হাওয়াই মিঠাই এটি একটি বাংলার ঐতিহ্যবাহী মিঠাইয়ের নাম। এখনো এটি গ্রামের মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় খাবার। এক সময় ‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামাঞ্চলে বেশি দেখতে পাওয়া যেতো। কিন্তু, কালের বিবর্তনে আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় এটি এখন আর খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তা এখনো একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি।
হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই নিমিষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। বানানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখে দিয়ে খেতে হয় এটি। পেট ভরে না এ মিঠাইয়ে। তবে খেতে খুব মিষ্টি। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু। দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা এই মিঠায়ে বেশি আনন্দ পায়। বড়রাও এর স্বাদ থেকে পিছিয়ে থাকেন না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই মিঠাইয়ের প্রতি।
ঐতিহ্য গতভাবে বাংলার বিভিন্ন মেলা এবং গ্রামের পথে ঘাটে পাড়া মহল্লায় বিশেষ করে ধান কাটার মৌসুমে দেখা পাওয়া যায় হাওয়াই মিঠাই ফেরিওয়ালাদের।
পিতল বা কাঁসার ঘন্টায় টিং টিং শব্দ তুলে শিশু-কিশোরদের দৃষ্টি কাড়ে তাঁরা। হুমড়ি খেয়ে পড়ে, তাঁদের ঘিরে ধরে শিশু কিশোরের দল।
শুধুমাত্র চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো ‘যাতা’য় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় এই ‘হাওয়াই মিঠাই।
দিনাজপুর জেলার বিরামপুর পৌর শহরের মামুদপুর গ্রামের মশিয়ার জানান , তিনি আজও ভুলতে পারেন না সেই ‘হাওয়াই মিঠাই’র স্বাদ। এখনো গ্রামে গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে তিনি তা কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খান।
চার টাকা দিয়ে ‘হাওয়াই মিঠাই’ কিনে খাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগে ছোট বেলায় যখন বাবা-চাচাদের সঙ্গে গ্রামের বাজারে বা মেলায় যেতাম। তখন প্রথম বায়নাটি ছিলো ‘হাওয়াই মিঠাই’ খাওয়ার। আর বেশির ভাগ সময় হাতের কাছে পেয়েও যেতাম এটি।
পৌর শহরের দয়ের পার গ্রামের গোলাম মোস্তফা জানান, হাওয়াই মিঠাই খেতে অনেক মজা। আমাদের গ্রামে কেউ হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। হাওয়াই মিঠাই কিনে খাইতাম একটা- দুইটায় মন ভরে না। আমি চার-পাঁচটা খাইতাম লাজুক মুখে যোগ করে সে।তিনি আরো বলেন, খাবারটি খুবই লোভনীয়। এটি দেখলেই শৈশবের কথা মনে পড়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চারা এটি বেশি পছন্দ করে।
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলা হতে বিরামপুরে আসা ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রেতা শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করছেন। আগে সারা বছরই এ ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। কিন্তু, এখন বছরে তিন থেকে চার মাস তিনি এ ব্যবসা করতে পারেন। মাঝে-মধ্যে গ্রামে মেলা বসলে এই ব্যবসা করেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, “হাওয়াই মিঠাই একটি বিশুদ্ধ সামগ্রী, ভেজাল মুক্ত হওয়ায় এটি খেতে শিশুদের কোনো ঝুঁকি নেই। শিশুরা আনন্দ সহকারে এটি খেতে পছন্দ করে। আর আমরাও আনন্দের সঙ্গে তা বিক্রি করি। শুধু শিশুরাই নয় বড়রাও আমার কাছ থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে খায়। আমি গ্রামে গ্রামে সারাদিন ঘুরে দুই থেকে দেড়শোর মত হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে পারি। এতে আমার আয় হয় ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা।