জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রতিটি
গৃহহীন মানুষকে ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এরই অংশ হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৯৫টি. দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের ৫০০টি বাড়ির মধ্যে ১৭০টি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের বাড়ি গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে ইতিমধ্যে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৩০ টি ও তৃতীয় পর্যায়ের ২’শ বাড়ি নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বাড়িগুলো নি¤œমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গিয়েছে উপজেলার ৮ ইউনিয়নের আশ্রয়ন প্রকল্পের তৈরি হওয়া বাড়িগুলোর দেয়াল,ঘরের সিঁড়ি/বারান্দা ফেঁটে গেছে, টিন দিয়ে বৃষ্টির পানি ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। তাছাড়া বাড়িগুলোতে খাবার পানির ব্যবস্থা,
রাস্তার ব্যবস্থা, বিদ্যুতের সংযোগ ইত্যাদি না থাকায় প্রচুর সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া নিচু জায়গায় ঘর নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে দোষীমানি কাঁঠাল গ্রামের উপকারভোগী কুড়ান জানান, গত ছয় মাস হয়ে গেল আমাদের প্রথম পর্যায়ের বাড়ি পাওয়া। কিন্তু বাড়ি পেয়ে বসবাস করতে গিয়ে দেখলাম বাড়ির ওয়াল ফেটে গেছে। বাড়ির সামনে পানি জমে থাকে। চলাচলের তেমন কোন রাস্তার ব্যবস্থা নেই। টিন ফেটে পানি ঘরের ভেতরে ঢুকে যাওয়ার ফলে শুয়ে থাকতে পারা যাচ্ছে না। ঘরের আসবাবপত্রও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপকারভোগী চৌডালা ইউনিয়নের বেলাল বাজারের আয়েশা বেগম জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
বিনামূল্যে আমাদের বাড়ি দিয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু আমরা খুব কষ্টে আছি, কারণ নেই কোন রাস্তা, ফলে কাঁদা পানিতে হাটায় দায়। আলিনগর ইউনিয়নের আমিরুল ইসলাম জানান, তিনি ভাগলপুর প্রকল্পে বিলের মধ্যে বাড়ি
পেয়েছেন। সেখানে নেই কোন রাস্তা ঘাট ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। যার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই আমাদের হাটু ডুবে যায়। আমার একটি ভ্যান ছিল সেটাই আমার রুজি রোজগারের একমাত্র অবলম্বন। দীর্ঘদিন যাবৎ রাস্তার কোন ব্যবস্থা না হওয়ায় আমি ভ্যান বিক্রি করে এখন বেকার বসে আছি। সংসার নিয়ে কঠিন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছি। পার্বতীপুর ইউনিয়নের ধরমপুর প্রকল্পের উপকারভোগী শ্রী গণেশ বলেন, আমাদের বাড়িগুলো নির্মাণ কাজ ভালোভাবে করা হয়নি। ঘরের দেয়ালগুলোতে হাত দিলে সিমেন্ট খসে খসে পড়ে যাচ্ছে। বারান্দার
পিলার ঝুঁকছে। টিনের চাল দিয়ে ঘরের ভিতরে পানি পড়ছে। সিঁড়ি ফেঁটে গেছে। বাড়িগুলো নিচু জমিতে তৈরি করা হয়েছে। এতে করে অল্প পানি হলে ঘরের
বারান্দা পর্যন্ত পানি উঠে যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে জানান, বাড়ী নিয়ে যে সমস্ত অভিযোগ কিংবা সমস্যা শোনা যাচ্ছে তা সমাধানের জন্য
দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে। যেমন নির্মান কাজের ত্রুটি নিয়ে নির্মান শ্রমিক, বিদ্যুৎ সমস্যা নিয়ে নেসকো ও পল্লী বিদ্যুৎ, পানি সমস্যা নিয়ে
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং রাস্তাঘাটের সমস্যা নিয়ে এলজিইডি ও কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, গোমস্তাপুরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণে অনিয়মের কোন সুযোগ নেই। তবে কিছু কিছু জায়গায় মাটি খারাপ হওয়ার কারনে বাড়িগুলোতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এখানে
আমাদের করার কিছু নেই। তাছাড়া রাস্তাঘাট,বিদ্যুৎ ও পানি সমস্যার সমাধান পর্যায়ক্রমে করা হবে।
প্রসঙ্গত, গত ০২ আগষ্ট রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. হুমায়ূন কবির আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর বাড়ি পরিদর্শনে এসে নির্মান কাজে ব্যাপক ত্রুটি দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানকে তিরস্কার করেন। তিনি দ্রুত বাড়ী নির্মানের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য ব্যবস্থা নিতে বলেন। উল্লেখ থাকে যে, চলতি বছরের ২৮ এপ্রিল জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় বাড়ি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করা হয়। সেখানে ১৮টির অধিক বাড়িতে কেউ না উঠার কথা বর্ণনা ছিল। অথচ প্রথম ধাপের সেই ১৮টি বাড়ির
মধ্যে এখনও অনেক বাড়িতেই উপকারভোগীরা উঠেনি।