জেলার বিরামপুর উপজেলার পাশ্ববর্তী নবাবগঞ্জ উপজেলা ও বিরামপুর থেকে ১৫ কিঃ মিঃ উত্তরে আফতাবগঞ্জ বাজারে ” আফতাব ” পরিবারের নিজস্ব অর্থায়নে তৈরি আগঁরার তাজমহলের আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল কারুকার্য সম্পূর্ণ এ মসজিদ। সম্রাট শাহাজাহান তাঁর ভালোবাসার স্মৃতিকে যুগে যুগে মানুষের মনে বেঁচে থাকার জন্য তৈরি করেছেন বিশাল তাজমহল। আর এই তাজমহলের নাম উচ্চারিত হলেই স্মৃতিতে ভেসে ওঠে সম্রাট শাহজাহানের তৈরি করা সেই অমর কীর্তির। বিশ্বব্যাপী এক নামেই যার পরিচিতি। উত্তরবঙ্গের সুনামধন্য বৃহৎ পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পট
স্বপ্নপুরী। প্রবেশের আগেই আফতাবগঞ্জ বাজারে গড়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন বিশাল এই মসজিদটি।
দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জে অবস্থিত উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ও বৃহৎ বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। প্রতিদিনই উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার বিনোদন প্রেমী মানুষ একটু বিনোদনের আশায় এখানে ছুটে আসেন। সেই “স্বপ্নপুরীর” স্বত্বাধিকারী দিনাজপুর-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোস্তাফিজুর রহমান (ফিজু) এর বড় ভাই
নবাবগঞ্জ উপজেলা কুশদহ ইউনিয়নের সফল চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ দেলোয়ার হোসেন এবং সু-যোগ্য পুত্র দিনাজপুর-৬ আসনের পর-পর দুইবারের নির্বাচিত বর্তমান মাননীয় সংসদ সদস্য মোঃ শিবলী সাদিক এমপি “আফতাব” পরিবারের নিজস্ব অর্থায়নে আফতাবগঞ্জে এবার বিশ্বখ্যাত তাজমহলের আদলে নির্মাণ করছেন দৃষ্টিনন্দন এ মসজিদ।
নির্মাণকাজ শেষ না হলেও এরই মধ্যে মসজিদটি দেখতে ভিড় করছে বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আফতাগঞ্জ বাজারের পুরোনো মসজিদে স্থান সংকুলান হওয়ায় সেখানে শুক্রবারে জুমার নামাজ পড়াও শুরু করেছেন এলাকার মুসল্লিরা।
দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য এমপি মোঃ শিবলী সাদিক জানান, আমার দাদু মরহুম
ডাঃ আফতাব হোসেনের নামে এই বাজারটির নামকরণ করা হয়। তাঁরই নাম অনুসারে
এই মসজিদটিও নাম করণ করা হয়েছে “আফতাব” মসজিদ। মসজিদটি নির্মাণের
পরিকল্পনা করেন আমার বড় আব্বা দেলোয়ার হোসেন।
চারতলা বিশিষ্ট এই দৃষ্টিনন্দন মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে ১৪২১ সালের পয়লা বৈশাখ। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে তিল তিল করে নিজের তত্ত্বাবধানে মসজিদটি গড়ে তোলেন স্বপ্নপুরীর স্বত্বাধিকারী ও তাঁর বড় আব্বা আলহাজ্ব মোঃ দেলোয়ার হোসেন। তিনি নিজেই এই মসজিদের উদ্যোক্তা। কোন বিশেষজ্ঞ আর্কিটেকচার বা ইঞ্জিনিয়ার ছাড়াই তাঁর নিজস্ব ডিজাইন ও পরিকল্পনায় গড়ে উঠছে মসজিদটি। নিজ পরিকল্পনায় তাজমহলের আদলে তাঁর নিজস্ব মিস্ত্রিদের দিয়ে মসজিদটির নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, চার তলাবিশিষ্ট মসজিদটির নিচ তলায় থাকবে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। যেখানে থাকবে ধর্মীয় বিভিন্ন গবেষণামূলক বই। পাশেই থাকবে সেমিনার কক্ষ। যেখানে ধর্মীয় বিতর্ক কিংবা আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা যাবে। থাকবে তাবলিগ-জামাত কিংবা জ্ঞান অন্বেষণে আসা লোকদের জন্য থাকার সুব্যবস্থাও।
দ্বিতীয় তলা থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত তিনটি ফ্লোরে ২০ হাজার স্কয়ার ফিটের এ মসজিদে প্রায় ৫ হাজার লোকের নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে। তৃতীয় তলায় মহিলাদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা থাকবে। ১৬টি পিলারের ওপর তৈরি এ মসজিদে রয়েছে ৩২টি ছোট মিনার। চার কোনায় রয়েছে চারটি সুউচ্চ গম্বুজ। যেগুলোর প্রতিটির উচ্চতা ৯৭ ফিট। বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত ও ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গ্রানাইট, টাইলস, মার্বেল পাথরসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী দিয়ে মসজিদটি নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়,পুরো এক বিঘা জমির ওপর মসজিদটি বাইরে থেকে দেখতে মনে হবে যেন তাজমহল। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদের দেয়াল, ছাদসহ গোটা মসজিদ জুড়ে বিভিন্ন নকশা, আরবি ক্যালিগ্রাফি ও চাঁদ-তারাসহ বিভিন্ন ডিজাইন স্থান পেয়েছে। সেখানে প্রতিদিন কাজ করছেন রাজমিস্ত্রি ও টাইলস মিস্ত্রিসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক শ্রমিক।
মসজিদটির উদ্যোক্তা আলহাজ্ব মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, আমার বাবা মৃত ডা. আফতাব হোসেনের নামে এই বাজারটির নামকরণ করা হয় আফতাবগঞ্জ। তাঁর হাত ধরে এখানে মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। পূর্বের মসজিটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় ও মুসল্লিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় পারিবারিকভাবে নতুন করে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
কয়েক শতাব্দী পেরোলেও তাজমহল নিজস্ব মহিমায় ভাস্কর থাকায় এর আদলে মসজিদটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য মসজিদ নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মিস্ত্রিসহ একাধিক লোককে সঙ্গে নিয়ে একাধিকবার দেশের বিভিন্ন জেলার মসজিদ এবং তাজমহলসহ ভারতের বিভিন্ন মসজিদ পরিদর্শন করা হয়েছে। আগামী বছর পয়লা বৈশাখে মসজিদটি উদ্বোধনের ইচ্ছা থাকলেও এটি নির্মাণে আরও ২-৩ বছর লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
মসজিদটির নির্মাণ খরচের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, মসজিদ নির্মাণে কোন বাজেট নির্ধারণ করা নেই। মসজিদটি নির্মাণে যত টাকা লাগবে তা ব্যয় করা হবে। বাবার মতো আমরাও এই এলাকায় দৃষ্টিনন্দন ধর্মীয় স্থাপনা করতে চাই।
মসজিদটির নির্মাণ কাজে জড়িতদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো খরচ হয়ে গেছে। নির্মাণ কাজ শেষ করতে আরও সমপরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হবে।