ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় পাটের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে ভাসছে সোনালী হাসি। পাটের আশঁ ছাড়ানো, ধোয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে নান্দাইলের পাটচাষীরা। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের বাম্পার ফলনের পাশাপাশি পাটের দামও বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা লাভের মুখ দেখছে। বর্তমানে বাজারে পাটের ভালো দামও আছে, প্রতি মণ পাট ৩২০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করা হচ্ছে। তাই সঠিক সময়ে ন্যায্য দাম পাওয়ার লক্ষ্যে এলাকার কৃষক-কৃষাণিরা রাস্তাঘাট, মাঠ, তের আল, ডোবায়, নদীর তীরে ও বাড়ির আঙিনায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাটের আঁশ ছাড়াচ্ছেন তারা। সোনালী আঁশের সোনালী রঙে ভরে গেছে কৃষকের ঘর।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে নান্দাইলের বিভিন্ন গ্রাম ও প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জমিতে ল্যমাত্রার চেয়েও ব্যাপকভাবে সোনালী আঁশের আবাদ হয়েছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলের সমতল ও অসমতল জমিতে এ বছর পাটের আবাদ ল্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৯৫ হেক্টর জমিতে। তন্মধ্যে দেশীয়, তোষা, মেশতা ও অন্যান্য জাতের পাট রয়েছে। স্থানীয় পাট চাষী সাইফুল ইসলাম ও শহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, দেশে সার, বীজ ও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক খরচ কম ও অনুকূল আবহাওয়া থাকায় সোনালী আঁশের ফলন অধিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাটের সোনালী আঁশের সুদিন ফিরে আসবে বলে মনে করছেন পাট চাষীরা।
এছাড়া পাইকাররা বাড়ি বাড়ি গিয়েও পাট কেনায় ব্যস্ত সময় পার করছে। তাই ভালো ফলন ও আশানুরূপ দাম পেয়ে বিগত বছর গুলোতে লোকসানে পড়া কৃষকদের মুখে সন্তুষ্টির হাসি ফুটে উঠেছে। তবে এ কাজে পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরই পাটের আঁশ ছাড়াতে দেখা যায়। তারা পাটের আঁশ ছাড়ালে পাটখড়ি পাবে। তাই দিনে ৫০ থেকে ৬০টি পাটের আঁটির আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এতে যেমন মালিকের লাভ, তেমনি তাদেরও লাভ রয়েছে বলে আশঁ ছাড়ানো কৃষাণিরা জানান। এদিকে পাট চাষিরা জানায়, প্রতি বিঘা জমিতে পাট চাষ, সেচ, রাসায়নিক সার প্রয়োগ, পাট কাটা, শুকানোসহ খরচ হবে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। গত বছর বিঘাপ্রতি ৭/৮ মণ পাট পাওয়া গেছে।
কিন্তু এবার ফলন ভালো হওয়ায় বিঘাপ্রতি ১০/১২ মণ পাট পাওয়া যাবে। পাটের ভালো দাম থাকলে আগামীতেও পাটের চাষ আরো বাড়বো। নান্দাইল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান জানান, আমরা কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ, প্রশিণ ও মাঠ পর্যায়ে দেখাশোনা করায় ফলন ভালো হয়েছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন প্রণোদনা ও ভর্তুকী কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ায় তারা আরও বেশী উদ্বুদ্ধ হয়েছে। বর্তমানে বাজারে পাটের চাহিদা ও মূল্য বৃদ্ধির কারণে পাট চাষ দিন দিন বাড়ছে।