৮ জানুয়ারি ১৯৭২ আজকের এইদিনে পাকিস্তানের নারকীয় মৃত্যুকূপ থেকে মুক্তিলাভ করেন স্বাঙালির মুক্তিদাতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রকারান্তরে সেদিন বাংলাদেশ-ই মুক্তিলাভ করেছিলো ।
কেননা বঙ্গবন্ধুই মানেই তো বাংলাদেশ। তিনি পরাধীনতার ইতিহাস থেকে বাঙালির পরিত্রাতা হিসেবে সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদপুষ্ট হয়ে জন্ম নিয়েছেন। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির প্রমিথিউস কালজয়ী ভূমি-সন্তান। সম্ভ্রান্ত জীবনের সমগ্র আতিশয্য আরাম আয়েস পরিত্যাগ করে লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যিনি হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করেন বাঙালি জাতিকে।
সেদিন দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রথম পাতার প্রধান শিরোনামটি ছিল,
‘পাকিস্তানি জঙ্গীশাহীর জিন্দানখানা হইতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি লাভ’। সাথে অন্য একটি শিরোনাম ছিল, “স্বাধীনতা হরণের জন্য শত্রু এখনও সক্রিয়”।
এই লাইনটি বর্তমান প্রেক্ষাপটেও শতভাগ সত্য। বাংলা ও বাঙালির শত্রুরা এখনো সক্রিয় আছে! দেশে বিদেশে কসাই টিক্কা খানের বীর্যবাহকরা সক্রিয় রয়েছে এ পতাকাকে খুবলে খেতে। অন্যদিকে নষ্ট কীট পতঙ্গের ন্যায় তাদের অগুনতি রিপ্রোডাকশন অব্যাহত রয়েছে।
আপনারা সচেতনভাবে নিজ নিজ এলাকায় পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝবেন যে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সন্তান সন্তুতির চেয়ে জামায়াতে ইসলাম সমর্থকদের সন্তান সন্তুতির পরিমাণ বেশি। এর কারণ হিসেবে শিক্ষিত আধুনিক বাঙালিরা তাদের অশিক্ষা অনগ্রসরতা পশ্চাৎপদতাকে দায়ী করেন। তবে আপনাদের ঝেড়ে কাশা উচিত বলে মনে করছি। এই বিষয়টির পেছনে জামায়াতে ইসলাম ও তাদের অনুরাসারীদের পশ্চাৎপদতা বা অনগ্রসরতা নয় বরং সুদূরপ্রসারী পরিকল্পিত রাজনৈতিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিহীত রয়েছে।
বাংলাদেশের আধুনিক শিক্ষিত জনগণ দেশ ও সমাজের কল্যাণার্থে পশ্চিমা পরিবার পরিকল্পনা প্রক্রিয়া গ্রহণ করে সাধারণ ছোট ও অণু পরিবার গঠন করেন । তবে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশের প্রতি বিএনপি জামায়াতিরা কোন দায়বদ্ধতা অনুভব করেনা। তারা শুধু চায় এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে তাদের প্রিয় পাকিস্তানের আদর্শ কায়েম করতে। তাদের হীনউদ্দেশ্য বাস্তবায়নে যেকোন জঘন্য ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা গ্রহণে তারা অব্যাহতভাবে তৎপর রয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে, বিএনপি জামায়াতপন্থীদের তুলনামূলক অস্বাভাবিক বড় পরিবার গঠনের প্রবণতা তাদের হীন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনারই অংশ। অতীতে তারা রাষ্ট্রীয় শাসনক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতার মাধ্যমে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সকল সেক্টরে শিবির ছাত্রদলের ক্যাডারদের চাকুরি প্রদান করেছে।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ২০০১-৬ বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে বিসিএস ক্যাডার অফিসার নিয়োগের তালিকা তৈরি করা হতো মধুর ক্যান্টিনে শিবির ছাত্রদলের শীর্ষনেতার মাধ্যমে। খালেদা নিজামী জোট সরকার সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতা অপ্রতুল রেখেছিল যাতে সাধারণ জনগণ সরকারি চাকরি গ্রহণে আগ্রহী না হয়।
আর এই সুযোগে তারা সুকৌশলে দেশ ও জাতির সাথে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের দলীয় অযোগ্য বদমায়েশ ক্যাডারদের জনগণের টাকায় জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করেছে। আর এভাবেই রাষ্ট্রযন্ত্রে দুর্নীতির রামরাজত্ব কায়েম করেছিল বিএনপি জামায়াত। শাসনামলের ৫ বছরে দুর্নীতিতে ৫ বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করে বিশ্বের বুকে কলঙ্কিত করেছিল বাংলাদেশকে।
আজকের দিনে তারই ধারাবাহিকতায় আজ ক্ষমতাচ্যুত অপশক্তি ভিন্ন উপায়ে বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। নিজেদের শাসনামলে দুর্নীতির মাধ্যমে এদেশের জনগণের থেকে হাতিয়ে নিয়েছে বিপুল অর্থ, প্রতিষ্ঠা করেছে টেলিভিশন,সংবাদপত্র, ব্যাংক, হাসপাতাল,বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা লাভজনক প্রতিষ্ঠান।
জনগণ থেকে চুরি করা অর্থ দিয়ে বর্তমানে তারা দলীয় অর্থায়নে হাজার হাজার ছাত্রদল শিবির ক্যাডারকে দেশ বিদেশে পরিকল্পিতভাবে পড়ালেখা করাচ্ছে। নিজ দলীয় প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের বিভিন্ন দেশি বিদেশি গণমাধ্যমের সাংবাদিক, লেখক,মানবাধিকারকর্মী, আইনজীবীসহ নানা অরাজনৈতিক ছদ্মবেশে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে চলেছে।
তাদের নিয়োজিত পেইড প্রোপাগান্ডা বিশেষজ্ঞরা প্রোঅ্যাক্টিভলি ইন্টারনেটে মিথ্যা তথ্য গুজব ছড়িয়ে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল করতে সদা ব্যস্ত রয়েছে। যা নানা ইস্যুতে দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন। যার মধ্যে পদ্মাসেতু নিয়ে নানা গুজব। অতিসাম্প্রতিককালে প্রতিমার কাছে বিএনপি জামায়াত নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে পবিত্র কোরান রেখে ধর্মীয় উস্কানি ছড়িয়ে দিয়ে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বাস্তবায়নের জঘন্য চেষ্টা করা হয়েছে যা পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
গত কিছুদিন ধরে বিএনপি সচিব ও পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা সমান্তরালভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে চলেছে। তাদের বেতনভুক্ত প্রোপাগান্ডা বিশেষজ্ঞরা বিদেশে বসে ভুয়া ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে একের পর এক দেশবিরোধী মিথ্যাচার ও গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার সময় বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দেন যে, ‘আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিয়েছি, যাও তাকে সংরক্ষণ করো।'(১)
অতএব, বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণকে জাতির পিতার অমোঘ নির্দেশনা অনুরসরণ করেই চলতে হবে। বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিকে আত্মতুষ্টিতে না ভুগে বাংলাদেশের শত্রুদের সম্পর্কে সজাগ দৃষ্টি রেখে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হওয়া অবশ্য করণীয়।