে। আমাদের এই ১৮% ড্রপ আউট ও কমাতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিড ডে মিলের ভুমিকা রয়েছে। তিনি বলেন সরকারের এর পাশাপাশি মিড ডে মিলে বেসরকারি ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান,সেচ্ছাসেবী সংগঠন ও অংশ নিতে পারেন। এতে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সবার জন্য শিক্ষার সুযোগ তৈরি করা। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থায় অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। সংখ্যাগত শিক্ষার হার বেড়েছে অনেক। তবে মানসম্মত শিক্ষা থেকে আমরা পিছিয়ে আছি। এখনো গুনগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হয়নি। শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক আন্দোলন প্রয়োজন। এ আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত দেশে সর্বজনীন বাধ্যতামূলক শিক্ষা করা প্রয়োজন। প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা প্রয়োজন। সরকার সে দৃষ্টিতে এগুচ্ছে।যার কারণে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবর্তে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হচ্ছে।
তিনি বলেন শিক্ষার নামে অনেকে বাণিজ্য করছে। কেউ আবার সনদ বিক্রি করছে। এমনকি দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ছাড়া চলছে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম।
তিনি বলেন, আমরা মানবসম্পদ তৈরি থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। ফলে আমাদের শ্রমিকরা বিদেশে গিয়ে অল্প মজুরি পাচ্ছে। সেখানে তাদের শিকার হতে হচ্ছে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায়।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম
আলোচনায় অংশ নেওয়া গবেষকরা বলেন, ঝড়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ফিরে যাওয়ার পথ সহজ নয়। অনেক মেয়ে বাল্যবিয়ে, কাজে যুক্ত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ঝড়ে যাচ্ছে। পরে তারা পড়ালেখায় ফিরে আসতে চাইলেও তা সহজে পারছে না। সে জন্য নৈশ স্কুলের সংখ্যা বৃদ্ধি ও গ্রামের স্কুলে রাতের শিফটে ক্লাস চালু করার দাবি জানান তারা।
এ প্রসঙ্গে রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ঝড়েপড়া মেয়েদের পড়ালেখায় ফিরিয়ে আনতে তাদের জন্য উপবৃত্তি চালু করা প্রয়োজন।
আরেক গবেষক প্রাবন কান্তি ঘোষ বলেন, গ্রামে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েরা আসতে চায় না। সেখানের মানুষ মনে করে এসব কাজ ছেলেদের জন্য, মেয়েরা কেন এসব বিষয়ে পড়ালেখা করবে। অনেক কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় বড় ল্যাব করা হলেও সেখানে ইন্সট্রাকটর নেই বলে সেগুলো নষ্ট হওয়ার পথে। অনেক দুর্গম এলাকায় শিশুরা ক্ষুধার জন্য ছুটি হওয়ার আগে স্কুল ছেড়ে বাসায় চলে যায়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক জেলায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
অপর আলোচক বলেন, প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের দুপুরে পুষ্টিকর খাবার বিতরণ করতে নির্দেশনা দিলেও সেটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। দেশের অনেক জেলার স্কুলে পুষ্টিকর বিস্কুট বিতরণ করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কারিগরি ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকে আলাদা করে দেখা হয় বলে আমাদের শিক্ষার মান বাড়ানো যাচ্ছে না। সব স্তরের শিক্ষাকে অভিন্নভাবে সাজাতে হবে। শিক্ষার গতি এক না হলে তা কল্যাণে আসবে না। আমাদের উচ্চশিক্ষার অনেক সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসককে যদি প্রশাসনের দায়িত্বে বসানো হয় তবে জটিলতা তৈরি হবে। সংখ্যা দিয়ে কোনো দেশের শিক্ষার মান বিবেচনা করা যাবে না।
শিক্ষাবিদ কাজী খলিকুজ্জামান বলেন, শিশুদের জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হলে আগে শিক্ষা আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। ২০১০ সালে এ আইন প্রণয়ন করা হলেও এখনো তা ঝুলে রয়েছে।
শিক্ষা সংলাপ সঞ্চালনা করেন আয়োজন প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী রাশেদা কে চৌধুরী।