প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরীর অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণেই থাকছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ই’স’লা’ম বাংলাদেশ। সংগঠনটির ভা’রপ্রাপ্ত আমির আল্লামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীর নেতৃত্বেই ঘুরে দাঁড়াতে চাইছেন বাবুনগরীর অনুসারীরা।
রোববার জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃ’ত্যুর পর প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে হেফাজতে ই’স’লা’মের খাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সভা। এ বৈঠকে ভা’রপ্রাপ্ত আমির আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীকে ভা’রমুক্ত করার কথা রয়েছে।সূত্র জানিয়েছে, জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃ’ত্যুর দিন রাতে সংগঠনটির বর্তমান মহাসচিব নুরুল ই’স’লা’ম জিহাদি মজলিসে শূরার সদস্যদের সঙ্গে ফোনালাপের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী নাম আমির (ভা’রপ্রাপ্ত) হিসাবে ঘোষণা করেন।
গতকাল (শনিবার) মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ঢাকায় পৌঁছানোর পর বর্তমান মহাসচিব নুরুল ই’স’লা’ম জিহাদীর সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে ভা’রপ্রাপ্ত থেকে ভা’রমুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর সিদ্ধান্ত হয়, আজকে প্রথমে খাস কমিটিতে তার ভা’রমুক্ত হওয়ার বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হবে। এরপর জোহরের পর কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন সা’পেক্ষে ভা’রমুক্ত হবেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। মহাসচিবের একান্ত ইচ্ছায় মুহিব্বুল্লাহ দ্রুত ভা’রমুক্ত হচ্ছেন বলে হেফাজত নেতারা জানান।
রোববার সকালে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নুরুল ই’স’লা’ম জিহাদির পরিচালনাধীন মাখাজানুল উলুম মাদ্রাসায় সংগঠনটির সর্বোচ্চ কমিটির এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। পরে বিকাল ৩টার দিকে কেন্দ্রীয় শুরা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।আল্লামা শফী গত বছরের সেপ্টেম্বর মা’রা যাওয়ার পর হাটহাজারী মাদ্রাসায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে আমির নির্বাচিত হন জুনায়েদ বাবুনগরী, আর মহাসচিব হন নূর হোসাইন কাসেমী।
এরপর আমির ও মহাসচিবের বলয়ের লোকজন একচেটিয়া কমিটিতে জায়গা পান। এতে আল্লামা শফীর ছে’লে আনাস মাদানীসহ হেফাজতের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতৃত্বে থাকা অধিকাংশকে বাদ দেওয়া হয়। এ কারণে হেফাজতের একাংশের নেতাকর্মীরা ওই কমিটিকে ‘ফটিকছড়ি সমিতি’ বলে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীতে শফীপন্থিরা বিকল্প কমিটি করবেন ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তাদের কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
হেফাজতের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মা’ওলানা মইনুদ্দিন রুহি জানান, ভা’রপ্রাপ্ত আমির মুহিবুল্লাহ বাবুনগরীর চট্টগ্রামের বাইরে তেমন প্রভাব নেই। কখনো ছিলও না। তার চেয়ে সংগঠনে আল্লামা নুরুল ই’স’লা’ম জিহাদীর প্রভাব অনেক বেশি। শুধু সাবেক আমিরের আত্মীয় হওয়ার কারণে মহিবুল্লাহ বাবুনগরী ভা’রপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হেফাজতের সাবেক এক নায়েবে আমির জানান, আমিরের দায়িত্ব পাওয়া মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী স’ম্প’র্কে জুনাইদ বাবুনগরীর মামা। তিনি হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির প্রয়াত আল্লামা শাহ আহম’দ শফীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে সিনিয়র নায়েবে আমির ছিলেন।পরে কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি মিললে আল্লামা শফীর ঢাকায় শোকরানা মাহফিলের আয়োজনের বিরোধিতা করে ২০১৯ সালে ই’স’লা’মী ঐক্যজোট, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ও আল হাইআতুল উলয়া-লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশ থেকে পদত্যাগ করেন। যদিও আল্লামা শফীর মৃ’ত্যুর পর গত নভেম্বরের কাউন্সিলে প্রধান উপদেষ্টা হন মুহিবল্লাহ বাবুনগরী।
গত মা’র্চ মাসে ভা’রতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের বিরোধিতায় মাঠে নামে জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন হেফাজত। এ সময় দেশের কয়েকটি স্থানে স’হিং’স ঘটনা ঘটে। এরপরই সরকার কঠোর অবস্থানে যায়। গ্রে’প্তা’র হতে থাকে একের পর এক নেতা। এক পর্যায়ে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন বাবুনগরী। গত ৭ জুন তার নেতৃত্বে হেফাজতের ৩৩ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কমিটি হয়।
জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃ’ত্যুর পর নয় সদস্যের এ কমিটিতে বর্তমানে আছেন আটজন। তারা হলেন- আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, মা’ওলানা নুরুল ই’স’লা’ম জিহাদী, আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মা’ওলানা সাজেদুর রহমান, মা’ওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, মা’ওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মা’ওলানা আব্দুল আউয়াল।উল্লেখ্য, ১৩ দফা দাবি নিয়ে দেশ-বিদেশে আলোচনায় আসে হেফাজতে ই’স’লা’ম। নানা ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন সংগঠনটির নেতা আল্লামা আহম’দ শফী, আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং আল্লামা নূর হোসেন কাসেমী। গত এক বছরে এই তিন নেতার মৃ’ত্যু হয়েছে। ফলে সংগঠনটিতে নেতৃত্বশূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে।