চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার নাহারা গ্রামে সোমবার রাতে শ্রী শ্রী সার্বজনীন কালি মন্দিরের কালী দেবীর ৮টি প্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
এছাড়া দুর্বৃত্তরা ভাংচুরকৃত মূর্তির দুটি মাথা পাশ^বর্তী তেতৈয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মসজিদের ভিতরে সুকৌশলে রেখে যায়। পরে ওই মসজিদের মুয়াজ্জিন জাহাঙ্গীর আলম ফজরের আযান দিতে এসে দৃশ্য দেখতে পেয়ে ভয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে যায়। পরে মুসল্লিদের সহযোগিতায় মূর্তির ওই মাথা গুলো বাহির করে স্কুলের বারান্দা রাখা হয়।
নাহারা সার্বজনীন কালি মন্দিরের সভাপতি গৌরাঙ্গ সূত্রধর দৈনিক বাংলার অধিকার কে বলেন, মঙ্গলবার ভোরে নিত্যদিনের মতো পূজা দিতে এসে প্রিয়লাল বালা প্রতিমা ভাংচুরের দৃশ্য দেখতে পায়। তবে কে বা কাহারা এ ঘটনা করেছে তা কেউ বলতে পারে না।
তিনি বলেন, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করছি।
স্থানীয় অধিবাসী ভরথ চন্দ্র সূত্রধর,দুলাল চন্দ্র সরকারসহ আরো অনেকে জানান, নাহারা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসব নিয়ে বৈষ্য ও ইসকন অনুসারীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে তিন ভাগে দ্বিধা বিভক্ত রয়েছে বলে । এদের একজন অন্যজনের প্রসাদ গ্রহন করেননি। আর এ দ্বিধাবিভক্তি বিষয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক হয়েছে।
খবর পেয়ে চাঁদপুর জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস, চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ পিপিএম (বার),অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) সুদীপ্ত রায়, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (কচুয়া সার্কেল) মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সুলতানা খানম,কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপায়ন দাস শুভ, কচুয়া থানার ওসি মো. মহিউদ্দিন,ওসি তদন্ত ছানোয়ার হোসেন,ইউপি চেয়ারম্যান কাজী জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর,জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক তমাল ঘোষ,কচুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মানিক ভৌমিক,কচুয়া উপজেরা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ফণীভূষন মজুমদার তাপু,সাধারন সম্পাদক বিকাশ সাহা সহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
নাহারা সার্বজনীন কালি মন্দিরের সভাপতি গৌরাঙ্গ সূত্রধর জানান , মঙ্গলবার ভোরে নিত্যদিনের মতো পূজা দিতে এসে প্রিয়লাল বালা প্রতিমা ভাংচুরের দৃশ্য দেখতে পায়। তবে কে বা কাহারা এ ঘটনা করেছে তা কেউ বলতে পারে না।
পরিদর্শন কালে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, আমরা এখানে এসে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ স্থানীয় মেম্বার চেয়ারম্যান ও গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের সাথে কথা বলেছি।
এতে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এটা নিজেদের মধ্যে দ্বিধাদ্বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা আছে তবে আমরা তদন্ত করে দেখব বিষয় টি।
যারা ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তারা এ কাজ করেছে। আমরা সকলের সহযোগিতা নিয়ে দুর্বৃত্তদের খুঁজে বের করে শান্তির সম্মূখীন করব। তিনি আরো বলেন, ধারনা করা হচ্ছে হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার জন্য একটি মহল সুকৌশলে ঘটনাটি করেছে।
ভবিষ্যতে যেন এধরনের ঘটনা না হতে পারে তাই সবাইকে সজাগ দৃষ্টি থাকতে হবে।
চাদঁপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদ দৈনিক বাংলার অধিকার কে জানান , এ ঘটনাটি খুবই জগন্যতম অপরাধ। এ অপরাধের সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতা এনে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সমস্যা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ ভাংচুরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা কোন ধর্মেরই অনুসারী হতে পারেনা। তাদের কোন ধর্ম নেই। যারা ঘটনা ঘটিয়েছে অচিরেই তাদের সন্ধান করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ ঘটনা নিয়ে আর যাতে সমস্যা সৃষ্টি হতে না পারে সেজন্য আমরা সজাগ রয়েছি।
কচুয়া উপজেলা চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সুলতানা খানম বলেন, মন্দিরে প্রতিমা ভাংচুরের বিষয়টি খুবই দু:খজনক। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা মারাত্মক অন্যায় করেছেন। সবাইকে ধৈর্য ধারন করে বিষয়টি মোকাবেলা করার আহ্বান জানান তিনি।
পরে প্রশাসনের নির্দেশে আসন্ন দুর্গা পূজা উদযাপনের নাহারা সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সনতোষ চন্দ্র সেনকে আহবায়ক ও ডা. মানিক মজুমদার সোহাগকে সদস্য সচিব করে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি পূজা উদযাপন কমিটি গঠন করা হয় ।
কচুয়া: কচুয়ার নাহারা গ্রামে প্রতিমা ভাংচুরকৃত স্থান পরিদর্শন করছেন চাঁদপুরের ডিসি ও এসপি সহ অন্যান্যরা।