আজ ২৬ আগস্ট ২০২১। ফুলবাড়ী ট্র্যাজেডির ১৫ তম বার্ষিকী।২০০৬ সালের এই দিনে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা খনি প্রকল্প বাতিল,জাতীয় সম্পদ রক্ষা এবং ভিনদেশী কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ী থেকে প্রত্যাহারসহ ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করতে গিয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৩ জন যুবক এবং আহত হন প্রায় তিন শতাধিক মানুষ। সেই আন্দোলনের পর থেকে এই দিনটিকে “ফুলবাড়ী দিবস”
হিসেবে পালন করা হয়।
২০০৬ সালের এই দিনে ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেন ফুলবাড়ীর সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ।এসময় বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশ ও তৎকালীন বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৩ জন। আহত হন প্রায় তিন শতাধিক শিশু, কিশোর,যুবক ও মধ্য বয়সী মানুষ। ঘটনার ১৫ বছর পরেও পূরণ হয়নি সেই ৬ দফা দাবি। নাম বদলে আজও বহাল তবিয়তে আছে এশিয়া এনার্জি।
সেদিনের ঘটনার পর ফুলবাড়ী,পার্বতীপুর, বিরামপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের তীব্রতার মুখে ৩০ আগস্ট সে সময়ের সরকার দাবি মেনে নিয়ে ‘ফুলবাড়ী চুক্তি’করতে বাধ্য হয়।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি নানান কর্মসূচি পালন করে। এবারও জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এবং সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ দেশব্যাপী”ফুলবাড়ী দিবস”পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।তারা এক বিবৃতিতে বলেন, উন্নয়নের নামে প্রাণ-প্রকৃতি-সম্পদ, জনস্বাস্থ্য-জনজীবন ও জীবিকার বিপরীতে এত মুনাফা-অন্ধ তৎপরতায় বিশ্বের বাস্তুসংস্থান, নদী-সমুদ্র-জলবায়ু আক্রান্ত। এই ধারায় বিশ্ব চলতে থাকলেও আগামীতে আরও ভয়াবহ বিপর্যয় আসবে।বাংলাদেশের জন্য বিপদ হবে আরও বেশি। তাই যেসব প্রকল্প প্রাণ,প্রকৃতি, জনস্বাস্থ্য,প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জননিরাপত্তা বিপন্ন করে সেগুলো প্রত্যাখ্যান করে মুনাফার বদলে মানুষকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি উঠেছে বিশ্বজুড়ে।ফুলবাড়ী আন্দোলন এই দাবিতেই গণঅভ্যুত্থান তৈরি করেছিল।আর বুকের রক্তে,সংগ্রামে ১৫ বছর ধরে প্রতিরোধ জাগ্রত রেখেছে।
তারা বলেন,এই ঐতিহাসিক দিবসের প্রাক্কালে আমরা সালাম জানাই শহীদ তরিকুল, সালেকিন,আল আমিন,বীর যোদ্ধা বাবলু রায়,প্রদীপ, শ্রীমণ বাস্কেসহ অগণিতচ সংগ্রামী মানুষকে। মানুষের ঐক্য ও অবিরাম প্রতিরোধ উত্তরবঙ্গসহ সারাদেশকে রক্ষা করেছে। নদী-কৃষিজমি-ভূগর্ভস্থ পানির আধারকে এক অকল্পনীয় বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে। ফুলবাড়ীর প্রতিরোধ চেতনা দিয়ে বাংলাদেশকে নতুন দিশা দিতে হবে।
জাতীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ আরো জানায়,আজ কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে থাকবে সারাদেশের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন,র্যালি,প্রতিবাদ সমাবেশ।ঢাকায় কর্মসূচি হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বেলা ১১টায়। অন্যদিকে সকাল ১০টায় ফুলবাড়ীতে র্যালি ও ফুলবাড়ী শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন।এরপর শহরের নিমতলা মোড়ে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির ফুলবাড়ী উপজেলা শাখার এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজকের ১৫ তম দিবসে ফুলবাড়ীর কর্মসূচিতে যোগ দেবেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।