যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কেবল মুসলিম জনপ্রতিনিধিরা একটি শহর পরিচালনার দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন। ওই শহরের মেয়র থেকে শুরু করে নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধিই মুসলিম। আগামী বছরের শুরুতেই শহরের শাসনভার তুলে নেবেন তারা।
গত শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন। প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ওই শহরের নাম হ্যামট্রামক। এটি দেশটির মিশিগান অঙ্গরাজ্যের একটি শহর।
সিএনএন বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম পুরোপুরি মুসলিম জনপ্রতিনিধি পরিচালনাধীন শহর হিসেবে স্থান পেতে যাচ্ছে হ্যামট্রামক। কারণ হ্যামট্রামকের সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত সব সদস্য মুসলিম।
প্রথম মুসলিম হিসেবে শহরটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন আমির গালিব। ইয়েমেনি বংশোদ্ভূত আমির পেশায় একজন চিকিৎসক। আগামী ২ জানুয়ারি মেয়র আমির গালিবসহ হ্যামট্রামকের সিটি কাউন্সিলের নির্বাচিত সকল জনপ্রতিনিধি শহরটির দায়িত্ব নেবেন।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়, গত নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে হ্যামট্রামক শহরের সিটি কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে মেয়র পদে আমির গালিবসহ মোট ছয়জন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। তাদের সবাই মুসলিম। এছাড়া প্রথমবারের মতো একজন এশীয় বংশোদ্ভূত বা মুসলিম হিসেবে গালিবের মেয়র পদে বিজয়ী হওয়াকে বড় পরিবর্তন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিএনএন বলছে, ৯৯ বছর আগে হ্যামট্রামক সিটি কাউন্সিল গঠিত হয়। এরপর থেকে এতোদিন শহরটির মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালন করা সকলেই ছিলেন পোলিশ আমেরিকান। তবে আগামী ২ জানুয়ারি সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়তে যাচ্ছে। কারণ ওইদিনই আমির গালিবসহ পুরো সিটি কাউন্সিলের নতুন নির্বাচিত মুসলিম জনপ্রতিনিধিরা শপথ নেবেন।
দশকের পর দশক ধরে মিশিগানের ‘ছোট ওয়ারশ’ বলে পরিচিত হ্যমট্রামক শহরটি। এর আয়তন মাত্র দুই বর্গ মাইল এবং এর পুরোটাই বাড়ি-ঘর ও কল-কারখানায় ঠাসা। আরও ভালোভাবে বললে ডেট্রয়েট শহর থেকে থুতু ফেলার দূরত্বে অবস্থিত হ্যামট্রামক শহরটি।
ছোট্ট এই শহরে ৩০টিরও বেশি ভাষায় মানুষ কথা বলেন। যেন বিশ্বের সকল বৈচিত্র্যময়তা এখানে এসে একসঙ্গে মিলিত হয়েছে। অথচ এ শহরে মাত্র ২৮ হাজার লোকের বসবাস। কাউন্সিল নির্বাচনে মুসলিম প্রার্থীদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শহরটি মার্কিন ইতিহাসের পাতায় অনন্য স্থান অধিকার করেছে।
বছরের পর বছর ধরে নানা ধরনের বৈষম্যের সম্মুখীন হয়ে সেখানকার মুসলিমরা এখন হ্যামট্রামক শহরের মূল শক্তিতে পরিণত হয়েছে। শহরের সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে মুসলিমদের মধ্যে এখন ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। শহরের বৈচিত্র্যময়তা ও বহু-সংস্কৃতিকে ধারণ করে তারা এ শহরের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
এদিকে মুসলিম হলেও দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নবনির্বাচিত মেয়র আমির গালিব এবং সিটি কাউন্সিলের সদস্যরা। তারা বলছেন, এটিই যুক্তরাষ্ট্রের আইন এবং তাদের ইচ্ছাও মূলত সেটিই।